বন্ধ্যত্ব থাকতে পারে পুরুষেরও

পুরুষেরও শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত। ছবি: অধুনা
পুরুষেরও শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত। ছবি: অধুনা

এক দেশে ছিল এক রাজা ও এক রানি। তাঁদের কোনো সন্তান নেই। একদিন গহিন বনে রাজাকে এক সন্ন্যাসী দর্শন দিলেন। সন্ন্যাসী রাজার হাতে একটি জবা ফুল গুঁজে দিয়ে বললেন, ‘এই ফুলটা রানিকে খাইয়ে দিয়ো। তোমাদের ঘরে রাজপুত্র জন্মাবে।’ রূপকথাগুলো এমনই ছিল।

সন্তান না হওয়ার দায় ছিল শুধু রানির। এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির পর দেখা গেছে সন্তান না হওয়ার দায় পুরুষেরও হতে পারে। পুরুষের বন্ধ্যত্ব নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, ‘সন্তানের আশায় স্বামী-স্ত্রী কোনো ধরনের জন্মনিরোধক উপায় অবলম্বন না করার পরও স্ত্রী যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না করেন, তখন তাকে বলা হয় বন্ধ্যত্ব বা ইনফার্টিলিটি।’ এই বন্ধ্যত্ব পুরুষ ও নারী দুজনের বেলাতেই থাকতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের প্রধানতম কারণ হলো শুক্রাণুর উৎপাদন সমস্যা, যা হতে পারে গুণগত বা সংখ্যাগত। এ ছাড়া উৎপাদিত মানসম্পন্ন শুক্রাণু নিঃসরণে অক্ষমতা ও ইমিউনোলজিক্যাল সমস্যাও রয়েছে।

পুরুষের বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ বীর্যে উপযুক্ত পরিমাণে গতিশীল শুক্রাণুর অভাব। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ, শুক্রাশয়ের সংক্রমণ, হরমোনজনিত সমস্যা, আঘাত ও জিনগত—নানা কারণে বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে।

অপর্যাপ্ত ঘুম শুক্রাণুর সক্ষমতা নষ্ট করে। তাই মধ্যরাতের আগেই ঘুমাতে যাওয়া উচিত। যাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় তাদের শুক্রাণু দ্রুত চলনশক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে এবং ডিম্বাণুকে সহজে নিষিক্ত করতে পারে। শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে শরীরে একধরনের খারাপ প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই প্রোটিন বীর্যের মান নষ্ট করে দেয়।

যাঁরা শরীরিক পরিশ্রম করেন না তাঁদের মধ্যে যৌন–অক্ষমতার আশঙ্কা বেশি। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের যৌনস্বাস্থ্য ভালো থাকে।

অতিরিক্ত ধূমপান যৌন–অক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। ধূমপান যৌনক্ষমতা কমায়। যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিত।

অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পুরুষের সক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। অসম্পৃক্ত চর্বি শুক্রাণুর মান খারাপ করে দেয়। যৌনস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে পুরুষের সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা জানতে সিমেন অ্যানালাইসিস পরীক্ষা করা যেতে পারে। এ ছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম, হরমোন পরীক্ষা, জেনেটিক টেস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে পুরুষের বন্ধ্যত্ব নির্ণয় করা যায়। এরপর যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। এখন আধুনিক অনেক চিকিৎসাই পুরুষের বন্ধ্যত্ব দূর করতে পারে।