ক্রিকেটারদের চুলের কাটছাঁট

>এখন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মৌসুম। এ মুহূর্তে নায়ক-নায়িকা, মডেলদের ছাপিয়ে ঝলমল করছেন ক্রিকেট তারকারা। শুধু খেলা নয়, প্রিয় খেলোয়াড় ছাপ ফেলেন ভক্তদের পোশাকে, চলনে-বলনে এবং অবশ্যই চুলে। পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে, এমন এক আয়োজনে নিজেদের চুলকে ঢেলে সাজাতে ক্রিকেটাররাও কম যান না। কেউ আধুনিক ছাঁট পছন্দ করেন, কেউ চিরাচরিত রূপেই বারবার ফিরে আসেন। কেউ রং তো কেউ কাট দিয়ে জয় করে নেন ভক্তদের মন। তাই ক্রিকেট-ভক্তদের জন্য জনপ্রিয় কিছু খেলোয়াড়ের চুলের চুলচেরা বিশ্লেষণ থাকছে এই আয়োজনে।


জনি বেয়ারস্টো

ইংলিশ উইকেটকিপার ও ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টোর জিঞ্জার রেড বা লালচে আদারঙা চুল দারুণ আলোচিত ইংল্যান্ডে। অনেকে শখ করে তাঁর রঙে নিজের চুল রাঙিয়ে নেন, এতই জনপ্রিয় তাঁর চুল। ব্যক্তিজীবনে নিজেকে নিপাট ফিটফাট ভদ্রলোক হিসেবেই তৈরি করে নিয়েছেন জনি, চুলের ছাঁটেও পড়েছে তার দারুণ প্রভাব। ছোট ছোট চুল জেল দিয়ে বাগে আনেন প্রথমে, তারপর বাঁয়ে সিঁথি করে সামনে একটু উল্টে আঁচড়ে নেন। পার্টি কিংবা ক্রিকেট—দুটোর জন্যই তিনি এই স্টাইলে সব সময় প্রস্তুত।


মার্টিন গাপটিল

কিউই এই ক্রিকেটার দারুণ ঝড় তুলেছিলেন তাঁর খেলা বোঝার অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে। শুধু খেলা নয়, মুখের হিপস্টার দাড়িও আলোচনায় উঠে এসেছে বারবার। তাই গাপটিল চেষ্টা করেন দাড়ির সঙ্গে মানানো চুলের কাট বাছাই করতে। এই বছর গাঢ় বাদামি চুলে একটু লালচে শেড এনেছেন নিউজিল্যান্ডের এই ক্রিকেটার। পাশাপাশি ছোট করে ছাঁটা চুলে স্লিক ব্যাক স্টাইলেই বেশি দেখা যাচ্ছে তাঁকে।


বিরাট কোহলি

ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি অনেক আগেই নিজেকে ফ্যাশনেবল হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তাঁর চুলের কাট নিয়ে লেখালেখি, ছবি ও ভক্তদের পাগলামিও কম নয়। এই বিশ্বকাপে অবশ্য খুব একটা ব্যতিক্রমী কিছু করেননি বিরাট। দাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে সাদামাটা লো-ফেড এবং ওপরের অংশে ব্রাশ হেয়ার স্টাইলখানাই রেখেছেন চুলে, কমিয়েছেন দৈর্ঘ্য। ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন বলে কথা। তাই প্রত্যাশা, দায়িত্ব এবং ব্যক্তিত্ব—এই তিনের ভালোই সমন্বয় ঘটিয়েছেন নিজের চুলের ছাঁট এবং চেহারার অভিব্যক্তিতে।


মাশরাফি বিন মুর্তজা

কপালে এসে পড়া চুলের তিনকোনা ভাঁজখানা কখনোই নষ্ট হতে দেন না প্রিয় মাশরাফি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই অধিনায়ক তাঁর সহজ-সরল যুক্তির সঙ্গে তাল মেলান মাথার চুলের কাটেও। তাঁর চুলে মূলত দুটি কাটের মিশেল থাকে। দুই পাশে লো ফেড। তালুতে হালকা ট্যাপার ছাঁটে আঙুল বোলানো স্পাইক। যদিও খেলার মাঠে নামার আগে চুল নিয়ে অত ভাবেন না তিনি। মাঠের বাইরে অবশ্য স্টাইলিশ মাশরাফিকে শ্যাম্পু করা ঝলমলে অবিন্যস্ত চুলেও বেশ দেখা যায়।


লাসিথ মালিঙ্গা

শ্রীলঙ্কান এই ক্রিকেটার যখন বল হাতে ছুটে যান পিচের দিকে, তখন অবধারিতভাবে দুটি ব্যাপার চোখে পড়বেই আপনার। দুর্দান্ত বোলিং আর ঝড়ে পড়া গাছের মতো প্রবলবেগে দুলতে থাকা সোনালি হাইলাইট করা একমাথা কোঁকড়া চুল। কিশোর বয়স থেকেই এই স্টাইলে চুল সাজিয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু ঠিক কেন এই সাজ? এই নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব বা থিওরি প্রচলিত আছে। প্রথমটি এসেছে তাঁর হেয়ারড্রেসার নিশান্থ জয়সেকারা থেকে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, মালিঙ্গা সব সময় চেষ্টা করেন অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে খেলতে, সেই বার্তাই তিনি ছড়িয়ে দিতে চান চুলের সাজে। আরেকটি সূত্র অনুযায়ী, লঙ্কান পতাকায় খচিত সিংহের কেশর মালিঙ্গার অনুপ্রেরণা। নিজেকে তিনি উইকেটের জন্য ক্ষুধার্ত সিংহ বলেই মনে করেন। সবচেয়ে মজার তথ্য দিয়েছেন এক ভক্ত। তাঁর মতে, মালিঙ্গার গ্রামের নাম রাতগামা, যার অধিবাসীরা নারকেলের ছোবড়া উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। তাদের কথা স্মরণে রাখতেই নিজের মাথায় ছোবড়ার মতো চুল ও রং করেছেন মালিঙ্গা। প্রমাণস্বরূপ একটি ছবিও টুইটে যোগ করেছেন ওই ভক্ত!


শোয়েব মালিক

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক অনেকাংশেই আলোচিত তাঁর স্ত্রী ও টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার জন্য। তবু তাঁর সুদর্শন উপস্থিতির চর্চাও কম হয় না। মজার ব্যাপার হলো, একমাথা কালো চুলের অধিকারী এই খেলোয়াড়ের চুলের স্টাইল দেখতে ইন্টারনেটে সার্চ করলেই হাজির হয় পশ্চিমা সংগীত তারকা জেন মালিকের ছবিও। নামে নয় শুধু, চুলের স্টাইলেও জেনের সঙ্গে শোয়েবের দারুণ মিল। এই বিশ্বকাপে ছোট ছাঁটে পম ফেড স্টাইলেই বেশি দেখা যাবে শোয়েবকে।


আসগর আফগান

আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যান এবং আলোচিত অধিনায়ক আসগর আফগান হাল জমানার চুলের ছাঁট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন না বললেই চলে। তবু তাঁর বেশ ঝলমলে চুল চোখে পড়ে মাঠে। রেশমি চুলের অধিকারী এই ক্রিকেটার চুলকে নিজের মতোই ঘাড় পর্যন্ত বাড়তে দিয়েছেন। ভারী জুলফি আর কপালে এসে পড়া এলোমেলো অবিন্যস্ত চুলের ছাঁট যদিও তাঁর ছক্কা পেটানোতে খুব একটা বাধা দিতে পারেনি।


তাবরিজ শামসি

দক্ষিণ আফ্রিকার এই হাসিখুশি বোলার ব্যক্তিজীবনে খুবই ঘরকাতুরে। খেলা, ক্রিকেট আর ঘর নিয়েই মোটামুটি সুখী তিনি। বিয়ের আসরেও হাজির হয়েছিলেন ব্যাট হাতে, তখন চুলে যে ছাঁট ছিল, এখনো তা-ই আছে। লোটে কাটের সঙ্গে মাথার চূড়াতে কোমল জেল দিয়ে তৈরি হালকা স্পাইক। তবে এই বিশ্বকাপে চেনা কালচে বাদামি চুলের রং বদলে কালো করে নিয়েছেন, এটাই যা তফাত।


ক্রিস গেইল

বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান জ্যামাইকান ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। সব সময় হাসিখুশি এবং চুলের ব্যাপারে স্টাইলিস গেইল প্রতিবছরই চুল নিয়ে কিছু চমক রাখেন। শুরু করেছিলেন সরু, নিপাট বেণি দিয়ে। সেটি এবার রূপ নিয়েছে একমাথা ডেডলকে। পাশাপাশি লকের শেষে সোনালি ডাইয়েরও কাজ করেছেন গেইল। এই বিশ্বকাপের গেইল-ঝড়ে ডেডলকের কালো সোনালি চমকের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে ক্রিকেট-বিশ্ব। গেইল তা ভালোই জানেন।


শাই হোপ

২৫ বছর বয়সী বারবাডোজের এই খেলোয়াড় খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। ইনস্টাগ্রামজুড়ে আছে তাঁর নানা ছাঁটের চুলের ছবি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে শাই বেছে নিয়েছেন এই বছরের অন্যতম জনপ্রিয় চুলের কাট মোহক। কোঁকড়া চুলে এই কাটটি ভালো মানায়, এটিই হয়তো তার কারণ। কপালের অংশে সমান রেখা টেনে, দুই পাশ থেকে মিহি করে ছেঁটে ওপরে কোঁকড়া চুলের ছোট্ট একখানা ঝোপ। ব্যস, এই এক কাটেই সবার নজর কেড়ে নিয়েছেন শাই। ইনস্টাগ্রামে মজা করে লিখেছেন, এই কাটের জন্য নাপিতকে পয়সা দিতে গিয়ে প্রায় ফতুর হতে বসেছিলাম! যদিও নাপিত, মানে বন্ধু কাটথ্রোট ক্যারভেয়ারকে ট্যাগ দিতে ভোলেননি তিনি।


গ্রন্থনা: খাদিজা ফাল্গুনী, সূত্র: ক্রিকেটিক, ডন, আইসিসি, মেনসএক্সপি, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার, ক্রিকেট আপকামিং উইকি, মিয়ও ডট কম