কর্মীর উদ্যম বাড়াতে

অফিসে কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্যও ভালো। মডেল: সজীব, রুজার ও শুভ। ছবি: অধুনা
অফিসে কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্যও ভালো। মডেল: সজীব, রুজার ও শুভ। ছবি: অধুনা

প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য উদ্যমী কর্মী প্রয়োজন। কর্মস্পৃহা আছে এমন কর্মী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে এর জন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীর সম্পৃক্ততা বা এনগেজমেন্টের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই সম্পৃক্ততা বলতে বোঝায় একজন কর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতি কী ধরনের অঙ্গীকার বা কমিটমেন্ট লালন করেন এবং এর ফলে তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখেন এবং কত দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন। সম্পৃক্ত কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক বেশি সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যান।

কর্মীর সম্পৃক্ততার ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস, সততা। প্রতিষ্ঠান ও কর্মী দুই পক্ষের অঙ্গীকার এবং প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর মধ্যে অব্যাহত যোগাযোগ। অনেক সময় এসব বিষয়ে কোনো পক্ষের ঘাটতি থাকলে কর্মীদের মধ্যে একধরনের শীতলতা দেখা দেয়। যা স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে, কর্মীর উদ্যমও কমিয়ে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠানে আবেগীয় অঙ্গীকারও (ইমোশনাল কমিটমেন্ট) বড় ভূমিকা পালন করে, যা কিনা কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদের বন্ধনে আবদ্ধ করে।

বিচিত্র কারণে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব (গ্যাপ) তৈরি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নতুন কর্মীর অন্যদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়। কেউ হয়তো নতুন কর্মস্থলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক বেশি সময় নেন। এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানে কর্মীর কাজের ধরনের পরিবর্তন অথবা প্রতিষ্ঠানের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলগতভাবে কাজের ক্ষেত্রে সঠিক সমন্বয় ও সহযোগিতার ঘাটতি হতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে আইসব্রেকিং বা বরফ গলানোর একটা বিষয় থাকে। এ ক্ষেত্রে কর্মী এবং বসের মধ্যে প্রত্যাশার বিনিময় (এক্সপেকটেশন এক্সচেঞ্জ) হলে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রত্যাশার এই বিনিময় পরস্পরের মধ্যে কীভাবে কাজ সম্পাদন করা হবে তার একটা পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ব্রেইন স্ট্রর্মিংয়ের মাধ্যমে দলগতভাবে আইডিয়া খোঁজা, বিভিন্ন দলগত উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে দৃঢ় করা যায়।

কর্মীর সম্পৃক্ততা বাড়লে যেকোনো দূরত্বের বরফ গলানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কর্মীকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা এর মধ্যে অন্যতম। কোনো সমস্যা যদি ছোটও হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল করতে হবে। সময় নিয়ে কর্মীর বক্তব্য শুনতে হবে।

কর্মীর কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন এবং তার ভিত্তিতে মতামত (ফিডব্যাক) জানানো জরুরি। বেতনের সঙ্গে পারফরমেন্সের সম্পর্ক থাকতে হবে যা তাঁকে অব্যাহতভাবে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করবে। এ ছাড়া সঠিক সময়েই কর্মীর কাজের প্রশংসা করা। প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেওয়া পদক্ষেপসমূহ কর্মীকে অবহিত করা। বিভিন্ন প্রকল্প ও দলগত উদ্যোগের সঙ্গে কর্মীকে সংযুক্ত করা।

কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। কর্মীর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার বা এ–জাতীয় সম্পৃক্ততামূলক কর্মীর মধ্যে কাজের স্পৃহা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া কাজের ক্ষেত্রে কর্মী যদি প্রতিনিয়ত উন্নতি প্রদর্শন করে থাকেন, সেসবে অব্যাহত উৎসাহ দিলে কর্ম ও কাজের পরিবেশের মধ্যে যেন আনন্দ ও উত্তেজনা থাকে যা কর্মীকে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে থাকে।

মোদ্দাকথা, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীর বিশ্বাসের সম্পর্ক নিবিড় রাখলে দু পক্ষের সম্পর্কের মধ্যেই কোনো বরফ জমবে না। কর্মী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক: মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং সিইও ও মুখ্য পরামর্শক, গ্রো এন এক্সেল