বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীর খাবার

>

• বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মনোদৈহিক বদল হয়
• সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার
• পরিচিত সমস্যার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।

১১ থেকে ১৮ বছর সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। এ সময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্যাপক মনোদৈহিক পরিবর্তন ঘটে। তাদের হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, গ্রোথ স্পার্ট বা স্ফূরণ ঘটে। কিশোরীদের স্তনগ্রন্থি বিকশিত হয়, মাসিক শুরু হয়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমে, জননাঙ্গের গ্রন্থি ও কলার বৃদ্ধির জন্য বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়। এ কারণে এ সময় সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার। কিন্তু দেখা যায়, কৈশোরেই খাবার–দাবারে অনিয়ম, অপুষ্টি বা অতিপুষ্টি, ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে পরবর্তী সময়ে, দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। এ ছাড়া বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীদের কিছু পরিচিত সমস্যার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।

ব্রন: বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের তারতম্যের জন্য কিশোরীদের মুখে ব্রন বেশি হয়। এ সময় ব্রনের আক্রমণ ঠেকাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে, শাকসবজি আর আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি। উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার বা হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফুড ব্রনের সমস্যা বাড়ায়। তাই কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

এনিমিয়া: এ সময় কিশোরীদের নিয়মিত মাসিক শুরু হয়। প্রথম দিকে অনেকেরই একটু বেশি পরিমাণে ও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে দেখা দেয় এনিমিয়ি বা রক্তশূন্যতা। কিশোরীদের প্রতি মাসে লৌহ বা আয়রনের চাহিদা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাংস, কলিজা, শাক, মাছ, ডিম বেশি করে খেতে হবে। কলা, বেদানা, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন আছে। দেহে আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন সি দরকার। তাই লেবু, কমলার রস, মাল্টা, পেয়ারা ইত্যাদিও খেতে হবে নিয়মিত।

পলিস্টিক ওভারি: অতিরিক্ত ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, কেক–পেস্ট্রি জাতীয় খাবার খেলে কিশোরীদের দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে ও হরমোনের তারতম্যের কারণে পলিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম দেখা দেয়। এর ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মুখে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়। তাই এ সময় অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার না খেয়ে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার বিবেচনায় আনতে হবে।

অতিরিক্ত ডায়েটিং: কখনো কখনো উল্টোটাও ঘটে। কিছু কিশোরী স্লিম ও আকর্ষণীয় হওয়ার আশায় অতিরিক্ত ডায়েটিং করে এবং অপুষ্টিতে ভুগতে শুরু করে। এদেরই পরবর্তী সময়ে রক্তশূন্যতা, ভিটামিনের অভাব, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি হতে দেখা যায়। তাই ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খাওয়া উচিত। কেউ যদি ওজনাধিক্যের কারণে ডায়েটিং করতেই চায়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই করা ভালো।

হাড়ের বৃদ্ধি: ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়, এরপর আর এটা বাড়ে না। তাই বোন ডেনসিটি বাড়াতে খেতে হবে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি–যুক্ত খাবার। দুধ, দই, পনির রাখুন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। ডিম, বাদাম, সবুজ শাক, ছোট মাছ খেতে হবে।