এই সময়ে ফ্লু

ফ্লু হলে অবহেলা করা উচিত নয়। মডেল: নুসরাত। ছবি: অধুনা
ফ্লু হলে অবহেলা করা উচিত নয়। মডেল: নুসরাত। ছবি: অধুনা

ফ্লু, যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলতে পারবে এই রোগে কী হয়—মাথাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। তবে ফ্লু বলতে আমরা যা বুঝি, তা কিন্তু সাধারণ সর্দি–জ্বর নয়। তাহলে ফ্লু কী?

ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার জটিলতা সম্পর্কে বলার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, সাধারণ সর্দি–জ্বর আর ফ্লুর তফাত। সাধারণ সর্দি–জ্বর ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলোতে হয়ে থাকে, যার প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে নাক বন্ধ, গলাব্যথা, সঙ্গে মৃদু জ্বর ও খুসখুসে কাশি। এই জ্বর ভাইরাসের কারণে হলেও এর ফলে কোনো গুরুতর জটিলতা হয় না এবং সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যেতে থাকেন।

অন্য দিকে ফ্লু হলে হঠাৎ করেই তীব্র জ্বর হয়, যা ৩-৪ দিন থাকে এবং রোগীর সারা গায়ে এবং মাথায় সুতীব্র ব্যথা থাকতে পারে। ফ্লুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ করে এবং তার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। রোগী শিশু বা বয়স্ক মানুষ হলে বা তার অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন—ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ বা হাঁপানি যদি থেকে থাকে তবে জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

ফ্লু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যার প্রকোপ বাংলাদেশে সাধারণত শীত ও বর্ষাকালে বেশি থাকে। এর ফলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ দেখা দেয়। যথাযথ চিকিৎসা না করালে ফুসফুসেও ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রতিবছর বিশ্বে ৫-১০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ এবং ২০-৩০ শতাংশ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে বা তার ব্যবহার করা জিনিস ছুঁলে ফ্লু ছড়াতে পারে। এ সময়টা প্রতিযোগিতার—স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে আমাদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি প্রায় বাধ্যতামূলক। তাই ফ্লুর মতো অসুস্থতার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাটাই উত্তম পন্থা।

ফ্লুর টিকা বাংলাদেশসহ অধিকাংশ দেশেই সহজলভ্য। এই টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। তবে প্রতিবছরই এর জীবাণুর ধারা পরিবর্তিত হয়। আর তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছরই ফ্লুর সর্বশেষ ভাইরাসগুলো চিহ্নিত করে টিকায় ব্যবহারের অনুমতি দেয়। সুতরাং ফ্লুর বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রতিরোধ গড়তে প্রতিবছরই ফ্লুর মৌসুম শুরুর আগেই এই টিকা নেওয়া প্রয়োজন।
আসুন, সবাই মিলে আমরা ফ্লু প্রতিরোধ করি।

অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ : 
অধ্যক্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ