ফিরানির ভোজ

>বিয়ের পর কনে চলে যান শ্বশুরবাড়ি। আবার দুই-তিন দিন পর কনে বরসহ চলে আসেন বাবার বাড়িতে। ফিরানির এই পর্বে বরপক্ষের জন্য জম্পেশ ভোজের আয়োজন করে কনেপক্ষ। ফিরানিতে থাকতে পারে নানা পদের খাবার। রেসিপি দিয়েছেন আলপনা হাবিব

চিংড়ির কোপ্তা পোলাও

উপকরণ

চিংড়ি মাছের পেস্ট আধা কাপ, অ্যারারুট গোলা ২ টেবিল চামচ, ১টি ডিমের সাদা অংশ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, আদা বাটা ১ চা-চামচ, গরম মসলার গুঁড়া ২ চা-চামচ, জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ৪ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, শুকনো মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ, নারকেল দুধ আধা কাপ, মসলা বাটা আধা কাপ, মসলাসহ ফুটানো পানি ৪ কাপ, কাঁচা মরিচ ৭–৮টি, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, চাল দুই কাপ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি

প্রথমে একটি বাটিতে চিংড়ি মাছের পেস্ট, অ্যারারুট গোলা এবং ডিমের সাদা অংশ, কাঁচা মরিচ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, লবণ, গরম মসলার গুঁড়া, জিরার গুঁড়া ও পেঁয়াজ বাটা ব্লেন্ড করে নিতে হবে।এবার একটি কড়াইয়ে ঘি, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, শুকনো মরিচ গুঁড়া, গরম মসলার গুঁড়া, ভাজা জিরার গুঁড়া, লবণ, চিনি এবং নারকেলের দুধ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এরপর ব্লেন্ড করা উপকরণ দিয়ে বানানো কোপ্তা নারকেল দুধ দিয়ে ভালোভাবে জাল দিন। কোপ্তাগুলো ঝোল থেকে ছেঁকে উঠিয়ে নিন। এরপর একটি প্যানে ঘি, সয়াবিন তেল, কাঁচা মরিচ, কোপ্তার ঝোল মসলাসহ ফুটানো পানি, গুঁড়া দুধ, চিনি, লবণ এবং চাল দিয়ে কিছু সময় জাল দিন। এবার এতে কোপ্তাগুলোকে ছড়িয়ে দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ২০ মিনিট জাল দিন। ২০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে চিংড়ির কোপ্তা পোলাও পরিবেশন করুন।

 মুরগির আচারি রেজালা

উপকরণ: দেশি মুরগি ২টা, সরিষার তেল এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ অংশ, দারুচিনি ৩ টুকরা, এলাচি ৪টি, তেজপাতা ২টা, পোস্তদানা এক টেবিল চামচ, রসুনবাটা আধা টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া আধা টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, আমের টক আচার ৩ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ১৫-২০টি, পেস্তা বাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, টক দই আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, জায়ফল গুঁড়া সিকি চা-চামচ, জয়ত্রী গুঁড়া সিকি চা-চামচ।

 প্রণালি

মুরগি ৭ টুকরা করুন। প্রতিটি রান-থানের মাংস ২ টুকরা করে বুকের মাংস ৩ টুকরা করুন। দই ও বেরেস্তা ব্লেন্ড করুন। কড়া আঁচে তেল গরম করে এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা দিন। ভাজা হলে দই-বেরেস্তা, পোস্তদানা বাটা, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, জায়ফল, জয়ত্রী গুঁড়া আধা কাপ পানি দিয়ে কষান। মুরগি দিয়ে ঢেকে ১০ মিনিট মৃদু আঁচে কষান। কষানো হলো ১ কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে মুরগি সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। বাদাম বাটা, আচার, কেওড়া, দুধে গুলে ঢেকে দিন। কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে ১৫ মিনিট ঢিমা আঁচে রান্না করে চুলা থেকে নামান।

 আস্ত মাছের বিরান

উপকরণ: তেলাপিয়া মাছ ৬০০-৭০০ গ্রাম ১টি, পেঁয়াজকুচি এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, রসুনকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, টমেটো ২টি, কাঁচা মরিচ ৪টি, পেঁয়াজপাতা টুকরা করা সিকি কাপ, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, সিরকা ২ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ, রান্নার তেল ১ কাপ ও মেথি ১ চা-চামচ।

 প্রণালি

মাছের আঁশ ফেলে নিন। কিনারের কাটা ছেঁটে নিন। পেটের দিকে গলা থেকে লেজের কাছাকাছি পর্যন্ত চিরে পেটের ময়লা পরিষ্কার করুন। কানকো আস্ত রেখে ফুলকা বের করে নিন। মাছের গায়ে আধা ইঞ্চি গভীর করে ১ ইঞ্চি ফাঁকে ফাঁকে ছুরি দিয়ে একদিকে বাঁকা করে চিরে নিন। তারপর অন্য দিক থেকে চিরে নিন, যাতে জালির মতো হয়। দুই দিক এভাবে চিরে নিন। আধা চামচ লবণ ও সিরকা মাছের গায়ে খানিকটা ডলে মাখুন। এবার মাছ ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। টমেটো লম্বালম্বিভাবে ৮ টুকরা করুন। মাছ আধা চা-চামচ লবণ ও এক চা-চামচের আট ভাগের এক ভাগ অংশ হলুদ দিয়ে মেখে নিন। কড়া আঁচে রান্নার তেল গরম করুন। তেল ভালোভাবে গরম হলে মাছের এক পিঠ ১ মিনিট ভাজুন। তারপর অপর পিঠ ১ মিনিট ভাজুন। আলাদা কড়াইয়ে কড়া আঁচে সরিষার তেল গরম করুন। মেথির ফোড়ন দিন। পেঁয়াজ ও রসুনকুচি দিয়ে ভাজুন। লালচে হলে টমেটো দিয়ে ভাজুন। টমেটো গলে গেলে আধা কাপ পানি দিন। পানি ফুটে উঠলে আঁচ মাঝারি করুন। হলুদ, মরিচ, জিরাগুঁড়া, আদা ও রসুনবাটা, ১ চা-চামচ চিনি দিয়ে ৫-৭ মিনিট কষান। ভাজা মাছ দিন। দুই মিনিট পর উল্টে দিন। ঢেকে ৫ মিনিট রান্না করুন। ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজপাতা ও ১ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন। আঁচ ঢিমা করে দিন। এবার ১০ মিনিট রান্না করুন। ঢাকনা খুলে ধনেপাতাকুচি ছড়িয়ে দিন। ঢেকে আরও ১ মিনিট রান্না করুন। ঝোলসহ মাছ পরিবেশন পাত্রে ঢালুন।

 টক মিষ্টি কিমা বেগুন

উপকরণ: বেগুন ৮ টুকরা (ছোট হলে লম্বালম্বি করে ২ টুকরা করে কাটা, বড় হলে ১ ইঞ্চি চাক করে কাটা), কিমা ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজবাটা দুই টেবিল চামচ, আদাবাটা সাড়ে তিন চা-চামচ, রসুনবাটা আড়াই চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া দেড় চা-চামচ, জিরাগুঁড়া দেড় চা-চামচ, ধনেগুঁড়া দেড় চা-চামচ, তেঁতুল পানিতে গোলানো আধা কাপ, চিনি ২ টেবিল চামচ (স্বাদমতো), পাঁচফোড়ন ১ চা-চামচ, রান্নার তেল ৪ কাপ, সাজানোর জন্য পুদিনাপাতার কুঁড়ি ২৪টা।

 প্রণালি

ছোট বেগুন হলে বোঁটাসহ লম্বালম্বিভাবে কাটুন। বড় বেগুন হলে ১ ইঞ্চি চাক চাক করে কাটুন। বেগুনের ভেতরের দিকে ছুরি দিয়ে গভীর আঁচড় কেটে দিন, যাতে ভেতর পর্যন্ত সেদ্ধ হয়। এবার বেগুন ডোবা তেলে লালচে করে ভেজে তেল ছেঁকে পরিবেশন পাত্রে রাখুন। কিমার মধ্যে আধা চা-চামচ করে আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, ধনে, জিরা ও ১ চা-চামচ লবণ ও ২ চা-চামচ তেল দিয়ে মেখে মাঝারি আঁচে চুলায় বসান। নাড়তে নাড়তে কিমার পানিতে কিমা সেদ্ধ হয়ে যাবে। পানি শুকিয়ে তেল ভেসে উঠলে চুলা থেকে নামান। রান্না করা কিমা বেগুন ভাজার ওপর সাজিয়ে দিন। একটি পাত্রে আধা কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজ বাটা, ১ টেবিল চামচ আদা বাটা, রসুনবাটা ২ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ গুলে নিন। এবার মাঝারি আঁচে ৩ টেবিল চামচ তেল গরম করে পাঁচফোড়ন দিয়ে গোলানো মসলা দিয়ে ভালো করে কষান। কষানো হলে তেঁতুল গোলা পানি, চিনি ও ১ চা-চামচ লবণ দিয়ে রান্না করুন। ঝোল ঘন হলে চামচে করে প্রতিটি বেগুনের ওপর ছড়িয়ে দিন। পরিবেশনের সময় প্রতিটি বেগুনের টুকরার মাঝখানে ৩টা করে পুদিনাপাতার কুঁড়ি একসঙ্গে গুঁজে দিয়ে পরিবেশন করুন।

 নারকেল সাগুর পুডিং

উপকরণ: ক্যারামেলের জন্য চিনি ৪ টেবিল চামচ, পানি দুই টেবিল চামচ।

মূল রান্নার উপকরণ: ডিম ৪টি, কনডেন্সড মিল্ক দেড় কাপ, চিনি পৌনে ১ কাপ, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, নারকেলের দুধ (টিনজাত) দেড় কাপ, নারকেল কোরানো সিকি কাপ, সাগুদানা সিকি কাপ।

 প্রণালি: ক্যারামেলের জন্য ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পুডিং বানানোর পাত্রে চিনি ও পানি মাঝারি আঁচে গরম করুন। চিনি গলে লালচে হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চুলা থেকে নামিয়ে বাটি ঘুরিয়ে ক্যারামেল সমানভাবে পাত্রের তলানি ও পাশে ছড়িয়ে দিন।

মূল রান্নার প্রণালি: সাগুদানা পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিন। কড়া আঁচে গুঁড়া দুধ, কনডেন্সড মিল্ক আর পানি মিশিয়ে ফুটিয়ে ঠান্ডা করুন। দুধের মিশ্রণে চিনি, ডিম ও নারকেলের দুধ দিয়ে ফেটান। কোরানো নারকেল মিশিয়ে দিন। ক্যারামেল করা পাত্রে দুধের মিশ্রণ ঢালুন। সাগুদানা দিন। পুডিংয়ের বাটি আর একটি বড় পাত্রে বসিয়ে দিন। বড় পাত্রে পুডিংয়ের পাত্রের অর্ধেক উচ্চতা পর্যন্ত পানি দিন। বড় পাত্র ঢেকে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিন, যেন ঢাকনা না খোলে। পুডিংয়ের পাত্রসহ বড় পাত্রটি একটি কড়া আঁচের চুলায় বসান। পানি ফুটে উঠলে ঢিমা আঁচে দুই–আড়াই ঘণ্টা সেদ্ধ করুন। এর মধ্যে পানি শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে বারবার পানি দিন। পুডিং নামিয়ে পাখার বাতাসে ঠান্ডা করুন। ফ্রিজে পুডিং ছয় ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা করুন। ঢাকনা সরিয়ে ছুরি দিয়ে সাবধানে পুডিং পাত্রের কিনার থেকে পুডিং আলাদা করুন। এবার উপুড় করে পরিবেশন পাত্র বসান। ভালোভাবে পরিবেশন পাত্রের দিকে পুডিং পাত্র চাপা দিয়ে চট করে উল্টে দিলেই পুডিং পরিবেশন পাত্রে চলে আসবে। এবার পরিবেশন করুন।

 আস্ত ফুলকপির চপ

উপকরণ

ফুলকপির জন্য: ফুলকপি ৬‌ ইঞ্চি ব্যাসের ১টি, লবণ ২ চা-চামচ।

আলুর জন্য উপকরণ: আলুসেদ্ধ চটকানো ২ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, লবণ আধা চা-চামচ বা স্বাদমতো এবং গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ।

কিমার জন্য উপকরণ: হোয়াইট সস পরিমাণমতো, কিমা ১ কাপ, রান্নার তেল ২ টেবিল চামচ, টমেটো কেচাপ ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ ও গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ।

মূল রান্নার উপকরণ: ডিম ২টি বিস্কুটের গুঁড়া ৩ কাপ, রান্নার তেল ৩ কাপ ও লেটুসপাতা ৪টি।

 প্রণালি

পানিতে লবণ দিয়ে আস্ত কপি সেদ্ধ করুন। রং গাঢ় সবুজ এবং একটু শক্ত থাকতেই চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। কপির পানি ঝরিয়ে রেখে দিন। ঘি, লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে আলু মাখান। কড়া আঁচে রান্নার তেল গরম করুন। রসুনবাটা দিয়ে ভাজা ভাজা করুন। কিমা দিন। কিমা ভাজা ভাজা হয়ে খয়েরি রং হলে অবশিষ্ট লবণ, চিনি, কেচাপ ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে নাড়ুন। হোয়াইট সস দিয়ে মেশান। চুলা বন্ধ করুন। আধা সেদ্ধ আস্ত ফুলকপির ফোকর দিয়ে ঠেসে কিমা দিন। ফুলকপি তালের আকার নেবে। এবার আলতো করে মাখানো আলুর একটি পাতলা স্তর দিয়ে সারা ফুলকপি মুড়ে দিন। ডিম ফেটে তাতে আলতো করে ফুলকপির চাপ গড়িয়ে নিন। বিস্কুটের গুঁড়ায় গড়িয়ে নিন। আবার ডিমে গড়িয়ে বিস্কুটের গুঁড়ায় গড়িয়ে নিন। কড়া আঁচে তেল গরম করুন। ফুলকপির চপটি খুব ভঙ্গুর, তাই খুব সাবধানে ঝাঁজরি চামচে তুলে তেলে ডুবিয়ে ভাজুন। ভাজার সময়ও সাবধান থাকবেন। কারণ, একটু ভেঙে গেলেই সব আলু বেরিয়ে যাবে। ওইভাবে চামচে রেখে ভেজে আরেকটা চামচ দিয়ে তেল উঠিয়ে বাকি অংশ ভেজে নিন। লাল করে ভাজা হলে আলগোছে তুলে লেটুস বিছানো পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে রাখুন। ইচ্ছা হলে ৪ বা ৮ টুকরা করে নিতে পারেন।