টেবিলে রানার

টেবিলের আকার বুঝে ব্যবহার করতে হবে রানার। ছবি: নকশা
টেবিলের আকার বুঝে ব্যবহার করতে হবে রানার। ছবি: নকশা

রানার যে কেবল খাবার টেবিলের শোভা বাড়ায় তা–ই নয়, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবেও এর ব্যবহার কম নয়। খাবার টেবিলে রানার বিছালে একমুহূর্তেই যেন বদলে যায় টেবিলের চেহারা। শুধু তা–ই না, এটুকু পরিবর্তনে বদলে যায় পুরো ঘরের পরিবেশ। যার ছাপ পড়ে মনেও। ফলে খাবার খেতে বসেও মন থাকে ফুরফুরে। খাওয়াদাওয়াটাও হয় বেশ আনন্দ নিয়ে।

অ্যাসথেটিকস ইন্টেরিয়রের স্বত্বাধিকারী সাবিহা কুমু বলেন, রানার খাবার টেবিলের জন্য ব্যবহার করা হলেও এটি কম উচ্চতার (লো হাইট) কেবিনেট, সেন্টার টেবিল বা কোনো ট্রাঙ্ক, পুরোনো কাঠের বাক্স বিভিন্ন কিছুর ওপরই বিছানো যেতে পারে। এতে করে ঘরের ভেতর সৌন্দর্যে এক ভিন্নমাত্রার যোগ হবে।

টেবিল বুঝে রানার

যেহেতু খাবার টেবিলেই বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে রানার নির্বাচন করার জন্য টেবিলের আকার ও আকৃতি বড় বিষয়। কারও বাড়িতে খাবার টেবিলটা হয়তো গোল, কারও ডিম্বাকৃতি, আবার কারও টেবিল চারকোনা। যদি চৌকো ও লম্বাটে টেবিল হয়, তবে সাড়ে তিন ফুট থেকে চার ফুট দৈর্ঘের রানার বেছে নিতে হবে। যদি চৌকোনা হয়, সে ক্ষেত্রে টেবিলের দৈর্ঘ্যের থেকে একটু বেশি দৈর্ঘ্যের রানার নিতে হবে, যাতে টেবিলের দুই পাশে ঝুলে থাকে। গোল আকৃতির টেবিল হলে অপেক্ষাকৃত ছোট রানার নিতে হবে, যাতে রানার বিছানোর পরে টেবিলটার দুই প্রান্তের কিছু অংশ ফাঁকা থাকে। তাহলে দেখতে সুন্দর লাগবে।

অন্য আসবাবে রানার

সেন্টার টেবিল বা লো হাইট কেবিনেট বা বাক্সের ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়মে রানার ব্যবহার করা যাবে। বসার ঘরের চৌকো মতো সেন্টার টেবিলের মাঝখানে ছোট একটি রানার ব্যবহার করলেও নতুনত্ব আসবে। ওই রানারের ওপর একটি ছোট কাচের বাটিতে কিছু ফুলের পাপড়ি রেখে দিলে পুরো ঘরের ভেতর একধরনের স্নিগ্ধতা ভর করবে।

নানা রকমের রানার

রানার কাতান, জামদানি, গামছা, সুতি কাপড়ের, পাট, উল, পাহাড়ি মোটা কাপড়ের হতে পারে। আবার মাদুর, শীতলপাটি, বাঁশের চিক ইত্যাদি উপকরণে তৈরি রানারও দেখা যায়। এসব উপকরণের রানার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নকশা হতে পারে জ্যামিতিক, বিমূর্ত বা ফুলেল মোটিফের। এ ছাড়া নকশিকাঁথার কাজের হতে পারে, আবার ছোট ছোট টুকরা কাপড় জোড়া দিয়েও একটি ভিন্ন রকমের রানার তৈরি করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িটি আধুনিক, ভিক্টোরিয়ান, নাকি ঐতিহ্যাবাহী আবহে সাজানো হয়েছে।

যদি আধুনিক কিংবা ভিক্টোরিয়ান ধারায় বাড়ি সাজানো হয়, তবে সিল্ক, জামদানি, কাতান ইত্যাদি কাপড়ের ফুলেল নকশার রানার বেছে নিলে ঘরের অন্যান্য সরঞ্জামের সঙ্গে ঠিকঠাক মানিয়ে যাবে।

আর ঐতিহ্যবাহী ঢঙে ঘর সাজানো হলে, খাবার টেবিলে রানার হিসেবে থাকতে পারে শীতলপাটি, কাতান বা গামছা কাপড়ের পাড় লাগানো মাদুর, কুশি কাটার কাজ করা কাপড়, বাঁশের চিক, কাপড়ের ওপর নকশিকাঁথা ইত্যাদি। সময় ও উপলক্ষ বুঝে রানার নির্বাচন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অন্দরসজ্জাবিদ।

এসব রানার ব্যবহার ও যত্নের দিকেও নজর রাখতে হবে। জামদানি, কাতান ইত্যাদি উপকরণের রানার ব্যবহারে একটু সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তেল–ঝোল না পড়ে। কেননা এগুলো বারবার ধোয়া লাগলে সৌন্দর্যহানি ঘটে। অন্যান্য উপকরণের রানারে তেল–ঝোল লাগলে শুকনো কাপড় বা একটু ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে বা কম ক্ষারযুক্ত সাবান জলে ধুয়ে নিতে হবে। আর প্রতিদিন ব্যবহারের বেলায় দিনে একবার অন্তত ঝেড়ে মুছে নিতে হবে। তাহলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে।

নিজেই বানিয়ে নিন

ঢাকার কর্মজীবী নিবেদিতা অফিস সামলে বাড়িও সাজান। নিজ হাতে একরঙা পুরোনো শাড়ি কেটে বানিয়ে নিয়েছেন টেবিল রানার। রানারের চারপাশে বসিয়েছেন অন্য একটি তাঁতের শাড়ির পাড় এবং রানারের দুই পাশের ঝোলানো অংশে রুদ্রাক্ষের মালা পুঁতির সঙ্গে গেঁথে বিভিন্ন রং করে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পছন্দের রঙের লম্বা কাপড়ের দুই পাশে চারকোনা বা ওভাল বা ত্রিকোণাকৃতির মতো কেটে নিয়ে মাথায় কড়ি, পুঁতি বা পমপমের ঝালর ঝুলিয়ে দিতে পারেন। তবে কাপড়টি মোটা করতে নতুন কাপড়ের ভাঁজে পুরোনো কাপড় দিয়ে সেলাই করে নিলে রানারটি মোটা হবে এবং টেবিলে এঁটে থাকবে।’ লাল, নীল বা হলুদ যেকোনো নতুন একরঙা কাপড়ের মাঝবরাবর বিপরীত রঙের সুতোয় রানারের মাঝবরারব লাইন করে দিতে পারেন কয়েটি কাঁথা ফোড়, সুতোর ফোড়ে তুলতে পারেন ফুল, পাখি, মাছ যা মন চায়, আবার রং–তুলিতেও আঁকতে পারেন নানান নকশা।

খাবারঘরের এমন পরিবর্তন আনতে কিছুদিন পরপরই বদলে দিতে পারেন আপনার ঘর তথা পুরো বাড়ির আবহ। এ কারণে সংগ্রহে রাখতে পারেন পছন্দসই কয়েক সেট রানার। ইট–কাঠ–পাথরের বিরামহীন ব্যস্ততার ফাঁকে খাবারঘরের এই পরিবর্তিত আনন্দটুকু কম কী।