হাতের পরিচ্ছন্নতা সবার আগে

হাত ধুতে হবে সঠিক নিয়মে। ছবি নকশা
হাত ধুতে হবে সঠিক নিয়মে। ছবি নকশা

হাত ধোয়া যে সু-অভ্যাস, তা কে না জানে। তবে জানা জিনিসগুলো সঠিক নিয়মে কজনই–বা মানে। আলসেমি, তাড়াহুড়ো বা হাত ধোয়ার বিষয়টি গুরুত্বহীন মনে করলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন আপনি। এমনকি হাত অপরিষ্কার থাকলে, আপনার তৈরি করা খাবার খাওয়ার ফলে কিংবা আরেকজনকে আপনার হাতে খাইয়ে দেওয়ার কারণে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে বাড়ির ছোট্ট বা বয়স্ক সদস্যটি। বাড়িতে বা স্কুলে শিশুদের শেখানো হয় হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা। রোগ বা জীবাণু সম্পর্কে শিশুর ধারণা তৈরি না হলেও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ছোট থেকেই প্রচেষ্টা শুরু করা প্রয়োজন। তবে কেবল হাত ধুলেই হবে না, বরং হাত ধুতে হবে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক সময়ে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান জানালেন, অপরিষ্কার হাতের কারণে খাদ্যনালিতে সংক্রমণ হয়ে থাকে। টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর সংক্রমণজনিত কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাস দায়ী জন্ডিসের জন্য। এসব এড়াতে গড়ে তুলতে হবে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার সু-অভ্যাস।

যা দিয়ে হাত ধোয়া

সাবান বা তরল সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া যায়। তবে পানি বা সাবানের অভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার (হ্যান্ডরাব) ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাগে সব সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের একটা ছোট্ট বোতল রেখে দেওয়া ভালো। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে শুকানোর আগে সেই হাতে খাবার স্পর্শ করা ঠিক নয়।

কখন হাত ধোবেন

খাওয়ার আগে তো হাত ধোবেনই। খাবার তৈরির আগে, কোটাবাছা করার আগে এবং খাবার পরিবেশনের আগেও হাত ধুয়ে নিন। টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধুতে হবে। শিশুকে স্পর্শ করার আগে এবং শিশুকে পরিষ্কার করানোর পরে হাত ধুতে হবে।

যেভাবে হাত ধোবেন

সাবানের ফেনা বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার আঙুলের ফাঁকে এবং নখের নিচে পৌঁছানো জরুরি, জানালেন অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান। হাতের সামনে ও পেছনে অর্থাৎ উভয় পাশেই সাবানের ফেনা বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের ওপরের পিঠ পরিষ্কার করুন। তালুর দিক থেকে এবং ওপরের পিঠের দিক থেকে আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে পরিষ্কার করুন। এক হাতের পাঁচটি আঙুল একত্র করে অন্য হাতের তালুর সঙ্গে ঘষে পাঁচটি আঙুলের নখ পরিষ্কার করুন। একইভাবে অন্য হাতও পরিষ্কার করুন।

হাতের পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে নখ কেটে ছোট রাখা উচিত। সাধারণভাবে কেটে ছোট করে রাখা নখের নিচেও ধীরে ধীরে ময়লা ও জীবাণু জমে, যা আপাতদৃষ্টিতে পরিষ্কার বলে মনে হতে পারে। তাই প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় নখের নিচের অংশ যত্নের সঙ্গে পরিষ্কার করুন। বড় নখ রাখা হলে তা প্রতিবার ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।

শিশুর জন্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেলা আখতার জানালেন, শিশুর সুস্থতায় হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণের পাশাপাশি কৃমি সংক্রমণের বড় একটি কারণ হাতের অপরিচ্ছন্নতা। কৃমি সংক্রমণের কারণে শিশুর রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টি হয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া হলেও শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে। জীবাণুবাহিত নানা রোগ এবং সেগুলোর পরবর্তী জটিলতা শিশুর সুস্থতার অন্তরায়। তাই খাওয়ার পর ও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান বা তরল সাবান দিয়ে শিশুর হাত ধোয়ার অভ্যাস করা জরুরি।

শিশুদের বিষয়ে আরও যা জানালেন সোহেলা আখতার—

● বাড়ি থেকে দূরে কোথাও গেলে শিশুর খাওয়ার জন্য চামচ সঙ্গে রাখুন। বাড়ি থেকেই চামচ ধুয়ে নিয়ে বাক্সে নিয়ে নিন।

● হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুদের জন্যও উপযোগী। পানি বা সাবানের অভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়।

● শিশু যদি খাওয়ার আগে বা খাওয়ার মাঝে খেলনা, মোবাইল ফোন, ট্যাব, ব্যাগ, টাকা, চাবির রিং, কলম বা অন্য কিছু স্পর্শ করে, তাহলে অবশ্যই খাবার স্পর্শ করার আগে শিশুকে হাত ধুতে বলুন। বড়দের জন্যও এই নিয়ম মেনে চলুন। আপাতদৃষ্টিতে পরিষ্কার মনে হওয়া এসব বস্তু অসংখ্য জীবাণুর উৎস। আধোয়া হাত শিশু যেন মুখে না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন।