যেদিন সময়কে থামিয়ে দিল গতি

ঘোড়দৌড়ের মাঠে যখন ঘোড়া দৌড়াতে থাকে, তখন তার চারটি পা–ই কি কোনো এক মুহূর্তে পুরোপুরি শূন্যে ভাসমান থাকে? অদ্ভুত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ব্রিটিশ আলোকচিত্রী এডওয়ার্ড মুইব্রিজ চলচ্চিত্র বা অ্যানিমেশন তৈরির দ্বার উন্মোচন করেন। সেই দিনটি ছিল ১৮৭৮ সালের ১৫ জুন। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত হলেও মুইব্রিজ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর এবং রেলরোডের ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, রেসে দৌড়ানোর একটা না একটা সময় ঘোড়ার চারটি পা-ই আকাশে ভাসমান থাকে। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তাঁর কাছে ছিল না। তাই তিনি আলোকচিত্রী মুইব্রিজকে রাজি করান রেসের মাঠে ছুটন্ত ঘোড়ার এমন ছবি তোলার জন্য, যা তাঁর সপক্ষে প্রমাণ দেবে।

১৮৭৮ সালের ১৫ জুন। এডওয়ার্ড মুইব্রিজ নামীদামি আলোকচিত্রী আর সাংবাদিকদের জড়ো করলেন স্ট্যানফোর্ডের বাগানবাড়িতে। ১২টি ক্যামেরা দিয়ে এমন ব্যবস্থা করলেন, যেন সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ব্যবধানে তাঁর ক্যামেরাগুলোয় ক্রমাগত ছবি তোলা যায়। যে ঘোড়াটির ছবি তোলা হবে, সেটি যখনই ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত তার স্পর্শ করল, সেই মুহূর্তেই ১২টি ছবি তোলা হয়ে গেল। এখন সেই প্রশ্নের উত্তর জানার পালা। উৎসুক জনতার সামনে বসেই মুইব্রিজ নেগেটিভ থেকে ছবি প্রিন্ট করেন আর দেখান যে কোনো এক মুহূর্তে সত্যি সত্যিই ঘোড়ার চারটি পা-ই ভাসমান। অর্থাৎ ঘোড়াটি শূন্যে ভাসছে। মুইব্রিজের তোলা এই ছবিগুলোকে ‘মুভিং পিকচার’ বা চলমান ছবিতে রূপ দান করা জুপ্রাক্সিস্কোপ পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র বা অ্যানিমেশন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। অনেকে আবার মুইব্রিজের এই স্থির আলোকচিত্রকে গতিময় করে চলচ্চিত্রে রূপদানকে প্রথম নীরব চলচ্চিত্র বা ‘সাইলেন্ট ফিল্ম’ বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। খালি চোখে জগতের কিছু কিছু সত্যকে যে কখনোই ধরা যায় না, কোনো একটি মাধ্যমের প্রয়োজন হয়—তার বৈজ্ঞানিক সূত্র বোধ হয় এটিই ছিল। মুইব্রিজের এই ছবিগুলো শুধু যে স্ট্যানফোর্ডের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছিল, তা–ই নয়, অবিশ্বাস্য এবং চাঞ্চল্যকর এই ছবিগুলোই ছিল স্থির চিত্রকে গতিময় করে তোলার প্রথম প্রয়াস।

তথ্যসূত্র: টাইম ম্যাগাজিন