গারারায় মন ক্রেতাদের

রোজার প্রথম শুক্রবার ক্রেতারা মার্কেটে ভিড়তে শুরু করেছেন। গাউছিয়া, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম
রোজার প্রথম শুক্রবার ক্রেতারা মার্কেটে ভিড়তে শুরু করেছেন। গাউছিয়া, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

কামিজের দৈর্ঘ্য হাঁটু অবধি। সালোয়ারটি হাঁটুর কাছে এসে বাড়তি ঘেরে কুচিতে পরিণত হয়েছে। পোশাকটির নাম ‘গারারা’ বা ‘সারারা-গারারা’। আসন্ন ঈদুল ফিতরের বাজারে মেয়েদের এই পোশাকটি এবার জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে। ‘গারারা’ বাদেও নানান নকশার পোশাক সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দোকানিরা। কেনাকাটা তেমন না জমলেও মার্কেটগুলোয় ভিড়তে শুরু করেছেন ক্রেতারা।

প্রতিবছরই ঈদে বাহারি নামের পোশাক বাজারে ওঠে। প্রচারেই হোক বা পোশাকের গুনেই হোক, তরুণী বা কিশোরীরা সেই পোশাকের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনি চক, গাউছিয়া, বসুন্ধরা সিটি ঘুরে ঈদ বাজারের অবস্থা দেখা গেল।

চাঁদনি চকের পাশে নূর ম্যানশনে দেখা গেল তৈরি পোশাকের দোকানগুলোয় নানান রকমের পোশাক সাজানো। জান্নাত মার্ক নামের দোকানে ঢুঁ মারতেই সারি সারি গারারা নামের পোশাক চোখে পড়ল। দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. সাব্বির বলেন, এক মাস আগেই ঈদের পোশাকগুলো তাঁরা দোকানে তুলেছেন। পোশাকগুলো মূলত আসে ভারত থেকে। দাম পড়বে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। নেশন ফ্যাশন নামের আরেক দোকানের বিক্রয়কর্মী জাকির হোসেন বলেন, চাহিদার তালিকায় লম্বা গাউন, বারবি গাউন, শাড়ি লেহেঙ্গাও রয়েছে। এই পোশাকের দামও গারারার মতোই।

এবার গারারা নামের এই পোশাক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা বিক্রেতাদের। গাউছিয়া, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: সুহাদা আফরিন
এবার গারারা নামের এই পোশাক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা বিক্রেতাদের। গাউছিয়া, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: সুহাদা আফরিন

কলেজপড়ুয়া আয়শা করিম বন্ধুদের নিয়ে পোশাক দেখছেন গাউছিয়ায়। কয়েক নকশার পোশাক দেখেছেন। দ্বিধায় রয়েছেন গাউন না গারারা নেবেন। আয়শা বলেন, ‘গাউনের শখ আমার। কিন্তু গারারা দেখে সেটাও কিনতে মন চাচ্ছে।’

গারারা হচ্ছে মোগল আমলের একটি পোশাক। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি একটি নজরকাড়া পোশাক। তাই এর কদর রয়েছে বেশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে ফিরে গারারা নামের এই পোশাক হালফ্যাশনে যোগ হয়েছে।

চাঁদনি চকের সেলাইবিহীন জামার দোকানগুলোয় তুলনামূলক বেশি ভিড়। যাঁরা পোশাক বানিয়ে পরতে পছন্দ করেন, তারা এখনই ছুটছেন মার্কেটে। বায়েজিদ ফেব্রিকস নামের দোকানে কয়েকজন সেলাইবিহীন জামা দেখছেন। সায়মা আক্তার নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি ঈদের পোশাক বানিয়ে পরতেই পছন্দ করেন। এখনই না কিনলে দরজি নিতে চাইবে না। এ দোকানের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, সালোয়ার কামিজ, গাউন, আনারকলির পাশাপাশি কাতানের ওপর নানান নকশার জামা এবার বেশ চলছে।

নিউমার্কেট, চাঁদনি চক ও গাউছিয়ার দরজিপাড়া সরগরম। পছন্দ অনুযায়ী নিজের ঈদ পোশাকটি বানাতে ক্রেতারা ছুটছেন দরজির কাছে। চাঁদনি চকের সুশীলা লেডিস ফ্যাশন নামের দরজি দোকানের মাস্টার মো. আতিকুল বলেন, ‘শবে বরাতের পর থেকে অর্ডার নিচ্ছি। ২০ রোজ পর্যন্ত নেব।’ তিনি জানান, এবার লেইস, আলাদা চুমকি, ইয়োক বসানো জামা কেউ বানাচ্ছেন না। এখনকার কাপড়গুলো নেট, কাতান, সিল্ক ধরনের হয়। তাতে চুমকি, পাথর, সুতা বা জরির কাজ করাই থাকে। পোশাকের কাপড়ে ভারী কাজ থাকায় কেউ আলাদা করে কিছু বসায় না।

শাড়ি, লেহেঙ্গা, গাউনসহ নানান নকশার পোশাকও দেখছেন ক্রেতারা। গাউছিয়া, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম
শাড়ি, লেহেঙ্গা, গাউনসহ নানান নকশার পোশাকও দেখছেন ক্রেতারা। গাউছিয়া, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে বাচ্চাদের পোশাকের দোকানে ক্রেতা তুলনামূলক বেশি। মাইশা ওয়ার্ল্ড নামের দোকানের বিক্রয়কর্মী জানালেন, টুকটাক বেচা-বিক্রি হচ্ছে। বাচ্চাদের জন্যই কিনছে সবাই। পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকে আগ্রহ অনেক। এ ছাড়া ফ্রক, গাউনও চলছে। সিতারা আমান দুই বাচ্চা নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার গরম অনেক, ভিড় কম থাকতেই বাচ্চাদের পোশাক কিনে ফেলতে চাই।’

আজ রোজার প্রথম শুক্রবার। মার্কেটগুলোয় ক্রেতারা ভিড়তে শুরু করেছেন। তবে বিক্রেতারা আশা করছেন, জমজমাট কেনাকাটা শুরু হবে পরের শুক্রবার থেকে। এখন টুকটাক কেনাকাটা বা বাজারে কী পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখতেই ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে।