আমের আমেজ অন্দরে

অন্দরসজ্জার উপকরণ হিসেবে পাকা আম মন্দ নয়
অন্দরসজ্জার উপকরণ হিসেবে পাকা আম মন্দ নয়

বাড়িতে পাকা আমের সুবাস, আর বাইরে ঝুম বৃষ্টির ছন্দ। সুস্বাদের অভিলাষী প্রকৃতিপ্রেমী কেউ দারুণ খুশি হবেন নিশ্চয়ই। আমের আমেজ অন্দরে। ধারণাটি নতুন বটে। বেশ অন্য রকমও। নানানভাবে আম খাওয়া হয় এ দেশে, তবে অন্দরসজ্জায় ‘আম’ বহুল প্রচলিত কোনো ‘থিম’ নয়। লবণ-মরিচ মাখানো কাঁচা আমের কথা লিখতে গিয়েও যেন স্বাদগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে গেল! সোজা বাংলায় যাকে বলে জিবে জল আসা। পাকা আম কেটে, না কেটে, রস করে, দুধ মিশিয়ে—কতভাবেই না খাওয়া হয়। আম খাবার পর আঁটি ফেলে অঙ্কুরোদ্‌গমের স্বপ্নে বিভোর হতাম একসময়। স্বপ্ন পূরণও হতো। কেউ একজন ‘আম আঁটির ভেঁপু’ তৈরি করে দিচ্ছেন, এমন স্মৃতিও ভেসে আসছে মনে। বিভূতিভূষণের অপু-দুর্গার মতো বয়সটাতে ফিরে তো আর যাওয়ার সুযোগ নেই। শহুরে যান্ত্রিকতার মাঝে আম খাওয়া ছাড়া আমের আমেজ আনার জন্য অন্দরসজ্জাটাকেই তাই বেছে নিতে পারেন।

রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলসান নাসরীন চৌধুরীর কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে অন্দরে আমের আমেজ আনা যায়—
 প্রবেশপথে
দরজার পাশে বেত বা কাঠ দিয়ে তৈরি আমের আকৃতির আয়না রাখতে পারেন। আয়নার মাপ হতে পারে দেড় ফুট বা আড়াই ফুট। বাড়িতে ঢোকার সময়ই বোঝা গেল বাড়ির মানুষেরা আম ভালোবাসেন।


বসার ঘরে

আমের ‘থিম’ ব্যবহার করে অন্দর সাজাতে পারেন অনায়াসে। ড্রয়িং রুমের সোফার কভার হয়তো সবুজ। সেন্টার টেবিলে আমের রং ও আকৃতির টেবিলম্যাট রাখতে পারেন। সোফার পেছনের অংশে ঝোলানোর রুমাল হতে পারে পাকা আমের রঙে। রুমালের আকৃতিও হতে পারে আমের মতো। আবার এই রুমালের আকৃতি এমনও হতে পারে, যাতে তা একটি আম আর দুপাশে দুটি পাতা বোঝায়। আম আর পাতার প্রাকৃতিক রঙের সঙ্গে মিল রেখেই বেছে নিন এই কৃত্রিম আম ও পাতার কাপড়ের রং। কুশন কভার হতে পারে কাঁচা-পাকা নানান আমের রঙে। কুশনের আকৃতিও হতে পারে আমের মতো। লিভিং রুমের কুশনগুলো হতে পারে নানান রকম আমের আকৃতি ও রঙের।

আমদানি
আমদানি


খাবার ঘর

খাবার টেবিলের জন্য চাপা সাদা রঙের কভার বেছে নিতে পারেন। রানার ও টেবিলম্যাটের আকৃতিতে আম আর আমপাতা নিয়ে আসতে পারেন। হয়তো তিনটি আমপাতার আকৃতি জুড়ে দিয়ে একটা রানার তৈরি হলো, টেবিলম্যাট হলো আমের আকৃতির। পাতার রং সত্যিকার পাতার মতোই বেছে নিন, আমের রংও হোক ‘আম’-এর মতো। আবার একইভাবে টেবিলম্যাটে আমের পাশ থেকে পাতা ঝুলে আছে, এমনটাও ফুটিয়ে তোলা যায়।
দেয়ালে ফলের ডালা বা আমভর্তি ঝুড়ির চিত্রকর্ম ঝোলাতে পারেন, যাতে অনেক রকম আম। এ ধরনের তিনটা পেইন্টিংয়ের কোলাজ বানিয়ে ফ্রেম তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।
ফ্রিজ বা ডিপফ্রিজে নানান আকারের আমের স্টিকার বা ফ্রিজ ম্যাগনেট আটকে দিতে পারেন। দরজার সামনে আমপাতা গেঁথে ঝুলিয়ে দিতে পারেন কিছুদিনের জন্য। 

কাঠের আমবাটি
কাঠের আমবাটি

অতিথি আপ্যায়নে কিংবা ঘরের পর্দায়
আমের আকার দেওয়া নানা রকম সিরামিক বা কাঠের বাসনকোসন মিলবে কিছু কিছু দোকানে। খাবার পরিবেশনে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। আমের জুস পরিবেশনের ট্রে-টি যদি হয় আম কিংবা আমপাতা আকৃতির, তা নজর কাড়বে সহজেই। আমের আকৃতির ক্রোকারিজ তাই এই মৌসুমে ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের পর্দায় সবুজ-কমলার সমন্বয় ঘটাতে পারেন। একটি পর্দার বিভিন্ন অংশে এমন রং ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার পাশাপাশি কয়েকটি পর্দা মিলিয়েও সমন্বয়টি তৈরি করতে পারেন। 
শোবার ঘর
শোবার ঘরের একটা দেয়াল হয়তো পাকা আমের রঙে করিয়ে নিলেন। অন্য দিকগুলো হালকা সবুজ বা অফ হোয়াইট রঙের থাকল। কিংবা পাকা আমের রঙের পর্দা বেছে নিলেন। আমপাতা গেঁথে পেলমেটের মতো তৈরি করতে পারেন। দেয়ালে একটা ফটোগ্রাফ বা পেইন্টিং রাখতে পারেন আমবাগানের। হয়তো একটা আমবাগানের গাছ থেকে একটা ছোট্ট সাঁওতাল মেয়ে আম পাড়ছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা হয়তো আমের আকৃতিতে বানিয়ে নিলেন।