কাঁঠালের সময়ে কাঁঠালের রান্না

>বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এখন কাঁঠালের মৌসুম। কথায় আছে কাঁঠালের কোনো কিছুই ফেলনা নয়। কাঁঠাল কাঁচা-পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। এমনকি ফেলনা নয় কাঁঠালের বিচিও। কাঁচা কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচির কয়েক পদের রান্নার রেসিপি দিয়েছেন ফাতিমা আজিজ

কাঁচা কাঁঠালে মাংস ভুনা

উপকরণ

লবণ-হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করা কাঁচা কাঁঠাল ৭০০ গ্রাম, গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা সিকি কাপ, হলুদ আধা চা-চামচ, মরিচ আধা চা-চামচ, ধনে ১ চা-চামচ, জিরাবাটা আধা টেবিল চামচ, সাদা সরিষাবাটা ১ টেবিল চামচ (১টি কাঁচা মরিচসহ), লবণ ১ চা-চামচ, তেল আধা কাপ, দারুচিনি (২ সেন্টিমিটার লম্বা) ২ টুকরা, ছোট এলাচি ২টি, তেজপাতা ১টি, মেথিবাটা আধা টেবিল চামচ ও ভাজা শুকনা মরিচ ৪টি।

প্রণালি

মাংসের টুকরাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি হাঁড়িতে মাংস নিয়ে তাতে সব মসলা, তেজপাতা, লবণ ও ১ টেবিল চামচ তেল মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। মাংস সমান সমান পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ না হলে আরও একটু গরম পানি দিয়ে কষিয়ে সেদ্ধ করা কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। ঢেকে ৫ মিনিট রান্না করে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন। অন্য একটি হাঁড়িতে বাকি তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজকুচি, দারুচিনি ও এলাচি ভেজে নিন। পেঁয়াজ সোনালি রং হয়ে এলে মাংস ও কাঁঠালের মিশ্রণ দিয়ে নাড়ুন।

মাংস খুব ভুনা ভুনা করে করে কষাতে হবে। এরপর সামান্য পানি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ৫ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দিন।

চিংড়ি ভরা কাঁঠালের গোল্লা

উপকরণ

কাঁঠাল বল বা গোল্লার জন্য—কাঁচা কাঁঠাল ৫০০ গ্রাম, মাঝারি আকারের চিংড়ি মাছ প্রতিটি গোল্লার জন্য ১টি করে, পেঁয়াজকুচি ১টি, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, টমেটোকুচি ১টি, জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনেগুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, বেসন ২ থেকে আড়াই চা-চামচ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচের কুচি ১ টেবিল চামচ ও ঝুরি করা পনির আধা কাপ।

ঝোলের জন্য: পেঁয়াজকুচি সিকি কাপ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, টমেটোকুচি ১টি, কাঁচা মরিচের কুচি ৪টি, ধনেগুঁড়া দেড় চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, টক দই দেড় টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ ও ক্রিম আধা কাপ।

ফোড়নের জন্য: জিরা সিকি চা-চামচ, লবঙ্গ ২টি, ছোট এলাচি ২টি ও দারুচিনি ১‌ টুকরা।

প্রণালি

কাঁঠালের গোল্লা: চিংড়ি মাছের মাথা পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে আলাদা করে রাখুন। মাছের মাথাগুলো আলগা করে একটি পাত্রে রাখুন। কাঁচা কাঁঠাল কেটে ভালো করে ধুয়ে সামান্য লবণ হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। চিংড়ি মাছের মাথা ও সেদ্ধ করা এঁচোড় পাটায় পিষে নিন (অথবা ব্লেন্ডারে মসৃণ করে ব্লেন্ড করুন)। প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা সোনালি করে ভেজে তাতে আদা-রসুনবাটা ও টমেটোকুচি দিয়ে খানিকক্ষণ কষিয়ে নিন। এরপর একে একে হলুদগুঁড়া, লাল মরিচের গুঁড়া, জিরাগুঁড়া, ধনেগুঁড়া ও চিনি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিয়ে তাতে এঁচোড় ও চিংড়ি মাছের মাথার অংশ দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। লবণ দিয়ে আরও ৭-৮ মিনিট রান্না করুন। চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন। প্যানে সামান্য তেল গরম করে লবণ দিয়ে মেখে রাখা চিংড়ি মাছগুলো ২ মিনিট ভেজে তুলে রাখুন।

এবারে এঁচোড় ও মাথার মিশ্রণ কাঁচা মরিচের কুচি ও বেসন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে মেখে নিন। এই মিশ্রণটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন। এবার হাতের তালুতে তেল মেখে একেক ভাগ দিয়ে গোল করে আঙুল দিয়ে মাঝখানে একটি গর্ত করে হাঁড়ির আকারে এনে তার ভেতরে একটি করে চিংড়ি মাছ ও ঝুরি করা পনির দিয়ে মুখ বন্ধ করে গোল করে বল তৈরি করুন। একইভাবে সব কটি বল তৈরি করুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে ডুবো তেলে সোনালি করে ভেজে তেল থেকে উঠিয়ে রাখুন।

ঝোল: কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে জিরা, দারুচিনি ও এলাচির ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজকুচি সোনালি করে ভেজে আদা–রসুনবাটা, টমেটোকুচি দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। ৩ মিনিট পর এতে কাঁচা মরিচের কুচি, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া দিয়ে সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। তারপর টক দই দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। তারপর পরিমাণমতো কুসুম গরম পানি দিয়ে নাড়ুন। ফুটে উঠলে এঁচোড়ের বলগুলো দিয়ে ৩ মিনিট মাঝারি আঁচে রান্না করুন। এবার ক্রিম, ঘি ও গরমমসলার গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নাড়ুন। ঢেকে চুলা বন্ধ করে ৫ মিনিট রেখে দিন।

শুঁটকি-চিংড়ি-কাঁঠাল বিচির ভুনা

উপকরণ

বাঁশপাতা মাছের শুঁটকি ৮-৯টি, কচুর লতি ১ কেজি, চিংড়ি মাছ ১ কাপ, তেল আধা কাপ, কাঁঠালের বিচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৬টি, ধনেপাতাকুচি একমুঠো, রসুনবাটা ৩ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ৩ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুন ৯ কোয়া, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, টমেটোকুচি ১টি, লবণ স্বাদমতো ও পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি

কচুর লতির আঁশ ছাড়িয়ে ধুয়ে এক আঙুল লম্বা করে কেটে লবণ মেখে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। চুলায় ডুবো পানিতে আরেকটু লবণ দিয়ে কয়েকবার ফুটে উঠলে লতি দিয়ে ঢেকে দিন। দু–তিনবার ফুটে ওঠার পর পানি ঝরিয়ে নিন।

কাঁঠালের বিচির খোসা ছাড়িয়ে পানিতে ৫-৬ ঘণ্টা রেখে পাটায় ঘষে লাল খোসাটা উঠিয়ে ফেলুন। ধুয়ে লবণ দিয়ে বিচি সেদ্ধ করে টুকরা করে নিন। চিংড়ি মাছে সামান্য লবণ মেখে রাখুন।

শুঁটকি মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কড়াইতে দুই কাপ পানি ফুটিয়ে শুঁটকি ছাড়ুন। ফুটে উঠলে কাঁটা থেকে মাছ আলাদা হয়ে গেলে কাঁটা তুলে ফেলে দিন।

অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে চিংড়ি মাছগুলো ভেজে উঠিয়ে রাখুন। একই তেলে পেঁয়াজকুচি সোনালি করে ভেজে তাতে সব গুঁড়া ও বাটা মসলা দিয়ে ভালো করে কষান। এবার শুঁটকি-পানির মিশ্রণ দিয়ে কষান। তারপর কাঁঠালের বিচি, চিংড়ি মাছ দিন। এবার লতি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে স্বাদমতো লবণ, রসুনকুচি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন।

ভুনা হয়ে গেলে তেল ছাড়লে ধনেপাতাকুচি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে ২ মিনিট রেখে চুলা বন্ধ করে দিন।

কাঁঠালের বিচির ভর্তা

উপকরণ

কাঁঠালের বিচি ৩০-৪০টি, ভাপানো চিংড়ি মাছ আধা কাপ, রসুনকুচি ১টি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, কোরানো নারকেল আধা কাপ, শুকনা মরিচ ৮টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, সরিষার তেল ১ চা-চামচ ও তেল টালার জন্য।

প্রণালি

কাঁঠালের বিচির খোসা ছাড়িয়ে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে পাটায় ঘষে লাল খোসা তুলে সেদ্ধ করে নিন। একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে প্রথমে শুকনা মরিচ টেলে উঠিয়ে রাখুন। তারপর বাকি তেলে একে একে পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি ও ধনেপাতাকুচি টেলে নিয়ে একটি পাত্রে উঠিয়ে রাখুন।

প্যানে আরও ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে সেদ্ধ করা কাঁঠালের বিচি, কোরানো নারকেল ও চিংড়ি মাছগুলো টেলে নিন। এবার প্রথমে টেলে রাখা পেঁয়াজ, রসুনের কোয়া, শুকনো মরিচ বেটে আলাদা করে রাখুন, তারপর নারকেল ও চিংড়ি মাছ বেটে উঠিয়ে রাখুন।

বিচিগুলো মসৃণ করে বেটে এর সঙ্গে লবণ, চিনি দিয়ে বাকি উপকরণের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে আবার বেটে নিয়ে সরিষার তেল দিয়ে মেখে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

কাঁঠালের বিচির সন্দেশ

উপকরণ

কাঁঠালের বিচি ১ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক পৌনে ১ কাপ, দুধ দিয়ে বাটা কাজুবাদাম সিকি কাপ, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, জাফরান আধা চা-চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ ও গুঁড়ো দুধ ১ কাপ।

প্রণালি
সেদ্ধ করা কাঁঠালের বিচি পাটায় মসৃণ করে বেটে নিন (ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করেও নিতে পারেন)। প্যানে ঘি গরম করে তাতে কাঁঠালের বিচির পেস্ট দিয়ে নাড়ুন। তারপর কনডেন্সড মিল্ক ও কাজুবাদামবাটা দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। এরপর গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে নাড়ুন। গোলাপজল ও জাফরান দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন। প্যান থেকে কাঁঠালের বিচির মিশ্রণ ভালো করে রান্না হলে নামিয়ে একটি ট্রে বা কেকের মোল্ডে ঘি মেখে তাতে ঢেলে স্প্যাচুলা (খুন্তির মতো একধরনের চামচ) দিয়ে উপরিভাগ সমান করে নিয়ে ঠান্ডা করুন। ২ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে বের করে ছুরি দিয়ে চারকোনা করে কেটে বা ছাঁচে ফেলে ইচ্ছেমতো আকার দিতে পারেন।