সাজ টেবিলের সাজ

ড্রেসিং টেবিল গুছিয়ে রাখলে ঘরটাও দেখাবে সুন্দর। কৃতজ্ঞতা: আজিজা আহমেদ, ছবি: নকশা
ড্রেসিং টেবিল গুছিয়ে রাখলে ঘরটাও দেখাবে সুন্দর। কৃতজ্ঞতা: আজিজা আহমেদ, ছবি: নকশা

শখের টেবিল, সাজের টেবিল। ‘চৌপায়া’ হলে কী হবে! সমতল পায়াগুলোর ওপরেই দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে শোবার ঘরের একপাশে। ড্রেসিং টেবিল বা সাজ টেবিল শুধুই শখের নয়, কাজেরও বটে একখানা। শৌখিন নারী তো বটেই, যাঁরা সাজতে পছন্দ করেন না, তাঁদেরও দরকার হয় সাজ টেবিলের। নানা পেশার নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তেমনটাই।

ডিজাইনারের ড্রেসিং টেবিল
‘বিবিয়ানা’-এর স্বত্বাধিকারী ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ড্রেসিং টেবিলের নকশাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ড্রয়ারের সংখ্যা বেশি হলে বেশি জিনিস গুছিয়ে রাখতে সুবিধা। আবার দুটি বড় ড্রয়ারেও অনেক কিছু রাখা যেতে পারে। আয়না ছোট হলেও ক্ষতি নেই, মুখ দেখা গেলেই হলো। আলাদা বড় আয়না থাকতে পারে ঘরে, যাতে নিজের পুরো সাজটা দেখা যায়। একই জিনিস সব সময় একইভাবে রাখতে অভ্যস্ত মানুষটি প্রয়োজনের সময় সহজেই জিনিস খুঁজে পান। সব গোছানো থাকলে ঘরটাও সুন্দর দেখায়। কেমন করে নিজের সাজের টেবিলটিকে সাজিয়েছেন, তা জানালেন।

১৬টি ড্রয়ারে রেখেছেন ভিন্ন ভিন্ন সামগ্রী। একটি ড্রয়ারে শুধু মুখ সাজানোর প্রসাধন। একটিতে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ক্লিপ, কাঁটা থেকে শুরু করে তেল পর্যন্ত সব। একটিতে আবার চশমা ও সানগ্লাস।

ড্রয়ারগুলোর ভেতরেও আলাদা স্বচ্ছ বাক্সে গুছিয়ে রাখেন সব। যেমন, কোনোটায় লিপস্টিক তো কোনোটায় লিপলাইনার। লোশনের জন্য আছে বড় বাক্স।
কোন বাক্সে কী রাখছেন, তা ‘লেবেল’ করে, অর্থাৎ লিখে রাখেন তিনি। রুপার মালা বা কানের দুল, তামা কিংবা কাঠের বিডসের গয়না, গোল্ড প্রলেপ দেওয়া গয়না—এ রকম নানান ‘স্টিকার’ সেঁটে দেন বাক্সগুলোতে। ‘চোখ’ বা ‘ঠোঁট’ উল্লেখ করেও স্টিকার লাগিয়ে রাখেন আইলাইনার ও লিপলাইনারের মতো সামগ্রীর বাক্সে। স্বচ্ছ বাক্সে গয়না রাখার ফলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেও সুবিধা হয়। নিজের সুবিধামতো সবকিছু ভাগ করে রাখেন বলে তাড়াহুড়ার সময় তৈরি হতে দেরি হয় না।

ড্রয়ারের ভেতরেই চুড়ির আলনা তৈরি করিয়ে নিয়েছেন। মগেও কিছু জিনিস সাজিয়ে রেখেছেন। ড্রয়ার খুললেই সব যেন দেখা যায়, এভাবে সাজিয়েছেন।
গয়না ব্যবহার শেষে সেখানেই গুছিয়ে রাখেন, যেখান থেকে তা নিয়েছিলেন। শেষবেলায় আলসেমি লাগতে পারে ভেবে গয়নাটি যেই বাক্স থেকে বের করেন, সেই বাক্সটি ড্রয়ারের সবচেয়ে ওপরে রাখেন। ফলে তোলার সময় সহজেই আবার বাক্সটি পেয়ে যান।

গয়নার যত্নে রুপা ও সোনার প্রলেপ দেওয়া সামগ্রী টিস্যু পেপারের বদলে স্বচ্ছ কাগজে মুড়ে রাখেন। এর ফলে প্রতিটি মোড়ক না খুলেই বুঝে নিতে পারেন, এটিই সেই গয়না কি না।

পেশাজীবীর টেবিল
ফাহমিদা তুলি পেশায় চিকিৎসক। সাজের টেবিলে আলাদা রঙের প্লাস্টিকের বাক্সে রাখেন আলাদা ধরনের জিনিস। যেমন, একটি নির্দিষ্ট রঙের বাক্সে হয়তো শুধু নেলপালিশ আর মেনিকিউর সেট রাখলেন। এর ফলে দূর থেকে দেখলেই চিনে নিতে পারেন কোন বাক্সে কী আছে। এ ছাড়া লম্বাটে ঝুড়ির খোপ খোপ অংশেও গুছিয়ে রাখেন কিছু জিনিস। একটা খোপে তেল, আরেকটা খোপে মুখের ক্রিম ও ফেসওয়াশ, অন্য খোপে কটনবাড ও টুথপিকের মতো সামগ্রী। আবার মগ বা এ–জাতীয় স্ট্যান্ডও কাজে লাগান। এগুলোর একটাতে কাজল, আইলাইনার, লিপস্টিক ও নিত্যদিনের দরকারি জিনিস গুছিয়ে রেখেছেন হাতের নাগালে। ব্যস্ততার মুহূর্তে সহজেই পাওয়া যায়। রোজকার ব্যবহারের জন্য ঘড়ি আর কিছু চুড়িও রাখেন একটা বাক্সে। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্রাশ রেখেছেন আরেকটি স্ট্যান্ডে। এগুলোর হাতল রাখেন নিচের দিকে, যেন ওপরের অংশটা দেখে খুঁজে পান প্রয়োজনীয় ধরনের ব্রাশটি। সপ্তাহে একদিন সবকিছু নামিয়ে পরিষ্কার করেন তিনি সাজের টেবিলটি। রোজ পরিষ্কার করেন আয়নাটাকে।

ছাত্রীর সাজের টেবিল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী স্বর্ণা দে। কানের অলংকার ভীষণ পছন্দ তাঁর। ড্রেসিং টেবিলে আলাদা বাক্সে গুছিয়ে রাখেন কানের অলংকার। ড্রেসিং টেবিলের ওপর আলাদাভাবে রাখেন লিপস্টিক, পারফিউম ও অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী। যেগুলো বিশেষ কোনো দিন ছাড়া তেমন ব্যবহার হয় না, সেগুলো আলাদাভাবে রাখেন ড্রয়ারে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী নূর-ই জান্নাত যোগ করলেন মেকআপসামগ্রী আলাদাভাবে গুছিয়ে রাখার কথা। ময়েশ্চারাইজার ও পাউডারের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখেন হাতের কাছে। বাকিগুলো থাকে ড্রেসিং টেবিলের ভেতর দিকে। জুয়েলারি সামগ্রী, এমনকি ক্লিপও রাখেন আলাদা বাক্সে।