নীল নির্জনে

শামলাপুর সৈকত। ছবি: লেখক
শামলাপুর সৈকত। ছবি: লেখক

নীল আকাশের নিচে স্বচ্ছ সমুদ্র। নির্জন সৈকতে রাশি রাশি সাদা বালু। প্রবল বাতাসে সমুদ্র ঊর্মিমালার ফেনা তোলা মাতামাতি। নির্জনতায় বিশুদ্ধভাবে প্রকৃতির গান শোনা আর শেষ বিকেলের সোনা রোদের আলোর রঙে আঁকা জলছবি দেখা। এখানকার দৃষ্টিনন্দন ঝাউবনে ঘেরা অপরূপে শোভিত নির্জন সৈকতে এসে ভালো লাগার ষোলো আনাই পাওয়া যাবে। এসব কিছু মিলবে শামলাপুর সমুদ্রসৈকতে। এ জন্য আপনাকে যেতে হবে কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কোথাও বের হবেন ভেবে থাকলে শামলাপুরকে আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারেন। তার আগে চলুন, ঘুরে আসি নির্জন সমুদ্রসৈকত শামলাপুর।

টেকনাফ থেকে হোয়াইক্যং সড়ক ধরে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে শামলাপুর। আমরাও টেকনাফ থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলাম। হোয়াইক্যং সড়ক ধরে কিছুটা পথ এগিয়ে ধমধমিয়ার পথে চলা শুরু করি, পাহাড়ি পথ। দুই পাশের পুরোটাই ঘন জঙ্গল। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছি। পথ চলতে চলতে চোখে পড়ে রাস্তাজুড়ে শিশুদের খেলাধুলা আর কাঠ কুড়ানোর দৃশ্য। পুরো পথটাই যেন সবুজে মোড়া। অনেক নাম না জানা ফুলের সঙ্গে নীল বনলতা চোখে পড়ে। এভাবেই জাদিমুরা, লেদা, মুচনি, রঙ্গীখালি ও মৌলভিপাড়া পেছনে ফেলে লাতুরিখোলায় এসে যাত্রাবিরতি নিই। লাতুরিখোলার আশপাশে পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। এখানে জীবন অনেক ধীরস্থির। বেশির ভাগ বাসিন্দাই চাকমা সম্প্রদায়ের।

আমাদের সঙ্গী স্থানীয় শিক্ষক জুলকারনাইনের ছাত্ররা ডাব নিয়ে চলে এল। ডাবের পানি পান করে দ্রুত সামনে যাই আর ভাবি প্রকৃতির মতোই সুন্দর আর ছবির মতো এখানকার মানুষেরা। কতক্ষণ চলেছি মনে নেই, দূর থেকে ঝাউগাছের সারি দেখে বুঝতে পারি সমুদ্র খুব কাছাকাছি। এরপরের সময়টুকু মেরিন ড্রাইভ সড়কের। তারপরই পা রাখি শামলাপুর সৈকতে।

ঝাউগাছের সারি, বালুর নরম বিছানা, তার সামনে থেমে থাকা মাছ ধরার ট্রলার, সামনে অপরূপ বঙ্গোপসাগর। এখানে নির্জনতাও একটা বড় ব্যাপার। কক্সবাজারের হিমছড়ি বা ইনানি সৈকতে কত মানুষ, কত ভিড় আর হুল্লোড়। এখানে তার কিছুই নেই। বেলা পড়ে আসায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো টেনে তীরে তোলা হচ্ছে। অনেকেই জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। একদল শিশুর চিৎকার আর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে চোখে পড়ল শুধুই সমুদ্র আর তার নীল জলরাশির শোঁ শোঁ গর্জন। আবেগ কোত্থেকে উথলে উঠল বলতে পারব না। সারা শরীরে বৈদ্যুতিক শকের মতো যেন শিহরণ বয়ে গেল।

পানি আমার খুব পছন্দ, তাই তো বারবার নদীর কাছে ছুটে যাই, ছুটে আসি সমুদ্রের কাছে। সমুদ্র বা নদী আমাকে নিরাশ করেনি কখনো। তাই তো আজ এখানে বা সমুদ্রসৈকতে পা দিয়েই দারুণ রোমাঞ্চ অনুভব করি। এর মধ্যে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক খোকন নিয়ে যান লাল কাঁকড়া দেখাতে। আমাদের সঙ্গে যোগ দেন জুলকারনাইন। অন্যদিকে সঙ্গী সাংবাদিক বোরহানুল হক তাঁর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণকারী দলবল নিয়ে সমুদ্র জলে অবগাহনে মেতেছেন। সব মিলে শামলাপুর এসে সমুদ্রসৈকতের রোমাঞ্চের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে চমৎকার মিশেল পাওয়া গেল তা এককথায় অসাধারণ। এমন অসাধারণে বারবার ডুবতে ইচ্ছে করে, কারণ সৈকত যেন শুধুই জীবনের উৎসব। মন চাইলেই আপনি এই ছুটিতে বা যেকোনো ছুটিছাটায় জীবনের এই উৎসবে শামিল হতে পারেন!

প্রয়োজনীয় তথ্য
কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে সোজা ঘণ্টা দুয়েক গেলেই শামলাপুর বা বাহারছড়া সমুদ্রসৈকতের দেখা মিলবে। আমরা গিয়েছিলাম টেকনাফ থেকে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য আমাদের পথে যাওয়া অর্থাৎ হোয়াইক্যং রোড ধরে শামলাপুর পর্যন্ত পথটুকু দারুণ উপভোগ্য হবে। সে জন্য আপনাদের টেকনাফের বাসে চড়ে টেকনাফ সড়কের হোয়াইক্যং রোড নামতে হবে। তারপর ধমধমিয়া হয়ে চলে আসুন শামলাপুর সমুদ্রসৈকত। বাহন হিসেবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা হোয়াইক্যং রোড থেকে শামলাপুর পর্যন্ত একমাত্র ভরসা। শামলাপুরে থাকা–খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। কক্সবাজার বা ইনানি সৈকতই একমাত্র ভরসা। কক্সবাজারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের ও সুবিধার হোটেল ও রিসোর্ট পাবেন। তবে অবশ্যই যাওয়ার আগে হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়ে যাবেন।