আমার জীবনে মায়ের প্রভাব বেশি

মা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরীর সঙ্গে ছেলে নাজিম ফারহান চৌধুরী
মা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরীর সঙ্গে ছেলে নাজিম ফারহান চৌধুরী

আমার মা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, অ্যাডকমের চেয়ারপারসন। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি মাকে কাজ করতে, কাজে যেতে। ফলে আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রতিফলন মায়ের। মা যে সময় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ শুরু করেছিলেন, তখন মেয়েরা খুব একটা এই পেশায় আসতেন না। সে কারণে ছোট থাকতে অনেকে জিজ্ঞাসা করত, তোমার মা কি মডেল? বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কী কাজ করেন? আমি তাদের মায়ের কাজ বুঝিয়ে বলতাম। আমি ও আমার বোন (ফাহিমা চৌধুরী) দুপুরে যখন স্কুল থেকে ফিরতাম, মা–বাবাও সেই সময় দুপুরের খাবার খেতে আসতেন বাসায়। মূলত সেই সময়টা ছিল আমাদের পারিবারিক সময়। 

স্কুলে কী হতো, সারা দিন কী করেছি, মায়ের অফিসে কার কী হয়েছে, সারা বিশ্বের গল্প সবই করতাম ওই সময়টুকুতে। মা ঢাকায় থাকলে আমাদের স্কুল থেকে আনা, স্কুলের সব অনুষ্ঠানে যাওয়া, সন্ধ্যায় ফিরে পড়ালেখার খোঁজখবর নেওয়া সবই করতেন। তবে বাবাও অনেক সহযোগিতা করতেন তাঁকে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা–ভালোবাসা সব সময় দেখেছি তাঁদের। আমার মনে হয় এসব পারিবারিক মূল্যবোধ জীবনে অনেক কাজে লেগেছে।

আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সব সময় শ্রদ্ধা রেখেছেন। সব বিষয়ে এটা করলে কী হতে পারে, কী হবে—ভালো–মন্দ দুই দিকই বলতেন। তারপর বলতেন এখন ঠিক করো কী করবে। মা–বাবা চেয়েছিলেন আমি ইংল্যান্ডে পড়তে যাই, কিন্তু আমি চেয়েছিলাম ভারতে যেতে। তাঁদের বুঝিয়েছি কেন যেতে চাই, তাঁরা আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন। আরেকটি বিষয় বলতে চাই, মা যখন কাজে বিদেশ যেতেন, সব সময় আব্বু যেতেন না, তেমনটি আব্বুর ক্ষেত্রেও। অনেকের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, স্বামী তাঁর স্ত্রীকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দেন না, যা আমাদের পরিবারে কখনোই দেখিনি। যখন মা ব্যবসার কোনো কাজে
বিচলিত হতেন, আব্বু পরামর্শ দিতেন। আব্বুকে মা সহযোগিতা করতেন বুদ্ধি–পরামর্শ দিয়ে।

মা ও আমি দুজনেই আবেগপ্রবণ, বাবা ও আমার বোন বাস্তববাদী। মা ও আমি ইমোশনাল হওয়ার কারণে আমাদের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ একই রকম থাকে। সত্যি করে যদি বলি, মায়ের থেকে আমি শেখার চেষ্টা করেছি, কমিটমেন্ট করা মানে তা রক্ষা করা। বলার জন্য কোনো কথা তিনি বলেন না, করেন না। কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও সৎ। আমরা যেহেতু বিজ্ঞাপনী সংস্থা চালাই, মা সব সময় বলতেন, সেই সামগ্রীর প্রচারের কাজ করবে, যা তুমি নিজে ব্যবহার করতে পারবে।

মায়ের আরেকটি অসাধারণ গুণের কথা বলতেই হবে, তিনি কখনো মিথ্যা বলেন না। অনেকে আছে, মজা করে বা অন্যকে একটু বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলেন, মা সেটি কখনোই করেন না। যা বলেন, তা বিশ্বাস করে বলেন। সে কারণে মায়ের কথা সব সময় আমরা নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতাম।

লেখক: অ্যাডকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।