মশা থেকে বাঁচতে

মশা তাড়াতে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের পণ্য। অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
মশা তাড়াতে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের পণ্য। অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

শহরজুড়ে আতঙ্কের বিষয়বস্তু ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর সেরে যাওয়ার পর একসময় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। তবে ডেঙ্গু জ্বরে জটিলতার হারও কম নয়। এ ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি। সঠিক তথ্য জানা যেমন জরুরি, তেমনি মশা যেন আপনার থেকে কয়েক হাত দূরে থাকে, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে এই মুহূর্ত থেকে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, শুধু ডেঙ্গু নয়, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগও ছড়ায় মশার মাধ্যমে। এগুলোর যেকোনো রোগের দিক থেকেই চিন্তা করা হোক, মশা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা মশা প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। বাড়ির ভেতরে বা বাইরে কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।

ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। ফুলের টব, ভাঙা পাত্র বা উঁচু–নিচু জায়গায় জমাট বাঁধা পরিষ্কার পানিই ডেঙ্গু জ্বরের মূল উৎস। ফুলের টবের বাড়তি পানি নিষ্কাশন করে ফেলুন প্রতিদিন। পানিতে জন্মায়—এমন গাছ বাড়িতে বা কর্মস্থলে না রাখাই ভালো। রাখলেও তিন দিন পরপর পানি বদলান। ক্ষেত্রবিশেষে পানিতে কেরোসিন তেল বা অন্য কিছু দিয়ে পৃষ্ঠতলের টান কমিয়ে আনা হয়, যাতে পানিতে ভেসে থাকা মশার লার্ভা ডুবে যায়। নিজের সুরক্ষায় ফুলহাতা পোশাক পরুন, যাতে মশা কামড়ানোর জায়গা কম পায়। ওষুধের দোকান থেকে মশানিরোধী লোশন, স্প্রে, রোল অন বা স্টিকার কিনে নিতে পারেন। 

ভালো মানের ৫০ গ্রাম লোশনের দাম গড়ে ১০০ টাকা পড়বে। ১০০ গ্রামের দাম পড়বে ২০০ টাকার মতো। তবে দাম কমবেশি হতে পারে। ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত সুরক্ষা পাবেন মশানিরোধী লোশন ব্যবহারে। পোশাকে মশানিরোধী স্প্রে করে নিতে পারেন সামান্য পরিমাণে। এতে সুরক্ষা পাচ্ছেন প্রায় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত। মান ও পরিমাণভেদে ১৮০ থেকে ৭০০ টাকা দাম পড়বে। শিশুদের জন্য ফ্যাব্রিক রোল অন বেছে নিতে পারেন। জিনিসটা কিছুটা আতরের বোতলের মতো দেখায়, যার মাথাটা সামান্য রোল করে হালকাভাবে ওষুধ লাগিয়ে নেওয়া যায়। ছোট একটার দাম পড়ে ৯৯ টাকা, একবার ব্যবহারে সুরক্ষা দেয় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এসব ওষুধ লাগানোর পর তাতে পানি পড়লে ওষুধের কার্যকারিতা থাকে না। পোশাকের ওপর লাগানোর ওষুধ একদিক থেকে ভালো। ওষুধ প্রয়োগের পর গোসলের সময় হলেও অসুবিধা নেই। পোশাকটা শুকনো থাকলে গোসলের পর আবার সেই পোশাক পরা যায়। পোশাক শুকনো থাকলে ওষুধের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকে। যেসব ওষুধ পোশাকে প্রয়োগ করার নিয়ম, সেগুলো সরাসরি ত্বকে লাগানো উচিত নয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ ছাড়া শরীরের যেকোনো জায়গায় মশানিরোধী স্টিকার লাগিয়ে নিতে পারেন। ১০টি স্টিকারের বক্সের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এগুলো ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজে আসে। অন্দরের সুরক্ষায় ধূপ কিংবা কয়েল—মশা তাড়ানোর পুরোনো উপায়। আজকাল কম ধোঁয়ার কয়েলও কিনতে পাওয়া যায়। তবে কয়েলের ধোঁয়া কম হোক বা বেশি, কয়েল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি কিন্তু প্রশ্নাতীত নয়। যেকোনো সুস্থ মানুষের ওপরেও দীর্ঘদিনব্যাপী কয়েলের রাসায়নিকের প্রভাব পড়লে তা বড় কোনো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না—এমন নিশ্চয়তা দেওয়া মুশকিল। অ্যারোসল–জাতীয় স্প্রেও ব্যবহার করেন অনেকে। তবে এগুলো ব্যবহারেও আবার কেউ ভোগেন শ্বাসতন্ত্রের কষ্টে। সুবিধা–অসুবিধা বুঝে বেছে নিন অন্দরের সুরক্ষা। ধূপ পাবেন নিউমার্কেটসংলগ্ন মুদি মার্কেটে। দাম ১৬০ টাকা প্রতি কেজি। মাটির পাত্রে নারকেলের ছোবড়া নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে সামান্য পরিমাণ ধূপ ছিটিয়ে দিলেই বেশ ধোঁয়া হয়। এক কেজি ধূপ মোটামুটি ২০ দিন ব্যবহার করা যায়। কম ধোঁয়ার এক প্যাকেট কয়েল পাবেন ৭৫ টাকায়। সাধারণ কয়েলের দাম কম। পরিমাণভেদে অ্যারোসলের একটি বোতলের দাম ১৭৫ থেকে ৪৫০ টাকা। আজকাল তরল ভ্যাপরাইজার পাওয়া যায়। ভ্যাপরাইজার মেশিন ও তরল পদার্থটির সেট পাবেন ১৭৯ থেকে ২২৫ টাকায়। তরল রিফিল পাবেন ১০০ থেকে ১৩৫ টাকায়। মশানিরোধী নেট লাগিয়ে নিতে পারেন দরজা-জানালায়। আরও আছে মশারি। এই বিপদে আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু হলো মশারি। দিনে বা রাতে ছোট-বড় যেকেউ শোয়ার আগে মশারি টাঙিয়ে নিন। মশারির ভেতর ঢোকার সময় আর মশারির নিচ থেকে বেরোনোর সময় সাবধান থাকুন, নইলে মশা ঢুকে পড়বে আপনার মশারির মধ্যেই। নীলক্ষেত এলাকায় কথা বলে জানা গেল, নেটের গুণগত মান ও মশারির আকারভেদে দাম পড়বে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। মশারির মধ্যে বাতাস চলাচল কতটা করতে পারবে, তা বুঝে মশারি বেছে নিলে ঘুমের সময় স্বস্তি পাবেন। তবে টেকসই মশারিতে বাতাস একটু কম ঢুকতে পারে। এ ছাড়া শিশুদের জন্য বিশেষ মশারি পাবেন ১৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।
লেখক: চিকিৎসক