৩০ দিনে ৩ কেজি ওজন কমান

ওজন কমাতে খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। মডেল: পমি, ছবি: অধুনা
ওজন কমাতে খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। মডেল: পমি, ছবি: অধুনা

দুই দিন হলো নতুন বছর শুরু হয়েছে। গত বছর যা করতে পারেননি, তা এ বছর করতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিতে পারেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী জীবনযাপন করলে সারা বছর ভালো থাকা যায়। বছরের প্রথম ৩০ দিনে ৩ কেজি ওজন কমানো পরিকল্পনা হাতে নিন।

ছেলে-মেয়েদের ডায়েটের জন্য পরিকল্পনা আলাদা হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি এবং নারীদের ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি দরকার। শীতের সময় আমাদের দেশে অনেক শাকসবজি পাওয়া যায়। শীতের মৌসুমি সবজি শাক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দরকার। শর্করা, প্রোটিন এবং চর্বি প্রতিদিনই খাই। শীতের সময়ে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে।

প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। ডিমের অ্যালবুমিনের কোনো বিকল্প নেই। মাছের বদলে মুরগি খেতে পারেন বা অন্য প্রায় সব খাদ্য উপকরণের বিকল্প আছে। কিন্তু ডিমের অ্যালবুমিনের কোনো বিকল্প নেই। এ উপকরণটি শরীরের জন্য খুবই দরকারি। অ্যালবুমিন কমে গেলে অনেক সময় শরীরে পানি চলে আসে, রক্তশূন্যতা তৈরি হয়।

মাছ বা মাংস থেকে একটি অংশ, দুধ থেকে একটি উপকরণ খেতে হবে। অনেকে দুধ খেতে চান না। মনে করেন দুধে ফ্যাট আছে। তাই ননফ্যাট দুধও খেতে পারেন। ৩০ দিনে ৩ কেজি ওজন কমাতে চাইলে কার্বোহাইড্রেট ১০ শতাংশ কমাতে হবে। ফ্যাটযুক্ত দুধের উপকরণ না খেতে চাইলে রাতের খাবারে টকদই নিতে পারেন। টকদইতে একই সঙ্গে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। টকদই আমাদের হজমে সাহায্য করে। অনেকে অফিসে কাজ করার ফলে বাইরে ও অনিয়মিত খাবার খান। এর ফলে তাঁদের হজমে সমস্যা হয়। এ ধরনের মানুষ রাতে টকদই খেলে ভালো উপকারিতা পাবেন। এক কাপ টকদই তাঁর সারা দিনের খাওয়া উপকরণগুলো হজম হতে সাহায্য করে।

ব্যায়াম
সকালে ব্যায়াম করা বা হাঁটা সবচেয়ে ভালো। তবে যদি কেউ সকালে সময় করতে না পারেন, তাহলে অফিস বা কাজ থেকে ফেরার পরে সিঁড়ি দিয়ে (পাঁচতলা পরিমাণ) টানা তিনবার ওঠানামা করে তাতেও কিন্তু অনেক উপকার পাওয়া যায়। মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জিম করা উচিত নয়। সিঁড়িতে হাঁটতে পারেন। হাঁটতে হলে কমপক্ষে টানা ৩০ মিনিট একই গতিতে হাঁটতে হবে। তাহলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

২৪ ঘণ্টার পরিকল্পনা
সকাল
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা উচিত। ঘুম থেকে উঠেই নাশতা খাওয়া উচিত নয়। প্রথমেই এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করতে হবে। পানি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর এবং বাইরের তাপমাত্রার ভারসাম্য তৈরি হবে। এর ফলে ব্রেণে একটা সংকেত দেয়, যে দিনটা শুরু হয়েছে, খাবার গ্রহণ করতে হবে। খালি পেটে পানি খাওয়ার ফলে পাকস্থলী খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়। আপনি হঠাৎ করে যখন ভাজি, রুটি খাওয়া শুরু করবেন, তখন খাওয়ার কিছু সময় পর পেট ভার ভার লাগবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা সকালে হালকা গরম পানি খেতে পারেন। গরম পানির মধ্যে লেবু ও মধু দিয়ে খেলে আরও ভালো উপকারিতা পাবেন। লেবু-মধু পানির নিজস্ব কোনো গুণ নেই কিন্তু এটা খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। সকালের নাশতায় রুটি, ভাজি এবং একটা সেদ্ধ ডিম রাখতে পারেন। ডিম পোচ বা ভাজার চেয়ে সেদ্ধ ডিম খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। সকালে নাশতার পরে এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। সকালের নাশতা খাওয়ার পর ১০ থেকে ১১টার দিকে ফল খেতে পারেন। ফলটি হবে অবশ্যই মৌসুমি টক ফল। এ ক্ষেত্রে পেঁপে, পেয়ারা, নাশপাতি, আমড়া কিংবা জাম্বুরা ইত্যাদি ফল খেতে পারেন।

দুপুরের খাবার
দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে হবে। নারী–পুরুষ ভেদে দুই থেকে তিন কাপ ভাত, এক কাপ সবজি, সালাদ এক কাপ, মাছ বা মাংসের টুকরা এবং ডাল অর্ধেক কাপ খেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় দুপুরের খাবারের পর যদি একটা আমলকী খেতে পারেন। আমলকী খেলে মুখের স্বাদটা পরিবর্তন হয় একই সঙ্গে ভিটামিন সি–এর অভাবও পূরণ হয়। খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে নেয়।

বিকেল বা সন্ধ্যার নাশতা
বিকেল বা সন্ধ্যায় হালকা নাশতা খেতে পারেন। এ সময়ের নাশতায় কোনোভাবেই ডুবোতেলে ভাজা কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। এক মুঠো বাদাম খেতে পারেন। চিনাবাদাম হলেও সমস্যা নেই। তবে বাদাম খুব বেশি খাওয়া যাবে না। বাদামে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে। বেশি ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

রাত
রাতের খাবারটা অবশ্যই নয়টার মধ্যে খেতে হবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা শর্করা একদম বন্ধ করে দিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় স্যুপ খেলে। টকদইও খেতে পারেন। ডালের স্যুপও খেতে পারেন। পাতলা ডালের মধ্যে সামান্য পরিমাণ সবজি ও মাছ বা মুরগির এক টুকরা নিয়ে খেতে পারেন। মানে ভাতটা বাদ দিয়ে বাকি সব উপকরণ রাতে খাওয়া যায়। অবশ্যই ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া উচিত। তবে অনেকেই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ঘুমানোর কিছু সময় আগে টকদই বা ননি তোলা দুধ খেতে পারেন।

লেখক: পুষ্টিবিদ