হার্ট অ্যাটাকের পরে জীবনযাপন

হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করেই হয়। এলোমেলো করে দেয় জীবনের অনেক কিছু। আকস্মিক ছন্দপতন ঘটে জীবনে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার পরও নানা জটিলতা ঘটতে পারে পরবর্তী কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। অকস্মাৎ এ বিপদ কাটিয়ে ওঠার পর আবার অনেকেই কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। তাঁরা চাকরি–বাকরি, সংসার, ব্যায়াম সবই করতে শুরু করেন ধীরে ধীরে। এ পুনর্বাসন বা স্বাভাবিক জীবনে ধাপে ধাপে ফিরে আসার সময় রোগীকে সহায়তা করা জরুরি।

• বড় ধরনের জটিলতা না থাকলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে মোটামুটি এক মাস বিশ্রামে থাকা চাই। তার মানে শুয়ে-বসে থাকা নয়। চার–পাঁচ দিন পর থেকে ১০–১৫ মিনিট করে প্রথমে বাড়িতে বা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি শুরু করতে হবে। ধীরে ধীরে এই হাঁটার সময় ও গতি বাড়ান, পুরোপুরি সুস্থ বোধ করলে বাইরে বা পার্কে হাঁটতে শুরু করুন।

• হার্ট অ্যাটাকের পর এক থেকে দেড় মাস গাড়ি না চালানোই ভালো। তারপর গাড়ি চালানো আবার শুরু করতে পারেন। তবে প্রথমদিকে দূরপাল্লায় বা ভারী যানবাহন চালাবেন না।

• খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। লবণ খাওয়া ছেড়ে দিন। সয়াসস, টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবার, চানাচুর, আচার ইত্যাদিতে প্রচুর লবণ থাকে। এগুলোও বাদ দিন। এড়িয়ে চলুন তেল–চর্বিযুক্ত খাবার, গরু–খাসির মাংস, ভাজাপোড়া। বেশি করে তাজা শাকসবজি খাবার অভ্যাস করুন। দিনে অন্তত পাঁচ রকমের তাজা ফলমূল খেতে চেষ্টা করুন।

• ধূমপানকে এবার চিরতরে বিদায় দিন।

• হার্ট অ্যাটাকের তিন মাসের মধ্যে এক–পঞ্চমাংশ রোগী বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। এ সময় পরিবার ও স্বজনদের সহযোগিতা খুব জরুরি। মনোবল ভাঙতে দেওয়া যাবে না। সঠিক জীবনাচরণ ও চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন, এ ব্যাপারে সাহস দিন। তবে বিষণ্নতা তীব্র মনে হলে মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে দেরি করবেন না। কেননা, মানসিক চাপ জটিলতা বাড়াবে।

• রক্তে শর্করা, রক্তচাপ, চর্বির মাত্রা ইত্যাদি নিয়মিত চেকআপ করুন ও নিয়ন্ত্রণে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। ওষুধগুলো নিয়মিত সেবন করুন।

• বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। চাপমুক্ত, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর জীবনাচরণ আপনাকে আবারও আগের মতো কর্মক্ষম ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে।

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

 আগামীকাল পড়ুন: হাঁটুব্যথার সহজ ব্যায়াম

প্রশ্ন-ত্তর

্রশ্ন: ১৬ বছরের কিশোরী মেয়ের ঠোঁটের ওপর গোঁফ দেখা যাচ্ছে, যা খুবই বিব্রতকর। এর সমাধান কী?

উত্তর: কৈশোরে হরমোনজনিত তারতম্যের জন্য এমনটা ঘটে। হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, অনিয়মিত মাসিক, ঘাড়ে কালো দাগ থাকলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা বেশি। স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন, কুশিং সিনড্রোম, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমারেও এ ধরনের সমস্যা হয়। কারও ব্যাপারটা কেবলই পারিবারিক। আপনি একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা নিন। ওজন কমান।

ডা. তানজিনা হোসেন, হরমোন বিশেষজ্ঞ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রয়েছে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় ঘরে বসে কিংবা জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। আপনার সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন পাঠান। উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। বয়স লিখতে ভুলবেন না।

ই–মেইলে স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন পাঠান: [email protected]