চীনারা কী খায় না!

চীনা খাবারের সুনাম দুনিয়াজুড়ে। আমাদের দেশেও চীনা খাবারের কদর কম নয়। কিন্তু চীন সফরে গিয়ে তাদের ভালো খাবার বলতে যা দেখা গেল, তা একেবারেই অন্য রকম। দেখুন, তাদের উপাদেয় খাবার কেমন:

চীনের ঐতিহ্যবাহী মাছ রান্না।
চীনের ঐতিহ্যবাহী মাছ রান্না।

খাবারের ঘ্রাণ
কথায় বলে, চীনে গেলে চিড়া-মুড়ি বেঁধে নিয়ে যেও! কারণ, সবাই কিন্তু আসল চায়নিজ খাবার সহজে খেতে পারবেন না। চীনা খাবার খেতে গেলে আপনার নাক আপনার সঙ্গে বিদ্রোহ করতে পারে। চায়নিজ খাবারে মূলত পাঁচ ধরনের গন্ধ থাকে। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধের সঙ্গে তাল রেখে এসব গন্ধের হেরফের হয়। মিষ্টি, টক, নোনা, তেতো আর ঝাল—এ পাঁচ স্বাদের খাবার আপনি পাবেন। চীনের অঞ্চলভেদে ঘ্রাণ আর স্বাদের হেরফের পাবেন। যেমন সিচুয়ানে ঝাল খাবার পাবেন বেশি। উত্তরাঞ্চলে নোনা আর দক্ষিণাঞ্চলের খাবারে টকের প্রাধান্য বেশি।

চীনাদের ঝিনুকের সঙ্গেও নুডলস পছন্দ।
চীনাদের ঝিনুকের সঙ্গেও নুডলস পছন্দ।

নুডলস–ভক্ত
চীনারা নুডলসের ভক্ত। খাবারের সঙ্গে তাদের নুডলস না হলে চলেই না! চীনের উত্তরাঞ্চলের ঠান্ডা আর শুষ্ক আবহাওয়ায় গমের নুডলস, স্টেম করা বান বা কেক পাবেন। দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবার খাবারে সঙ্গে বাটিতে করে ভাত বা চালের নুডলস পাবেন।

চীনারা বিভিন্ন প্রাণীর মাংস খেতে পছন্দ করে।
চীনারা বিভিন্ন প্রাণীর মাংস খেতে পছন্দ করে।

চীনারা সব খায়
চীনারা কী খায়—এ প্রশ্ন করার চেয়ে প্রশ্ন করতে পারেন, চীনারা কী খায় না? তাদের খাবারের তালিকা দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। বলা হয়—যা নড়াচড়া করে, তাই খেয়ে নিতে পারে চীনারা। মুরগি, হাঁস, গরু, ভেড়া থেকে শুরু করে সাপ-ব্যাঙ-ইঁদুর পর্যন্ত।

সামুদ্রিক আগাছাও থাকে চীনাদের খাবার তালিকায়।
সামুদ্রিক আগাছাও থাকে চীনাদের খাবার তালিকায়।

সবজি
চীনারা সবচেয়ে বেশি খায় সবুজ সবজি। তাজা ফল ও ফলের জুস তাদের দারুণ পছন্দের খাবার। সতেজ সবজি হিসেবে আলু, বেগুন, পালং, লেটুস, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকলির পাশাপাশি ডায়েটারি ফাইবার যেসব সবজিতে বেশি থাকে, সেগুলো বেশি খায় তারা। তাদের এমন কিছু সবজি আছে, যা ঘাসপাতা বলে অনেকেই খেতে চান না। এতে তাদের অন্ত্রের নড়াচড়া পশ্চিমাদের চেয়ে বেশি হয়।

মাংসের স্যুপ চায়নিজদের অন্যতম প্রিয় খাবার।
মাংসের স্যুপ চায়নিজদের অন্যতম প্রিয় খাবার।

চীনারা হাড়-মাংস চিবিয়ে খায়
চীনারা হাড়-মাংস চিবিয়ে খায়, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কয়েকজন চীনা নাগরিককে প্রশ্ন করে জানা যায়, তারা অপচয় পছন্দ করে না। তাই অনেক সময় খাবারে টেবিলে আস্ত মাছ বা প্রাণী দেখতে পাবেন। যেসব মাছের কাঁটা বা হাড় নরম থাকে, তারা এসব চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। তাই তারা আলাদাভাবে হাড় ও কাঁটা খায়। তারা মনে করে, মজ্জার স্বাদ ও পুষ্টি বেশি।

চীনারা চপস্টিক দিয়ে খাবার খেতে পছন্দ করে।
চীনারা চপস্টিক দিয়ে খাবার খেতে পছন্দ করে।

চপস্টিক
চীনারা কাঁটাচামচ বা চামচ দিয়ে খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই ব্যবহার করে চপস্টিক। দুটি কাঠির মতো ওই চপস্টিক দিয়ে অবশ্য সবকিছু কাটতে পারবেন না। তাই সব খাবার চপস্টিকে যাতে সহজে তোলা যায়—এমন করে কেটে তারপর রান্না করা হয়। আরেকটি মজার তথ্য জেনে রাখতে পারেন, তা হচ্ছে চীনারা বছরে ৪৫ বিলিয়ন জোড়া চপস্টিক ব্যবহার করে। বাঁশ ও নরম কাঠ দিয়ে এসব চপস্টিক তৈরি করা হয়।

চায়নিজ মুরগি রান্না।
চায়নিজ মুরগি রান্না।

একই খাবার নানা উপায়ে রান্না
চীনারা একই খাবার চাইলে নানা উপায়ে রান্না করতে পারে। যেমন: মাছ সেদ্ধ, ঝোল, ভাজি, রোস্ট, ম্যারিনেট করা, ঝাল, মিষ্টি নানা রকম করে রান্না করে থাকে। এর বাইরে চীনের সাংহাই ও শেনঝেন এলাকায় বিশেষ পাত্রের মধ্যে কাঁচা মাছ–মাংস সেদ্ধ করে খেতে দেখা যায়।

খাবার সাজানোর দিকে গুরুত্ব দেয় চীনারা।
খাবার সাজানোর দিকে গুরুত্ব দেয় চীনারা।

খাবার সাজানো
চীনাদের কাছে খাবার বিষয়টি ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি’ কথাটির মতো। চীনারা খাবার সাজিয়ে দিতে পছন্দ করে। তাদের কাছে মানুষ খাওয়ার আগে প্রথম কামড় দেয় চোখ দিয়ে। তারা এমন দৃষ্টিনন্দনভাবে খাবার সাজাতে পছন্দ করে, যাতে সাধারণ খাবারও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।

খাবার পরিবেশনও চমৎকার।
খাবার পরিবেশনও চমৎকার।

খেতে বসতেও নিয়ম
ঐতিহ্যবাহী চায়নিজ খাবার খেতে গেলে তার পরিবেশনটাও হয় ঐতিহ্যমাফিক। খাবার পরিবেশন করা হয় টেবিলের মাঝখানে আর অতিথিরা ভাতের বাটি নিয়ে তার চারপাশে বসে। রেস্তোরাঁগুলোকে সাধারণত ১০ থেকে ১২ জনের বসার ব্যবস্থা থাকে। অতিথিরা দরজা থেকে একটু দূরে বসে যাতে মাছ-মাংস তার দিকে এগিয়ে আসছে এমনটা বোধ হয়।

কোল্ড ফিশ স্কিন
কোল্ড ফিশ স্কিন

খাওয়া হয় চামড়া
চীনারা মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর চামড়াও খায়। সেখানকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় চোখে পড়তে পারে কোল্ড ফিশ স্কিন।