ঈদে বেড়ানোর চল
ছুটি হলেই বেরিয়ে পড়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধারা খুবই বেগবান। দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই যান বেড়াতে। ঈদের ছুটিতে এ প্রবণতা আরও বেশি। আর এবারের ঈদে তো বেশ দীর্ঘ ছুটিই মিলবে অনেকের। বেড়ানোর অনেক সুন্দর জায়গা আছে বাংলাদেশের ভেতরেই। সেসব জায়গা আনন্দময় করে তুলবে আপনার ছুটির দিনগুলো।
ঈদের এই দীর্ঘ ছুটিতে ব্যস্ততম শহরের কোলাহল ছেড়ে যাঁরা দেশের উত্তর-দক্ষিণ কিংবা পূর্ব-পশ্চিমে প্রিয়জনের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ভ্রমণে কিছু বাড়তি পাওনা। যাঁরা দক্ষিণ–পশ্চিমে যাচ্ছেন, তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন পৃথিবীর বিখ্যাত নোনাজলের বনাঞ্চল সুন্দরবন, যার সৌন্দর্য কালো মেঘ-বৃষ্টিতে হয়ে ওঠে ভয়ংকর সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এই মৌসুমে পর্যটকসংখ্যা কম, তাই বন্য জীবজন্তু দেখার সম্ভাবনা
থাকে অনেক বেশি। অভয়ারণ্যে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় চিত্রল হরিণ, গাছে গাছে বাঁদরের বাঁদরামি, কখনো নোনাজলে কুমিরের সাঁতার কাটা। দিনের বেলা তাপমাত্রার কারণে গরমটা একটু বেশি, কিন্তু যেকোনো একটি
ভোর কিংবা বিকেল হতে পারে
স্মরণীয়, যদি বাঘমামার দেখা মিলে যায়।
যাঁরা দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে বেড়াতে যাচ্ছেন, ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট-শ্রীমঙ্গল। জাফলং ও তামাবিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য, জৈন্তা পাহাড়ের ঝরনা, পাহাড় যেন আকাশ ছুঁয়েছে, তার বুকে সাদা মেঘগুলো যেন আটকে আছে। রাতারগুল, বিছনাকান্দি, রেমা কালেঙ্গা, লাউয়াছড়া, সাতছড়ির মতো চিরহরিৎ বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সকালসন্ধ্যা বন্য প্রাণীর চঞ্চলতা আপনাকে আকর্ষিত করবেই। চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল বর্ষায় অনন্য এক রূপ ধারণ করে। এ সময় গাছে নতুন কুঁড়ি আসে, শ্রমিকদের আনাগোনায় রঙিন হয়ে ওঠে চা–বাগানগুলো।
ঘুরে আসতে পারেন দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝরনা ছাড়াও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের গ্রাম্য জীবন আপনাকে বিমোহিত করবে। রাঙামাটির সাজেক কিংবা বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচলে মেঘবৃষ্টিতে স্নান করে রোদে শুকিয়ে নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে পারেন। এ যেন পাহাড় আর আকাশের মিতালি। স্বর্ণমন্দির ছাড়াও পথে পথে উপজাতিদের গ্রাম্য জীবন, মৌসুমি ফলের বাজার আপনাকে আকর্ষিত করবে।
দক্ষিণাঞ্চলে ঘুরে আসতে পারেন বরিশালের ব্যতিক্রমী জীবনধারা ও ভাসমান বাজার, যেখানে কেনাকাটার যাবতীয় কাজ সম্পাদিত হয় নৌকায়। বিখ্যাত আমড়া এবং পেয়ারার বাগানগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন নৌকায় করে।
যাঁরা ফল খেতে ভালোবাসেন তাঁদের আমন্ত্রণ আমের রাজধানী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে, সঙ্গে বাড়তি পাওনা পুঠিয়া, রাজবাড়ী, উত্তরা গণভবন, সোনামসজিদ, দারাসবাড়ি মসজিদসহ অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
এ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ব্যাংককসহ অন্যান্য দেশে যাঁরা বেড়াতে যেতে চান, তাঁদের ভ্রমণ প্রস্তুতি এখনই সম্পন্ন করে নিতে হবে।
লেখক: বেসরকারি পর্যটন সংস্থা দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক