মুশফিকের জন্য নিজেকেও তারকা তারকা মনে হয়

মুশফিকের বয়স তখন ১০ বছর। সে যে ক্রিকেট খেলে, সেটা আমি জানতাম না। একদিন পাড়ার ছেলেরা এসে বায়না ধরল, পাশের শিকারপুর মাঠে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ আছে। তাদের ক্লাব খেলবে। দেখতে যেতে হবে। ক্রীড়া সংগঠক হওয়ার কারণে তাদের আবদার ফেলতে পারলাম না। উৎসাহ দেওয়ার জন্য মাঠে গিয়ে দেখি ততক্ষণে খেলা শেষ। সবাই মুশফিককে কাঁধে নিয়ে হইহুল্লোড় করছে। ঘটনা কী! পুরস্কার বিতরণ শুরু হলে মাইকে ঘোষণা এল, মুশফিক ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছে। আমি তো ঘোষণা শুনে বিস্ময়ে হতবাক। পরে টিম ম্যানেজারের কাছে শুনলাম, নিশ্চিত ম্যাচ হেরে যাচ্ছিল, মুশফিক মাঠে নামতে চাইলেও কেউ রাজি হচ্ছিল না। ওর জেদের কারণে শেষমেশ মাঠে নামানো হয়। আর ব্যাট-বল হাতে মাঠে নেমেই রানের ঝড় তোলে মুশফিক। শিকারপুর মহল্লার মাঠ থেকে মুশফিক কোনো দিন মিরপুরের মাঠে খেলবে, সেটা কল্পনাতেও ছিল না কখনো।

এখন দেশ-বিদেশে যেখানেই যাই, সবাই মুশফিকের বাবা হিসেবে আমাকে চেনেন। খাতির–যত্ন করেন। ছবি তোলেন। ছেলের জন্য তখন গর্বে বুকটা ভরে যায়। ছেলের খ্যাতির কারণে নিজেকেও তারকা তারকা মনে হয়। একসময় বগুড়া শহরের লোকজন আমাকে ব্যবসায়ী মাহবুব হামিদ নামে চিনতেন। এখন মুশফিকের বাবা হিসেবে চেনেন। ‘সংহতি’ বাড়িটার একসময় ব্যবসায়ী মাহবুব হামিদের বলে পরিচিতি ছিল। এখন ক্রিকেটার মুশফিকের বাড়ি বলে সবাই চেনেন।

একবার বিদেশে খেলা দেখতে গিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গেছি। বিল দিতে গিয়ে শুনি, একটু আগে একজন বিল দিয়েছেন। বগুড়া শহরে অটোরিকশায় উঠলে অধিকাংশ সময়ে উঠতি তরুণেরা আমাকে ভাড়া দিতে দেন না। বাংলাদেশ দলের খেলা হলেই দর্শক গ্যালারিতে হাজির হই। তখন অনেকেই বাদাম-চিপস, পানীয় পাঠিয়ে দেন। হাজারো দর্শকের ভেতরে টিভি ক্যামেরা আমাকে খুঁজে বের করে। মুশফিকের কারণে এ রকম অজস্র ভালোবাসায় বাবা হিসেবে প্রচণ্ড গর্বিত আমি।

এবারের বিশ্বকাপে মুশফিকসহ বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশা অনেক। বিশ্বকাপে দলকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে নিজেও হাজির হচ্ছি কয়েক দিনের মধ্যে। ফোনে কথা হয়েছে ছেলের সঙ্গে। ওকে বলেছি, বাবা, যে খেলা হয়েছে, কষ্ট-গ্লানি পরাজয় মনে রেখে লাভ নাই। অতীত ভুলে ঘুরে দাঁড়াও। ভুল শুধরে ভালো কিছু দেখাও। আগামী বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ তোমার না–ও হতে পারে। তাই যে ম্যাচ খেলছ এটাই মনে করতে হবে তোমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। গোটা বাংলাদেশ তোমাদের দিকে তাকিয়ে। বিজয়ের বেশে দেশে ফিরে এসো। আমিও মাঠে আসছি তোমাদের বিজয়ের সঙ্গী হতে। বাবা হিসেবে তোমাদের জন্য শুভকামনা।

অনুলিখন: আনোয়ার পারভেজ, বগুড়া