নুনের নোনতা বিষয়

রূপকথার গল্পে রাজকন্যা তাঁর বাবাকে লবণের মতো ভালোবাসতেন! শত বছর ধরে লবণ মানুষের প্রতিদিনের খাবারের অংশ হয়ে আছে। মিসরীয় মমি প্রক্রিয়াজাত থেকে হাল আমলের চামড়া সংরক্ষণ, সবখানেই লবণের উপস্থিতি। পাঠকের জন্য নুনের কিছু নোনতা বিষয় তুলে ধরছি।

 পরিচয় ও রকমফের

লবণ দানাদার পদার্থ। যার মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড। লবণ মানুষের জীবনের অপরিহার্য একটি অনুষঙ্গ। অধিকাংশ স্থলজ উদ্ভিদের জন্য লবণ ক্ষতিকর। প্রাচীন শাস্ত্রমতে, লবণের স্বাদকে মৌলিক বলে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন ধরনের লবণ আমরা ব্যবহার করে থাকি। যেমন, অপরিশোধিত সামুদ্রিক লবণ, পরিশোধিত খাবার লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ, হিমালয়ের পাথুরে লবণ, সৈন্ধব লবণ ইত্যাদি। প্রধানত সমুদ্রের পানি অথবা খনি থেকে লবণ আহরণ করা হয়।

 লবণ উপকারী খাদ্য উপাদান?

লবণ আমাদের জন্য জরুরি খাদ্য উপাদান। লবণের সোডিয়াম মানবদেহের রক্তপ্রবাহে তরলের মাত্রা ঠিক রাখে। শরীরে স্নায়ুর সংকেত পরিবহনে ভূমিকা রাখে। মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণের নেপথ্যের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। পরিমিত মাত্রায় লবণ দেহের হাড় মজবুত করে। হজমে সহায়তা করে। রক্ত পরিষ্কার করে। জিবে স্বাদ বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লবণ আমাদের রক্ত ও শরীরে থাকা তরল ফ্লুইডের জমাটবাঁধা রোধ করে। উপাদানগুলোক তরল বা দ্রবণীয় অবস্থায় ধরে রাখে।

 লবণের অভাবে কী হয়?

পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বললেন, লবণ আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে আমাদের শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব নয়। লবণ শরীরের তরল পদার্থের সমতা রক্ষা করে। এর অভাবে শারীরিক দুর্বলতা হয়। পেশির সংকোচন দেখা দিতে পারে।

ডায়রিয়া ও বমির কারণে আমাদের শরীর থেকে লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে খিঁচুনি কিংবা পেশির টান দেখা দিতে পারে। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিত্যদিন খাবারে লবণের উপস্থিতি থাকে। তিতকুটে স্বাদের এই উপাদানের পরিমিত ব্যবহার রান্নাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে য়ায়।

 লবণ তাৎক্ষণিক রক্তচাপ বাড়ায়?

একসময় মনে করা হতো লবণ তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে। বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়। প্রায় ৬ হাজার রোগীর ওপর চালানো একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, নিয়মিত লবণ গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না। লবণের সোডিয়াম বাড়তি পানি তৈরি করে। ফলে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধমনির সংকোচনও বাড়িয়ে দেয় লবণ। রক্তচাপ বাড়ার কারণে বেড়ে যায় ইস্কেমিক হৃদ্‌রোগ, হৃদ্‌যন্ত্র বিকল ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।

মাত্রাতিরিক্ত লবণ ব্যবহার বিপদের কারণ হতে পারে। তাই দৈনন্দিন খাবারে লবণের পরিমাণ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।