বৃষ্টিদিনের সাজ

বৃষ্টির পানি ছুঁেয় দিলেও চলে যাবে না পানিরোধী মেকআপ। মডেল: স্পর্শিয়া, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, স্থান কৃতজ্ঞতা: স্টেক রিপাবলিক, ছবি: কবির হোসেন
বৃষ্টির পানি ছুঁেয় দিলেও চলে যাবে না পানিরোধী মেকআপ। মডেল: স্পর্শিয়া, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, স্থান কৃতজ্ঞতা: স্টেক রিপাবলিক, ছবি: কবির হোসেন
>মৌসুমের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে জলকণার দল। যখন-তখন ঝরছে ইচ্ছামতো। কিন্তু কাজ থামিয়ে দুদণ্ড উপভোগ করার সুযোগ কম। প্রতিদিন সকাল হলেই কাজে দে দৌড়। ভ্যাপসা গরম তার সঙ্গে বৃষ্টির পানি। বাড়ি থেকে মেকআপ করে বের হব, না গন্তব্যস্থলে গিয়ে করব, এমন ভাবনা থাকে অনেকেরই। উপায় আছে, নাম তার পানিরোধী মেকআপ। কাজ একটাই। ঘাম হোক বা তুমুল বৃষ্টির ছাট, মেকআপ গলবে না, চেহারার নিখুঁত আবরণও টলবে না। 

বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলেন, মেকআপ হতে হয় ত্বকের ধরন বুঝে। পানিরোধী মেকআপের এমন কোনো শর্ত আছে কি? জানার জন্য কথা বলেছিলাম পারসোনার পরিচালক নুজহাত খানের সঙ্গে। জানালেন, অসংখ্য ফাউন্ডেশন, মাসকারা, কাজল, লিপস্টিক বাজারে পাবেন। সবই ওয়াটারপ্রুফ বা পানিরোধী। কিন্তু এই ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশনটা তৈলাক্ত ত্বকের, ওইটা শুষ্ক ত্বকের জন্য, এমন বিভাজন এখনো খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করতে হলে আপনাকে নিজের ত্বকের ধরনটা বুঝতে হবে, সেই অনুযায়ী প্রসাধনী বেছে নিতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা এবং তেলমুক্ত প্রসাধনী বাছবেন। চকচকে ভাব কাটাতে চকচকে ভাব নেই এমন পানিরোধী বেইজ বা ফাউন্ডেশন বেছে নিতে হবে। যদি ত্বক খুব শুষ্ক হয়, তাহলে ক্রিমি ফর্মুলার ডিউয়ি বা সাটিন ফিনিশের পানিরোধী বেইজ মানানসই হবে। নুজহাত যোগ করলেন, যাঁদের ব্রণের সমস্যা আছে, তাঁরা অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞ বা ডারমোটোলজি টেস্টেড লেখা দেখে পানিরোধী মেকআপ সামগ্রী কিনবেন। 

পানিরোধী মেকআপ হতে হবে হালকা
পানিরোধী মেকআপ হতে হবে হালকা

অরা বিউটি লাউঞ্জের স্বত্বাধিকারী এবং রূপ বিশেষজ্ঞ নিশাত আদনান তারীক মেকআপের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অনেক বছর ধরে। তাঁর অভিজ্ঞতা বলে, সাধারণ মেকআপের সঙ্গে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের একটি বড় পার্থক্য তৈরি হয় লোমকূপের কারণে। নিশাত বলেন, ‘অন্যান্য মেকআপে লোমকূপ বন্ধ হয় না, পানিরোধী মেকআপে লোমকূপ বন্ধ করা হয় যেন ঘামে মেকআপ না গলে। এই প্রসাধনীর ধরনটাই এমন, পানি লাগলেও সহজে গলবে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে গরমের সময়ে প্রায়ই পুল পার্টি হয়, কিংবা সমুদ্রসৈকতে বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতার কাটার আয়োজন থাকে। সেই আয়োজনে এই মেকআপই কাজে আসে। আর আমাদের বর্ষা মানেই ঘাম ও পানির ছড়াছড়ি। তাই প্রচণ্ড গরমে বা তুমুল বৃষ্টিতে বাইরে যেতে এ ধরনের মেকআপ সেরা পছন্দ।’

আরেকটি বড় পার্থক্য হলো মেকআপের রং। অন্যান্য মেকআপে শ্যাডো, বেইজে কিংবা লিপস্টিকে রঙের খেলা থাকেই। কিন্তু ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ যত স্বাভাবিক রাখা যায়, ততই ভালো। একটু উষ্ণ বেইজ রংগুলো যেমন বাদামি, পিচ, ট্যান, ভ্যানিলা, বার্লিউড, স্টিমড চেস্টনাট রংগুলো দেখতে স্বাভাবিক লাগে। কথা হলো, রোদ–বর্ষায় মানুষ তো শুধু অফিসেই যায় না, সন্ধ্যায়–রাতে দাওয়াতও থাকে। নিশাত হেসে যোগ করলেন, অবশ্যই। সে ক্ষেত্রে মেকআপের বেইজটা হবে পানিরোধী। সঙ্গে অন্যান্য অনুষঙ্গ থাকবে স্বাভাবিক। বেইজ, শ্যাডো ও ব্লাশঅন হতে পারে সাধারণ পাউডারের। কিন্তু লিপস্টিক, মাসকারা আর কাজলটা হবে পানিরোধী। এই মেকআপের শুরুটা প্রাইমার দিয়ে, আর শেষটা হবে সেটিং স্প্রে দিয়ে। নয়তো মেকআপ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। খেয়াল রাখবেন, হাতে আর গলায়ও যেন মিলিয়ে বেইজের একটু পরশ পড়ে। সবশেষে যোগ করলেন, মেকআপ যেমনই হোক, সব সময় তা ঘুমানোর আগে নিখুঁতভাবে ওঠাতে হবে। ত্বক ভালো রাখতে সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করা ও ময়েশ্চারাইজার করার কোনো বিকল্প নেই। মেকআপ বা প্রসাধনী যতই ভালো হোক, অপরিষ্কার ত্বকে কোনোটাই ভালো দেখাবে না। 

পানিরোধী মেকআপের জন্য যেকোনো ব্র্যান্ড বেছে নেওয়া ঠিক নয়। কারণ, পানিরোধী লেখা থাকলেও সব প্রসাধনী আসলে পানিরোধী নয়। চেষ্টা করুন সেরা ব্র্যান্ডের আসল পণ্য কেনার। দাম একটু বেশি নেবে, কিন্তু শেষ ফোঁটাটি ব্যবহার করেও তৃপ্তি পাবেন। মেকআপ নিখুঁত হবে, ত্বকও ভালো থাকবে। ল’রিয়েল, ম্যাক, ববি ব্রাউন স্ম্যাশবক্স, ল্যাকমে, রেভলন, ডিওর ইত্যাদি ব্র্যান্ডের আসল পানিরোধী মেকআপ প্রসাধনীগুলো ভালো। একটু অভিজাত এলাকাগুলোর শপিং মলে, বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্কে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। ব্র্যান্ড ভেদে দামের ভিন্নতা থাকবেই। যেমন বেইজ মেকআপ ৪৫০ টাকায় পাবেন, আবার ৫ হাজার ৫০০ টাকায়ও পাবেন। লিপস্টিক ২০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০, কাজল ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার, আবার মাসকারা ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়ও কেনা যাবে। তবে এই সময়ে এত দামে সঠিক প্রসাধনী পেতে দোকানের পাশাপাশি তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন অনলাইনভিত্তিক দোকানগুলোও। যাদের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তরুণ বা তরুণীরা বাইরে বসেই আসল পণ্য কিনে দেশি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। কিনছেনও অনেকেই। তাঁদেরই একজন রাসনা। এই মুহূর্তে পিএইচডি করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জানালেন, দেশে থাকতে অনলাইনের মাধ্যমেই ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো কিনতেন। দেশে অনেক সময় দোকানে নকল পণ্যগুলোকে আসল বলে বিক্রি করা হয়। এই শঙ্কা থেকেই অনলাইনভিত্তিক দোকান থেকে কেনাকাটা করতেন। 

বৃষ্টির দিনে সাজে থাকুক স্নিগ্ধতা। সঙ্গে চেহারায় যদি যোগ হয় বৃষ্টির ফোঁটা, ক্ষতি কী তাতে।