হাত ধুয়ে সুস্থ থাকুন

রোগ থেকে দূরে থাকতে সঠিক নিয়মে হাত ধুতে হবে। ছবি: অধুনা
রোগ থেকে দূরে থাকতে সঠিক নিয়মে হাত ধুতে হবে। ছবি: অধুনা

হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস সবারই থাকা দরকার। হাত ধোয়াটা সুস্থতার জন্যই জরুরি। খাওয়াদাওয়ার শুরুতে যেমন হাত ধোয়া দরকার, তেমনি খাবার বানাতে বা পরিবেশন করতেও হাত ধোয়া জরুরি। আবার খাবার শেষে হাত ধুয়ে মোছার তোয়ালেটাও পরিষ্কার থাকা উচিত।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম বলেন, ‘শিশুদের হাত ধোয়া সবচেয়ে জরুরি। কারণ, শিশুদের হাতে ময়লা বেশি থাকে। শিশুরা হাতে না ধুয়ে খেলে ডায়রিয়া বা অন্যান্য রোগ হতে পারে। পানিবাহিত রোগও হতে পারে। আবার যে রোগগুলো খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়, হাত না ধোয়ার কারণে সেগুলোও হতে পারে। খাবার ভালোভাবে রান্না করলেও হাতে ময়লা নিয়ে খাবার খেলে রোগ হতে পারে। শিশু যতবারই খাবার খাবে, ততবারই তার হাত ধুয়ে দিতে হবে।’

এখন সাবান সহজলভ্য। তাই মাটি বা ছাই নয়, অবশ্যই সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। হাত ধোয়ার পানি ময়লা হলে চলবে না। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে বাচ্চাকে হাত ধুয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তাহমিনা বেগম। কারণ, ছোট শিশুরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই মুখে হাত দেয়। মুখে হাত দেওয়ার ফলে ময়লা হাত থেকে খাদ্যনালিতে চলে যেতে পারে। এ জন্য খাওয়া ছাড়াও মাঝেমধ্যে শিশুর হাত ধুয়ে দেওয়া উচিত।

রোগ প্রতিরোধে হাত ধোয়ার ভূমিকা এখন শুধু হাসপাতালে সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্কুল, কলেজ, রেস্তোরাঁ—সবখানেই স্বীকৃত। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় নাকে মুখে হাত দেওয়া বা হাত ভালোভাবে না ধুয়ে খাদ্য খেলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। ফলে সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু থেকে শুরু করে ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, টাইফয়েড ইত্যাদিসহ বিভিন্ন পানি ও খাদ্যবাহিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।

অনেকেই আবার হাঁচি, কাশি ইত্যাদি অপরিষ্কার জামা বা রুমালে মোছেন। এসবের মাধ্যমে এমনকি করমর্দনের মাধ্যমেও রোগ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার আরও বেশি।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ ডায়রিয়া, যা মূলত পানিবাহিত। এ ছাড়া সঠিক নিয়মে হাত না ধুয়ে শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তন করালে রোগাক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে অন্য শিশুতে রোগ ছড়াতে পারে। অপরিষ্কার হাতে খাবার ধরার পর সেই হাত দিয়ে শিশুকে ধরলেও রোগ ছড়াতে পারে। শিশুকে খাওয়ানোর আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস করালে এই মৃত্যুর হারও সহজেই কমানো যায়।

কখন হাত ধোয়া উচিত

• খাবার তৈরি করার আগে, মাঝখানে এবং পরে

• খাওয়ার আগে

• অসুস্থ কারও সেবা করার আগে ও পরে

• দেহের কাটাছেঁড়া বা ক্ষতের চিকিৎসা করার আগে ও পরে

• পায়খানা প্রস্রাবের পরে

• শিশুর ডায়াপার বদলানো বা পায়খানা পরিষ্কারের পর

• নাক ঝাড়া, কফ ফেলা বা হাঁচি দেবার পরে

• কোনো পশুপাখি বা পশুপাখির খাবার বা পশুর বিষ্ঠা ধরার পরে

• পোষা জীবজন্তুর খাবার ধরার পরে

• আবর্জনা ধরার পরে

কীভাবে হাত ধোয়া উচিত

• পরিষ্কার পানিতে হাত ভেজান, হাতে সাবান দিন

• হাতে হাত ঘষে ফেনা তৈরি করুন, আঙুলের ফাকে, নখের মধ্যে পরিষ্কার করুন

• অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ডলে পরিষ্কার করুন।

• পরিষ্কার চলমান পানিতে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

• পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছুন অথবা বাতাসে শুকিয়ে নিন।

হাত ধোয়ার নিয়ম

• যেকোনো সাবান দুই হাতে লাগিয়ে কয়েক সেকেন্ড সময় ধরে আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে, নখে, হাতের সামনে-পেছনে ও কবজিতে ভালোভাবে ঘষা উচিত। পরে আবার পানি ঢেলে দিলেই পরিষ্কার হবে।

• পানি বা সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়। তবে হাত খুব বেশি ময়লা হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের হাত থেকে সব জীবাণু এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সরাতে পারে না।