বোনদেরও রব রব সাজ

বর–কনের বোনদের পোশাকে থাকতে পারে উজ্জ্বল রং। পোশাক: ড্রেসিডেল, সাজ: জারা’স বিউটি লাউঞ্জ, স্থান: লা মেরিডয়ান, ছবি: কবির হোসেন
বর–কনের বোনদের পোশাকে থাকতে পারে উজ্জ্বল রং। পোশাক: ড্রেসিডেল, সাজ: জারা’স বিউটি লাউঞ্জ, স্থান: লা মেরিডয়ান, ছবি: কবির হোসেন

কনে-বরপক্ষের মিষ্টি খুনসুটিতে বর-কনের ভাইবোন-বন্ধুরাই মুখর থাকেন। হাসি-আনন্দে তাঁরাই মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। পাশ্চাত্যের বিয়েতে কনের হাতে যেমন ফুলের তোড়া থাকে, তেমনি থাকে তাঁর সঙ্গীদের হাতেও। প্রাচ্যের বিয়েতে বরের পথ আগলে ‘গেট ধরা’, শরবত-মিষ্টি পরিবেশন, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে অভিবাদন, বিয়ের মঞ্চে আয়নায় মুখ দেখা—সবটাতেই থাকেন কনের সঙ্গীরা। আনন্দের লহরি বইয়ে দিতে পারে এমন একটি দল থাকে বরের সঙ্গেও। বিশ্বের প্রচলিত ধারায় বর-কনের এই সঙ্গীরা একই ধাঁচের পোশাক পরেন। আপন বোন হোক বা কাছের আত্মীয় বা বান্ধবীরা সেজে ওঠেন বিশেষ সাজে।

ফ্যাশনধারায় চলছে যা
বোন আর বান্ধবীদের এই দলটা কনের চেয়ে একটু আলাদা থাকলেই ভালো দেখায় বলে জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ আমিন মনে করেন, কাছের বান্ধবীর বিয়েটা নিজের বোনের বিয়ের চেয়েও বড় বিষয়। রঙিন ও ফ্যাশনেবল পোশাকেই কনের বোন ও বান্ধবীদের মানায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁরা বেছে নিতে পারেন খাটো কামিজ, সারারা বা শেরওয়ানি। টিয়া রঙের সারারার সঙ্গে হয়তো ম্যাজেন্টা ওড়না পরলেন। চাঁপা সাদা বা কালো শেরওয়ানির সঙ্গে বেছে নিতে পারেন মসলিনের দোপাট্টা। দোপাট্টাটি হতে পারে ম্যাজেন্টা বা ফিরোজা রঙের। এই সমন্বয়ের সঙ্গে বেনারসি বা কাতান জাতীয় কাপড়ে তৈরি পালানো বেশ মানানসই। এটি হতে পারে সবুজ রঙের। মানাবে চুড়িদারও। পোশাকের এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের রঙের মিল না থাকলেও ভালো দেখাবে। পোশাকের জন্য বেছে নিতে পারেন ডুপিয়ান সিল্ক। পোশাকে সোনালি রঙের ব্যবহার থাকতে পারে। যাঁরা গয়না পরতে চান, তাঁরা বেছে নিতে পারেন একটি স্টেটমেন্ট গয়না, যা সাজের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। সেটি হতে পারে একটি বিশেষ নকশার নেকলেস কিংবা কানের দুল।

বর বা কনের বোনদের সাজেও থাকে জমকালো ভাব। মডেল: আন্নি, জেনিফার, প্রেরণা ও সানি, পোশাক: অদ্রিয়ানা, গয়না: স্পার্কেল
বর বা কনের বোনদের সাজেও থাকে জমকালো ভাব। মডেল: আন্নি, জেনিফার, প্রেরণা ও সানি, পোশাক: অদ্রিয়ানা, গয়না: স্পার্কেল

ফ্যাশন ডিজাইনার রিমা নাজ বলেন, কনের সঙ্গীদের পোশাকে নকশার আতিশয্য কম থাকলেই ভালো দেখাবে। এতে কনের চেয়ে তাঁদের আলাদা দেখায়। পোশাকে ফুলেল মোটিফ চলছে এখন। সাদা, হালকা গোলাপি বা হালকা সবুজ রঙে কনের সঙ্গীদের সুন্দর দেখায়। স্কার্ট-টপ বা ঘারারা বেছে নিতে পারেন। লেহেঙ্গা পরলে দোপাট্টায় এমব্রয়ডারির ভারী কাজ থাকতে পারে, তবে লেহেঙ্গার টপ সাধারণ নকশার হলেই ভালো। শাড়ি পরতে চাইলে কেপ (হাতাবিহীন কোট) পরতে পারেন। পোশাকে ভারী এমব্রয়ডারি করা থাকলে হালকা মেকআপের সঙ্গে মাত্র একটি গয়নাই সাজে আনবে পূর্ণতা। সেটি হতে পারে কুন্দনের একটি বড় আংটি বা কুন্দনের এক জোড়া বড় কানের দুল। পোশাকে ভারী কাজ না থাকলে একটু ভারী গয়না পরতে পারেন। সেটিও হয়তো একটি ঝাপটা কিংবা শুধুই এক সেট নেকলেস আর কানের দুল।

ফ্যাশন হাউস অদ্রিয়ানার ফ্যাশন ডিজাইনার নাজিয়া হাসান অদিতি বলেন, আজকাল কনের বোন আর বান্ধবীরাও কনের মতোই আগে থেকে ঠিক করেন নিজেদের সাজ-পোশাকের বিষয়গুলো। কনের সঙ্গীরা সাধারণত একই ধরনের পোশাক পরেন। সেটি হতে পারে লেহেঙ্গা, সারারা বা গাউন। কাতান জাতীয় কাপড়ের একটু প্রাধান্য থাকে বিয়েতে। রঙের ক্ষেত্রেও কাছাকাছি শেড বেছে নেন তাঁরা। উজ্জ্বল রং, যেমন গোলাপি বা কমলার সঙ্গে সবুজের সমন্বয় বেছে নেওয়া যায়। একটু জমকালো কাজ বিয়ের অনুষ্ঠানে মানানসই। জারদৌসি, সিকুইন্স, স্টোন বা চুমকির কাজ থাকতে পারে পোশাকে। বরের বোনেরাও এ ধরনের পোশাকই পরেন, তবে তাঁরা কনেপক্ষের চেয়ে একটু আলাদা রং বেছে নিয়ে থাকেন।

 যাঁদের বোনের হলো বিয়ে

ফাইন্যান্স নিয়ে কাজ করেন শায়লা মৌসুমী। এ বছরই ছিল তাঁর বড় বোনের বিয়ে। সাজ-পোশাকের ক্ষেত্রে কনেকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তাঁরা। লালচে মেরুন ছিল কনের পোশাকের রং। কনের আপন দুই বোনের একজনের লেহেঙ্গা ছিল গাঢ় মেরুন, অন্যজনের কালো। কনের বাকি সঙ্গীদের অধিকাংশই পরেছিলেন লেহেঙ্গা। সব সঙ্গীই টিকলি পরেছিলেন, এটিই ছিল কনের সঙ্গী হিসেবে তাঁদের পরিচায়ক। তবে সচেতনভাবেই চুলে ফুল পরাটা এড়িয়ে গেছেন তাঁরা। চুলের ফুলটা শুধু কনের জন্যই রেখেছিলেন তাঁরা। হলুদের আয়োজনে কনে পরেছিলেন ম্যাজেন্টা রঙের পোশাক। কনে পক্ষের বাকিরা সাদা কামিজের সঙ্গে সবুজ বাদে অন্য রং থেকে ইচ্ছেমতো ওড়না-পায়জামা পরেছিলেন, সাদার সঙ্গে রয়েল গ্রিন রংটি ছিল কনের বোনদের জন্য।

ভারী কাজের পোশাক মানিয়ে যাবে বিয়েতে
ভারী কাজের পোশাক মানিয়ে যাবে বিয়েতে

মানিকগঞ্জের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের ফিজিওথেরাপি পরামর্শক শুক্লা সরকারের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে এ বছর, কয়েক মাসের ব্যবধানে। দুই বোনই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী লাল শাড়ি পরেছিলেন কনে হিসেবে। মেজ বোনের বিয়েতে বাকি বোনেরা নীল কাতান পরেছিলেন। ছোট বোনের বিয়েতে বাকিরা পরেছিলেন মেরুন আর গোলাপি রঙের পোশাক, অনেকেই আবার এই রং দুটির সঙ্গে সবুজের সমন্বয় করেছিলেন। ছোট বোনের হলুদের সময় কনের পরনে ছিল লাল পেড়ে হলুদ শাড়ি। বাকিরা সোনালি পাড়ের নীল শাড়ি পরেছিলেন।

 বিয়ের আনুষঙ্গিকে

হলুদের অনুষ্ঠানে লাল শাড়ির সঙ্গে চাঁপা সাদা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। কিংবা লালের সঙ্গে সমন্বয় হতে পারে ম্যাজেন্টা রঙের। টিয়া রঙের মতো উজ্জ্বল রংও বেছে নিতে পারেন। সঙ্গে কাচের চুড়ি, পায়ে মল আর চুলে ফুল থাকলেই সাজটা অনেক প্রাণবন্ত হয়। শাহরুখ আমিনের মতে, বউভাতের সময় কনের সঙ্গীরা পোশাকে ফিউশন আনতে পারেন। একটু ভিন্নভাবে শাড়ি পরতে পারেন তাঁরা। ফতুয়ার মতো ব্লাউজ পরতে পারেন, কিংবা চুড়িদার হাতার ব্লাউজ। ডুপিয়ান সিল্কের জ্যাকেটের সঙ্গেও শাড়ি পরা যেতে পারে। মসলিন শাড়ির সঙ্গে কাতান বা বেনারসি কাপড়ের ব্লাউজ পরলে সুন্দর দেখায়।