ক্যানটিনে খাবার খাওয়ার সময়

অলংকরণ: শামীম আহমেদ
অলংকরণ: শামীম আহমেদ

বাড়ি থেকে অফিসে প্রতিদিন খাবার নিয়ে আসেন সোনিয়া আহমেদ। প্রতিদিন দুপুরবেলায় অফিসের ক্যানটিনে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খান। বাড়ি থেকে খাবার আনলেও সহকর্মীরা ক্যানটিনের খাবার কিনেই খান। ক্যানটিনে অন্যদের হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দুপুরের আহার বেশ উপভোগ করেন। কখনো কখনো ক্যানটিনে গিয়ে বিব্রত হন তিনি। তিনি জানান, ‘মাঝেমধ্যেই ক্যানটিনে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি আমরা। অনেকেই খাবারের পর গল্প শেষ না করেই টেবিলে বসে থাকেন। আবার অনেকেই টেবিল নোংরা করেন। আমরা কিছু বলি না দেখে হয়তো অন্যদের ক্যানটিনবিষয়ক কাণ্ডজ্ঞানের ঘাটতি আমাদের কষ্ট দেয়।’

কোন জায়গায় কেমন আচরণ করা উচিত, তা আমাদের জানা উচিত। অফিস ক্যানটিনে কেমন আচরণ করা উচিত, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জানতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্যানটিনে সবার আচার-আচরণ কেমন হবে, তা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদের সাধারণ জানাশোনার মধ্যেই পড়ে। তেমনি প্রতিষ্ঠান থেকেও ক্যানটিন ব্যবহারে নিয়মকানুনে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অনেকেই অসচেতনভাবে অন্যদের অস্বস্তির কারণ হতে পারেন। তাই ক্যানটিনের আদবকেতা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মানবসম্পদ বিভাগের জানানো উচিত।

খাওয়ার সময় খেতে হবে: ক্যানটিনে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত থাকে খাওয়ার জন্য। সে সময়ই ক্যানটিনে খাওয়া উচিত। বাড়ি থেকে যাঁরা খাবার আনেন, তাঁদের অনেকেই আগে চলে আসেন ক্যানটিনে খেতে। কেউ কেউ দেরি করে খান। এ ক্ষেত্রে যে সময় খাওয়ার জন্য নির্ধারিত, সে সময়ই আমাদের খেতে হবে। আগে-পরের সময়ে ক্যানটিনে খাবেন না।

লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিন: ক্যানটিনে খাবার সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত লাইনে দাঁড়াতে হয়। সব সময়ই চেষ্টা করুন লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার কিংবা টোকেন সংগ্রহ করতে। লাইন না থাকলেও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করুন। যেখানে লাইন থাকে, সেখানে কখনোই লাইন ভেঙে সামনে এগোবেন না। আবার পরিচিত কেউ এলে পেছনের জনকে বঞ্চিত করে কাউকে অগ্রাধিকার দেবেন না।

টেবিল নোংরা নয়: খেতে বসলে আমরা অনেকেই চারপাশে খাবার ছড়িয়ে ফেলি। খাবার খাওয়ার সময় সব সময়ই সতর্ক থাকুন, কখনোই যেন টেবিল নোংরা না হয়। খাবারে উচ্ছিষ্ট প্লেট কিংবা নির্দিষ্ট স্থানেই রাখুন।

টিস্যু ব্যবহারে সতর্কতা: আমরা টিস্যু ব্যবহারের পরে টেবিলের নিচে কিংবা পাশেই রেখে দিই। কখনোই এমনটি করবেন না। টিস্যু নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থানেই ফেলুন।

হৈ–হুল্লোড় নয়: আমরা খেতে বসলে চারপাশের পরিচিত মানুষের সঙ্গে ক্যানটিনে কুশলাদির খবর নিই। ক্যানটিনে কখনোই হৈ–হুল্লোড় করবেন না। চেষ্টা করুন শান্তভাবে কথা বলতে। আমাদের হৈ–হুল্লোড়ে যেন পাশের টেবিলের কারও সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

ক্যানটিনে মিটিং নয়: আমরা অনেকেই খাওয়ার সময় ক্যানটিনে মিটিং করি। খাওয়ার সময় কখনোই মিটিং করবেন না। আমরা যদি একটি টেবিলে দুপুরে খাওয়ার সময় মিটিং করি, তাহলে অনেকেরই খাবার খেতে সমস্যা হতে পারে। খাওয়ার সময়ের পরে ক্যানটিন ব্যবস্থাপক বা মানবসম্পদ বিভাগের অনুমতি নিয়ে মিটিং করতে পারেন।

ক্যানটিনে খুব বেশি আড্ডা নয়: আমরা এক কাপ চা নিয়ে অনেক সময় ঘণ্টা পার করে দিই অফিস ক্যানটিনে। এমনটা কখনোই করবেন না। প্রতিষ্ঠানের কাজ এগিয়ে নেওয়াই যেখানে আমাদের দায়িত্ব, সেখানে সময় অবহেলা করে সময় নষ্ট করবেন না।

অভিযোগ জানান পরিশীলিতভাবে: ক্যানটিনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আমরা রাগারাগি করে জানানোর চেষ্টা করি। যেকোনো সমস্যা কিংবা অভিযোগ ক্যানটিন ব্যবস্থাপক বা মানবসম্পদ বিভাগের কাছে লিখিত জানাতে পারেন।

অন্যকে গুরুত্ব দিন: খাবার শেষে ক্যানটিনের টেবিলে যেন আরেকজন এসে বসতে পারেন, সেভাবেই টেবিল গুছিয়ে রাখা শিখুন। এলোমেলো চেয়ার কিংবা ময়লা করে অন্যদের বিরক্তি তৈরি করবেন না।

বিল পরিশোধ করুন নিয়মিত: আমরা অনেকেই ক্যানটিনে পরে টাকা দিতে চাই। চেষ্টা করুন ক্যানটিনে দিনের খাবারের বিল দিনেই দিয়ে দিতে। কখনো কখনো মাসের শুরুতে আপনার ক্যানটিন বিল জমা দিয়ে রসিদ নিয়ে নিতে পারেন।

পরিমিত আচরণ করুন: ক্যানটিনে খাবার গ্রহণের সময় যতটুকু আপনার প্রয়োজন, ততটুকুই খাবার গ্রহণ করুন। খাবার যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। পাশের সহকর্মীকে দেখে হাসুন, খোঁজখবর নিন। খাবার গ্রহণ শেষ হলে দ্রুত ক্যানটিন ত্যাগ করুন।