বদলে গেছে সকালের নাশতা

ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। ছবি: আবদুস সালাম
ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। ছবি: আবদুস সালাম

সকালের নাশতায় রুটি-ভাজি মুখে রোচে না শিবলীর। রাজধানীর গুলশান এলাকায় একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন তিনি। ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে পড়তে হয়। তাই বেশির ভাগ সময় নাশতাটা হয় বাইরে। জানালেন, গুলশানের ভালো কোনো রেস্তোরাঁয় সাধারণত ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্ট’ করেন তিনি। মাখন দিয়ে ফ্রেঞ্চ টোস্ট, চিকেন সসেজ আর ভাপ ছড়ানো এক কাপ কালো কফি বেশ চনমনে করে তোলে তাঁকে। রাজধানীতে হালে অনেকেরই এভাবে বদলে গেছে সকালের নাশতা।

বলা হয়, ফ্যাশনের ধারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত পাল্টায়। আজ যা চলছে, ভালো লাগছে, কাল তা হয়তো আর মনে ধরবে না। রুচির বদল এখন কেবল পোশাক বা সাজে থেমে নেই, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসও পাল্টাচ্ছে। চালু হচ্ছে নতুন ধারা। পুষ্টিবিদেরা বলেন, সারা দিনের কাজে শক্তি পেতে ভালো ও স্বাস্থ্যকর নাশতার বিকল্প নেই। তাই একঘেয়ে নাশতায় অনেকেই বৈচিত্র্য খোঁজেন।

বিশ্বের অনেক দেশেই ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্ট’ বেশ জনপ্রিয়। আধুনিক ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্টে’ থাকে সিরিয়াল, বেকন, ডিম, ব্রেড টোস্ট, জেলি। সঙ্গে আরও থাকে চা অথবা কফি। বাংলাদেশে এই ধরনের সকালের খাবারের সঙ্গে মানুষ পরিচিত। তবে বাড়িতে খুব বেশি এগুলো খাওয়ার প্রচলন নেই। আসলে ব্যস্ত সময়ে খুব আয়োজন করে বাড়িতে বসে নাশতা তৈরি করে খাওয়ার সময় কজনই–বা পান? তাই এখন অনেকেই খাবারের স্বাদে ভিন্নতা আনতে ছোটেন রেস্তোরাঁয়।

ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। ছবি: আবদুস সালাম
ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। ছবি: আবদুস সালাম

ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। মজার মজার ও আকর্ষণীয় সব খাবার। কেউ কেউ অফার করছেন ‘ব্রেকফাস্ট প্লাট্যার’। একটি প্যাকেজে হয়তো থাকছে ওমলেট, ওয়াফেলস, গ্রিলড মাশরুম, কফি। আরেকটি প্যাকেজ থাকছে প্যানকেক উইথ হানি, স্ক্র্যাম্বলড এগ, বেকড বিন আর রং চা। এমন মজার মজার ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্টের’ প্যাকেজ। আবার কোনো কোনো জায়গায় আছে ‘বাফেট’ ব্যবস্থা। প্যাকেজের দাম ঠিক করা রয়েছে, সামনে রয়েছে প্রচুর খাবার, পছন্দ করে নাও।

গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিতে ঘুরে দেখা গেল সকাল থেকে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় নানা বয়সের মানুষের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়ে যেমন রয়েছেন, অফিসগামী নারী-পুরুষের সংখ্যাও কম নয়। ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্টের’ অফারগুলোয় আছে দুর্দান্ত সব আইটেম—ওমলেট, ওয়াফেলস, ফ্রেঞ্চ টোস্ট, চিকেন সসেজ, বিফ স্ট্রিপ্স, গ্রিলড মাশরুম, প্যানকেক উইথ হানি, স্ক্র্যাম্বলড এগ, বেকড বিন, বেকড টমেটো, ম্যাশড পটেটো, সসেজ রোল। পানীয়তে আছে ফ্রেশ জুস, বিভিন্ন ধরনের কফি, চা ও কোমল পানীয়।

কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিলির সঙ্গে। প্রায়ই গুলশানের গ্লোরিয়া জিনসে সকালের নাশতাটা করেন তিনি। বললেন, ‘এখানে ব্রেকফাস্টের প্যাকেজগুলোর দামটা একটু বেশি। তবে বিভিন্ন রকমের সকালের নাশতা। সবই খেতে মজার। সব সময় বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে না। তাই মাঝেমধ্যেই আসা পড়ে এখানে।’

লেকশোর, সিক্রেট রেসিপি, চিলেকোঠা, গ্লোরিয়া জিনসের মতো রেস্তোরাঁগুলো খাবারের তালিকা দিয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের অফিশিয়াল পেজে। সেখান থেকে পছন্দের খাবার, দাম—সব জানতে পারেন গ্রাহক। খাবার ভালো না লাগলে, দাম বেশি মনে হলে মতামতও জানাতে পারেন তাঁরা সেখানে। সকালের নাশতার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত।

ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। ছবি: আবদুস সালাম
ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোয় এখন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সকালের নাশতার নানা পদ থাকে। ছবি: আবদুস সালাম

অবশ্য এই ধরনের ‘ইংলিশ ব্রেকফাস্ট’ শরীরের জন্য কতটুকু ভালো, তা নিয়ে অনেকের মাঝেই প্রশ্ন দেখা দেয়। কথা হয় গৃহিণী নাহিন সুলতানার সঙ্গে। সকালে হাসপাতালের ডিউটি থাকায় খুব ভোরেই বের হন তাঁর ডাক্তার ছেলে। প্রায়ই রেস্তোরাঁয় নাশতা করেন তিনি। কিন্তু এই খাবারের মান নিয়ে খুব চিন্তা করেন নাহিন সুলতানা। বললেন, ‘বাইরে তো খায় মাঝে মাঝে। স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে চিন্তা হয়।’

তবে পুষ্টিবিদেরা বলেন, কোনো দেশের খাবারই দেহের জন্য অস্বাস্থ্যকর বা ক্ষতিকর না। তা ইংলিশ, ইতালিয়ান, অ্যারাবিয়ান বা জাপানিজ খাবারই হোক।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘ছোট বাচ্চা, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে, তরুণ, এমনকি বয়স্করাও এই ধরনের ভিন্নধর্মী খাবার সকালের নাশতায় খেতে পারেন। আসলে প্রতিটি খাবারের পুষ্টিগুণ নির্ভর করে রান্নার উপাদানের ওপর। রান্নার উপাদান ভালো হলে এসব খাবার খেতে বাধা দেখি না। মানুষের বয়স, ওজন, পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে তাঁর কতটুকু খাবার প্রয়োজন।’

শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, খাবার এমন পরিমাণে খেতে হবে যেন দেহের চাহিদার চেয়ে বেশি না খাওয়া হয়। শরীরের গঠন, ওজন, বয়সের ভারসাম্য রক্ষা করে মেয়োনিজ, মাখন, তেল, পনির, মিষ্টি, জেলি খেতে হবে। এসব খাবার সঠিক পরিমাপ করে না খেলে দেহের ওজন বেড়ে যায়। তখন বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের প্যাকেজে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ—এসব উপাদানের সঠিক সমাহার থাকা উচিত। এতে শরীর ও মন উভয়ই সতেজ থাকবে।

সারা রাত ঘুমের পর শরীরের পুষ্টির চাহিদা তৈরি হয়। এ সময় স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার শরীরকে কর্মক্ষম করে তোলে বলে জানান শামসুন্নাহার নাহিদ।