সেন্ট মার্টিনের স্মৃতি

সেন্ট মার্টিনে নীরবতার সুর। ছবি: লেখক
সেন্ট মার্টিনে নীরবতার সুর। ছবি: লেখক

শুক্র-শনি দুই দিনের ছুটি। গন্তব্য শুধুই সেন্ট মার্টিন। ঢাকা থেকে টেকনাফের বাসের টিকিট কাটা হলো। এর আগেই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনগামী লঞ্চের টিকিট আর দ্বীপে থাকার হোটেল।

ঢাকা থেকে টেকনাফে গিয়ে বাস থামল সকালে। সেখান থেকে লঞ্চঘাট গিয়ে দেখি একেবারে লোকে লোকারণ্য! হাজার হাজার মানুষ লঞ্চে চেপে ছুটছে সেন্ট মার্টিনের দিকে। আমরাও সওয়ার হয়েছিলাম এমন একটি লঞ্চের।

টেকনাফের বড় বড় উঁচু পাহাড় আর নীল সমুদ্রে সাদা গাঙচিলের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে তিন ঘণ্টায় পৌঁছাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপে।

সেন্ট মার্টিনের মস্ত খোলা নীল আকাশ আর স্বচ্ছ নীল পানি দেখতে দেখতে মনটা জুড়িয়ে যায়। নীল পানির ওপরে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় নৌকা দেখলে মনে হয় যেন আঁকা কোনো ছবি!

এখানের বাহন বলতে ভ্যান আর সাইকেল। ভ্যানে চড়ে হোটেলে যেতে যেতে দেখা গেল অনেক সাইকেলের দোকান। ভাড়ায় পাওয়া যায় সাইকেল।

আমরা উঠেছিলাম সমুদ্রঘেঁষা এক রিসোর্টে। মিষ্টি রোদে সমুদ্রপাড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন সমুদ্রে নেমে পড়েছিলাম, ভুলেই গেছি।

ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত

গাইড বললেন বিকেলে ছেঁড়া দ্বীপে সূর্যাস্ত দেখতে। কয়েকজন মিলে নেওয়া হলো স্পিডবোট। স্পিডবোটে চড়তে কিছুটা সাহস রাখতে হলো। তবে বিকল্প হিসেবে বড় বড় ট্রলারও আছে। যাঁরা সাহস সঞ্চয় করে স্পিডবোটে উঠতে নারাজ, তাঁদের জন্যই সে ব্যবস্থা।

মিনিট বিশেকের মধ্যেই ছেঁড়া দ্বীপে তো চোখ ছানাবড়া। এখানকার পানি আরও বেশি নীল, স্বচ্ছ। পানির নিচের বড় বড় পাথর স্পষ্ট। ছেঁড়া দ্বীপে জেগে থাকা মৃত প্রবাল আর পাথরের ওপর দাঁড়ালে দেখা যায় দূরে মিয়ানমারের পাহাড়। পাথরের গায়ে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্য আর পানির শব্দ যেন মন ভরিয়ে দেয়।

শেষ বেলায় সূর্যের লাল আভা যখন এসে পড়ে এই দ্বীপে, তখন স্বর্গীয় এক সৌন্দর্য ভর করে এখানে। মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। চারদিকে মানুষের কোলাহল নেই। পাথরে বসে শান্ত এই দ্বীপের চারদিকে তাকালে রোমাঞ্চিত হতে হয়। সূর্য যেন দ্রুতই মিলিয়ে যাচ্ছিল। কিছুটা আলো থাকতে থাকতে আমরা চলে গেলাম সেন্ট মার্টিন বাজারে।

খাবারের দোকানগুলোতে কোরাল, স্যামন, রুপচাঁদা, লবস্টার, কাঁকড়াসহ হরেক রকমের মাছের পসরা। বললেই ভেজে দিচ্ছে। এখানে দাম কিছুটা বেশি শুনে এক ভ্যানচালক বললেন, কম দামে খেতে চাইলে ওঠেন। তিনি নিয়ে গেলেন সেন্ট মার্টিন মূল সমুদ্রসৈকতের ধারে। অনেকটা অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকমের মাছ। মাছ পছন্দ করে বসে গেলাম স্বাদ নিতে।

মাছ ফেরি করছেন একজন জেলে। ছবি: লেখক
মাছ ফেরি করছেন একজন জেলে। ছবি: লেখক

এক কেজি ওজনের লাল কোরাল আর বড় আকারের কাঁকড়াভাজা পেটে পুরে বসেছিলাম সমুদ্রসৈকতে। আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত ১০টা বাজল বুঝতেই পারিনি। সকালে উঠে দ্বীপের আনাচকানাচ ঘুরে দেখলাম। সৈকতের এক পাশে মানুষের বেশ জটলা। কাছে যেতেই দেখলাম পাঁচটি দশাসই কোরাল মাছ ট্রলার থেকে নামানো হচ্ছে। মাছের ওজন টানতে গিয়ে বাহকের ঘাড় যেন বেঁকে গেছে!

সৈকতের তীর ধরে নারকেলবাগানের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বেশ কিছু জমিতে আবাদ হয়েছে ধান। সেই ধান কাটা হচ্ছে। বালুর ওপরে বেগুনি রঙের কলমি ফুল সৌন্দর্য যেন ঢেলে দিচ্ছে! সব মিলিয়ে সেন্ট মার্টিনে থাকা আমাদের সার্থক!

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে টেকনাফের বিভিন্ন বাস আছে। সেখানেই লঞ্চের টিকিট ও সেন্ট মার্টিনে থাকার হোটেলের খোঁজ পাবেন।

সচেতন থাকুন

সৈকতে প্লাস্টিকের কোনো পানির বোতল বা আবর্জনা ফেলবেন না। রাতে সৈকতের পাশে আলো জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান করবেন না। এতে ভালো থাকবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য। বিদ্যুৎ থাকে না এখানে। মোবাইল ফোনের পাওয়ার ব্যাংক নিতে হবে।