মোমোর স্বাদ নিতে টেস্টি টিবেটে

টেস্ট টিবেট, ঢাকার বনানী শাখা
টেস্ট টিবেট, ঢাকার বনানী শাখা

বদলাচ্ছে এ শহর, বদলে যাচ্ছে শহুরে অভ্যাসগুলোও। খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায়, পরিবর্তনের রং লেগেছে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও। মোড়ের দোকানের তেলে ভাজা পেঁয়াজি-বেগুনি কিংবা ঘুগনি দেওয়া ঝালমুড়ির বদলে ইদানীং শীতের সন্ধ্যাগুলোতে আমাদের সঙ্গী হয়ে উঠছে ভিনদেশি এক খাবার, মোমো।

মোমোর জন্মস্থল তিব্বতে। সেখানকার পাহাড়ি সাদাসিধে মানুষেরা মাংস, মাছ বা সবজির পুরকে ময়দার আবরণে মুড়িয়ে বাষ্পের ভাপে তৈরি করে মোমো। ক্রমেই সুস্বাদু খাবারটি ছড়িয়ে পড়ে ভুটান, নেপাল, দার্জিলিং, সিকিম, গ্যাংটকসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় মোমো পাওয়া গেলেও সম্প্রতি এ শহরে মোমোর জনপ্রিয়তা যেন একাই বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ‘টেস্টি টিবেট’। ঘর থেকে বেরিয়ে ধানমন্ডিতে রোজই দেখি কমলা-সাদায় বড় করে লেখা ব্যানার ‘টেস্টি টিবেট’। আর এরপর ঢাকার যেদিকেই ছুটি না কেন, হোক তা বনানীর অফিসপাড়া কিংবা বসুন্ধরার আবাসিক এলাকা, সর্বত্রই টেস্টি টিবেট আর তার তিব্বতি মাস্কটের দেখা মেলে।

কৌতূহলের বশেই তাই একদিন সন্ধ্যায় ঢুকে পড়লাম ধানমন্ডি ২৭–এর সুপার শপ ‘স্বপ্ন’–সংলগ্ন টেস্টি টিবেটের ফুডকোর্টটিতে। চার টেবিলের ফুডকোর্টটি আয়তনে বেশ ছোট এবং পার্শ্ববর্তী গ্লোরিয়া জিন্সও এটি ব্যবহার করে। যেহেতু একদল কাস্টমার উঠে যেতেই টেবিল চলে যাচ্ছে অন্য কারও দখলে, তাই এ ধরনের ফুডকোর্টে চটজলদি টেবিল পরিষ্কার করে ফেলা খুব জরুরি। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে কিছুটা উদাসীন মনে হলো। সুপার শপের ভেতরে গিয়ে টেস্টি টিবেটের আলাদা কাউন্টারে খাবারের অর্ডার দিতে হয়। কাউন্টারেই চোখে পড়ল মোমো বানানোর ঐতিহ্যবাহী পাত্র ‘মাকটু’র আধুনিক রূপ। স্টিলের এ তিন তলা পাত্রে রয়েছে ছোট ছোট ছিদ্র আর পাত্রের একেবারে নিচের তলায় ফুটছে গরম পানি। সেই গরম পানির ভাপেই তৈরি হচ্ছে নানা রকম মোমো। রসনাবিলাসের বৈচিত্রময়তার কথা পুরোপুরি মাথায় রেখেই মেনু সাজিয়েছে টেস্টি টিবেট। তাই মেনু দেখে খানিকক্ষণ সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচলে ভুগতে হয় বটে!

টেস্টি টিবেটের মজাদার মোমো। ছবি: খালেদ সরকার
টেস্টি টিবেটের মজাদার মোমো। ছবি: খালেদ সরকার

চিকেন মোমোরই রয়েছে পাঁচটি রকমভেদ, আর সেই সঙ্গে গরুর মাংস, চিজ, সবজি, চিংড়ি এবং চকলেট মোমো তো রয়েছেই। বিজয়ের মাসে তাদের মেনুতে নতুন সংযোজন স্পিনাক বা পালংশাকের নির্যাস দিয়ে তৈরি গ্রিন চিকেন বেসিক মোমো এবং বিটরুটের রস থেকে তৈরি রেড চিকেন চিলি মোমো। এ ছাড়া সেদ্ধ মোমোর পাশাপাশি ফ্রায়েড মোমোর উল্লেখও পাওয়া গেল মেনুতে। যেকোনো মোমোই ৩ পিস, ৬ পিস কিংবা ৮ পিস অর্ডার দেওয়া যায়। পিস এবং ভেতরের পুরের ভিন্নতার সঙ্গে তারতম্য ঘটে দামের। বেছে নিলাম ৬ পিস চিকেন চিলি মোমো এবং ৩ পিস চকলেট মোমো। দাম পড়ল যথাক্রমে ১৬৭ টাকা এবং ১০৩ টাকা। সঙ্গে যোগ হলো ১৫% ভ্যাট। অর্ডার দেওয়ার সময়ই বিল মেটাতে হয় অর্থাৎ পে ফার্স্ট! তবে কার্ড কিংবা ক্যাশ দুই পদ্ধতিতেই বিল দিতে পারবেন আপনি। অর্ডার দিতে দিতে ঝটপট কিছু প্রশ্নও করে নিলাম কাউন্টারে দাঁড়ানো সেলসম্যানকে। আর সেখান থেকেই জানতে পারলাম টেস্টি টিবেট মূলত বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের একটি যৌথ প্রয়াস এবং ঢাকায় বর্তমানে এর ১৮টি শাখা রয়েছে।

মিনিট দশেক পর ধোঁয়া ওঠা গরম-গরম মোমো হাজির হলো টেবিলে। চিকেন মোমোর সঙ্গে রয়েছে দুই রকম সস। বাইরের আবরণের ঠিকঠাক পুরুত্ব আর ভেতরের পুরে টাটকা স্বাদ দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনস্টেশনে খাওয়া মোমোর কথা মনে করিয়ে দিল ঠিকই, কিন্তু চকলেট মোমো বেশ হতাশই করল। ‘মুখে দিতেই গলে যাবে’—মোমোর এ প্রচলিত বৈশিষ্ট্য ঠিকঠাক মানা হয়নি ভিন্ন স্বাদের এ মোমোতে। এ ছাড়া মিষ্টির পরিমাণও যেন খানিকটা বেশি মনে হলো। ফুডকোর্টটি ছোট বলেই আয়েশ করে খাওয়ার সুযোগ টেস্টি টিবেটের ধানমন্ডির এ শাখাতে একটু কম। তবে বনানী, উত্তরাসহ আরও বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তাদের পূর্ণাঙ্গ রেস্তোরাঁ। আবার বনানী ১১ বা বেইলি রোডের মতো কোনো কোনো শাখায় রয়েছে শুধু টেকওয়ের ব্যবস্থা, অর্থাৎ সেখান থেকে শুধু মোমো পার্সেল করে নিয়ে যেতে পারবেন আপনি।

যখন অস্বাস্থ্যকর তেলে ভাজা খাবার আর ফাস্ট ফুডের একচ্ছত্র আধিপত্যে হাঁপিয়ে উঠছিল এ শহরবাসী, তখন টেস্টি টিবেটের মোমোর স্বাদ একই সঙ্গে মুগ্ধ করেছে ভোজনবিলাসী ও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষকে। এতে নেই তেল-মসলার আধিক্য, নেই স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই যেকোনো বয়সী মানুষ নির্দ্বিধায় সুদূর তিব্বতে উদ্ভাবিত সুস্বাদু মোমো মুখে পুরে জটায়ুর মতো বলে ফেলতে পারেন, ‘উইকে একদিন করে মোমো খেতে পারলে মশাই ছয় মাসের মধ্যে চেহারায় একটা ধ্যানী ভাব এসে যাবে।’