নারীর নীরব কষ্টের নাম এন্ডোমেট্রিওসিস

এন্ডোমেট্রিওসিস নারীদের এমন এক বেদনাদায়ক সমস্যা, যাকে সমুদ্রে ডুবে থাকা বরফখণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এর যতখানি প্রকাশিত, তার বেশিটাই থাকে লুক্কায়িত।
জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তরের নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। এই এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ বা কলা যদি জরায়ুর বাইরে বাসা বাঁধে বা বর্ধিত হয়, তখন তাকে বলে এন্ডোমেট্রিওসিস। ডিম্বাশয়, পেটের ভেতরের আবরণী পেরিটোনিয়াম, বিভিন্ন লিগামেন্ট, অন্ত্র, সেপটাম, স্কার টিস্যু বা কাটা সেলাইয়ের ওপর জমতে পারে এই কোষ। জরায়ুর বাইরে অবস্থান থাকলেও মাসিক চক্রের সময় এই কোষগুলোর মধ্যেও নৈমিত্তিক পরিবর্তন ঘটে। মাসিকের সময় এর মধ্যে রক্তপাত হয় বা তীব্র ব্যথা হয়।
অনেক সময় বছরের পর বছর এই সমস্যার কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। আবার মাসিকের সময় তলপেটজুড়ে তীব্র ব্যথা, অনেক সময় সিজারের সেলাইয়ের দাগ বরাবর প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। মাসিকের দু-তিন দিন আগে থেকে শুরু হতে পারে ব্যথা, যা মাসিকের সময় তীব্র আকার ধারণ করে। মাসিক শেষ হওয়ার পরও কয়েক দিন ব্যথা থেকে যায়। মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও একটি লক্ষণ হতে পারে। সহবাসের সময় অসহ্য ব্যথা হতে পারে। ৪০-৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এর কারণে বন্ধ্যত্ব বা সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। বাইরে থেকে দেখে বা কোনো পরীক্ষা করে এই রোগ শনাক্ত করা মুশকিল। আলট্রাসনোগ্রাফিতে সামান্য ধারণা পাওয়া যেতে পারে। একমাত্র ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে সঠিকভাবে সমস্যাটি নির্ণয় করা যায়।

কারা ঝুঁকিতে আছেন
■ ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী
■ যাঁদের সন্তান হয়নি বা বন্ধ্যত্ব আছে
■ যাঁরা প্রথম সন্তান দেরিতে নিয়েছেন
■ এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস

প্রতিকার কী
● যাঁদের উপসর্গ সামান্য বা যাঁদের মেনোপজের সময় আসন্ন, তাঁদের জন্য তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, কেবল নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপ করলেই হবে।
● ব্যথা কমাতে আইবুপ্রফেন, মেফেনোমিক অ্যাসিড ইত্যাদি ব্যথানাশক কাজ করে।
● একটানা ৬ থেকে ৯ মাস স্বল্প মাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা শুধু প্রজেস্টেরন বড়ি দেওয়া হয় অনেক সময়।
● লেট্রোজল, প্রজেস্টেরন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি একত্রে ছয় মাস খেলে উপকার পাওয়া যায় অনেক সময়।
● প্রজেস্টেরন বা গোনাডোট্রপিন অ্যানালগ ইনজেকশনও ব্যবহার করা হয়।
● অনেক সময় ল্যাপারোস্কপি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অবস্থানের টিস্যুগুলোকে কেটে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এটা জটিল অস্ত্রোপচার।
● যাঁদের বয়স কম ও সন্তান নেননি, তাঁদের এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে সন্তান নেওয়া উচিত, কেননা এ থেকে পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যত্ব হতে পারে।

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমইউ

আগামীকাল পড়ুন: চামড়ায় নখ ঢুকে কষ্ট

প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন: বয়স ২২ বছর, হাত ও পায়ের তালু খুব ঘামে।
উত্তর: থাইরয়েডের সমস্যার জন্য হতে পারে কিন্তু সঙ্গে ওজন কমা, বুক ধড়ফড়, ডায়রিয়া ইত্যাদি থাকার কথা। তা না হলে অতিরিক্ত উদ্বেগ এ বয়সে বেশি হাত-পা ঘামার জন্য দায়ী। আপনি একজন মেডিসিন বা হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ডা. শাহজাদা সেলিম, হরমোন বিশেষজ্ঞ