আমাদের অন্য রকম গায়েহলুদ

শাহবাগে ফুলের দোকানে ফুলের টোপর পরে মাহির–মৃত্তিকার গায়েহলুদ। ছবি: সৌরভ হোসাইন
শাহবাগে ফুলের দোকানে ফুলের টোপর পরে মাহির–মৃত্তিকার গায়েহলুদ। ছবি: সৌরভ হোসাইন

আমরা চেয়েছিলাম খুব সাদামাটা একটি বিয়ের আয়োজন করতে। সেটা হবে নিজেদের মতো করে, নিজেদের একান্ত ইচ্ছের মতো করে। এমন একটি আয়োজনের মধ্য দিয়েই আমার আর আহমেদ মাহিরের নতুন জীবন শুরু হয়েছে (পরিবারের আপত্তিতে নয়, পালিয়েও নয়)। সেই বিয়ের মতোই সাধারণ ছিল আমাদের গায়েহলুদের আনুষ্ঠানিকতা। তবে সেই আয়োজনের ছবিই যে এমন আলোচিত হবে, তা কিন্তু আমাদের ভাবনাতেও ছিল না।

যেদিন থেকে আমরা ঠিক করলাম, শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছি, সেদিনই মাহির বলেছিল, আমরা নিজেদের মতো করে গায়েহলুদের আনুষ্ঠানিকতাও করব। আমি জানতে চেয়েছিলাম, সেটা আবার কেমন? ও তখন বলেছিল, বিয়ের আগের দিন কোথাও বসে একজন আরেকজনকে একটুখানি হলুদ ছোঁয়াব!

বিয়ের দিন ঠিক করার চার দিন পর (এটাও হুট করে, কারণ বিষয়টি ছিল পরিকল্পিত, তবে অপরিকল্পনার মধ্যে) আমরা বিয়ে করে ফেললাম। সেদিন মাথাতেও ছিল না কোথায় কীভাবে এই হলুদের কাজ সম্পাদন হবে। তবে ঠিক বিয়ের আগের দিন বেরিয়ে পড়লাম, আমরা নিজেদের মতো গায়েহলুদের দিন উদ্‌যাপন করলাম।

প্রথমে আমরা হাজির হলাম ঢাকার শাহবাগের ফুলের দোকানে। সেখান থেকে ফুল কেনা হলো। ও আমার মাথায় গাঁদা ফুলের টোপর পরিয়ে দিল। এরপর আষাঢ়ের রোদে পুড়ে, গরমে ঘেমে-নেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকলাম আমরা। এরই মধ্যে মাহির আমাদের খুব প্রিয় সৌরভ হোসাইন ভাইকে ডাকল ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাজির হলেন। তাঁর ক্যামেরায় আমাদের স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি উঠতে থাকল! হাঁটতে হাঁটতে সামনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, টিএসসি হয়ে ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় চলে এলাম। তার আগে বাঘ-ভালুকের ভাস্কর্যসহ এখানে-ওখানে ছবি তুললাম।

আমার সখী, মানে আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী টিউশনি শেষ করে রেস্তোরাঁয় চলে এল অবিশ্বাসী চোখে। এসে খুব পুলকিত হয়ে থাকল পুরোটা সময়। এরপর এই দুজনকে নিয়েই আমরা হলুদ মাখামাখি করলাম। মাহির নিজেই হলুদ বেটে নিয়ে এসেছিল সুন্দর একটি মাটির পাত্রে। কিছু সন্দেশ, লাড্ডু আর মাটির খোরায় হলুদবাটা। এই আমাদের গায়েহলুদ। ছোট্ট, সুন্দর নিজেদের মতো একটি গায়েহলুদ।

হলুদের আয়োজনেই রসিকতা করতে মাহির আবার আগের রাতে প্ল্যাকার্ড বানিয়েছিল। প্ল্যাকার্ডের বিষয়বস্তু হালের ট্রল হওয়া কিছু কথা নিয়ে। দুজনই বাংলাদেশের বিখ্যাত দুই জায়গার হওয়ায় এলাকাপ্রীতি দেখিয়েও মজা করেছি আমরা। আমাদের সেই মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় বন্দী করল সঙ্গী দুজন।

সেই ছবিগুলো যেদিন (২২ জুন) ফেসবুকে শেয়ার করলাম, ভাবতেও পারিনি এই সাদামাটা অপ্রচলিত একটি উদ্‌যাপনের কিছু মুহূর্তের ছবি এত সাড়া ফেলবে। পোস্ট করার সময় এ রকম কোনো মনোবাসনাও ছিল না। ছবিগুলো ভালো লাগা থেকেই শেয়ার করা। তাই চটজলদি অনেক মানুষের প্রতিক্রিয়ায় ভড়কেও গিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই যখন নিজেদের ভালো লাগার কথা জানাল, তখন আনন্দিত হয়েছি, পাশাপাশি অবাকও হয়েছি। যাই হোক, সরল উচ্ছলতায় কাটানো একটি দিনের আনন্দ পরোক্ষভাবেই সবার সঙ্গে ভাগাভাগির অভিজ্ঞতাই দিনটিকে অনন্য করেছে।

মৃত্তিকা জাহান ,ঢাকা।