ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন দক্ষিণবঙ্গ

স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগান। ছবি: মারিয়া আফরোজ
স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগান। ছবি: মারিয়া আফরোজ

এবারের ঈদের পুরো ছুটিটা হচ্ছে শেষ বর্ষায়। এক দিন ছুটি নিলে ৯ দিনের বেশ দীর্ঘ ছুটি পাওয়া যাবে। চাইলে দেশের ভেতরেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসা যায়। বর্ষাকালে বাংলাদেশের রূপ সত্যি দেখার মতো। প্রকৃতি হয়ে ওঠে সবুজ, নদী-পুকুর-খাল-বিল হয়ে ওঠে জলে ভরপুর। এর ওপর থাকে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি। সে এক অসাধারণ ব্যাপারই বটে। এই বর্ষাকালে ঘুরতে গিয়ে ভালো লাগবে, দক্ষিণবঙ্গের তেমন কিছু জায়গার কথা রইল আপনাদের জন্য।

স্বরূপকাঠির পেয়ারাবাগান
যদি যেতে চান ভরা বর্ষায়, তবে বিশাল বিশাল পেয়ারাবাগানের পাশাপাশি দেখতে পাবেন পেয়ারার এক ভাসমান বাজার। যেটার শুরু স্বরূপকাঠি থেকে, আর শেষ হয় গিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের আটগর কুরিয়ানায়। সারি সারি পেয়ারার বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চলে যায় ছোট ছোট ক্যানেল ডিঙিনৌকা। এসব নৌকায় যাওয়া যায় পেয়ারাবাগানের একদম গভীরে। চাইলেই গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া যায় পেয়ারা, যত ইচ্ছে। তবে সঙ্গে করে নিয়ে আসা যাবে না। নিয়ে আসতে হলে কিনেই আনতে হবে। এখানে যেতে হলে রাতের লঞ্চ জার্নি শেষ করে উঠে পড়তে হবে ভাড়া করা ছোট নৌকায়। যতক্ষণ খুশি পেয়ারাবাগানের চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করে ফিরে আসতে পারেন। চাইলে থেকেও যেতে পারেন কোনো এক পেয়ারাবাগানে।

শাপলার গ্রাম সাঁতলা
সকালে স্বরূপকাঠিতে নেমে নাশতা করে নিতে পারেন যেকোনো হোটেলে বা লঞ্চঘাটে। এরপর সোজা একটি ট্রলার ভাড়া করে চলে যান সাঁতলা, যেখানে রয়েছে মাইলের পর মাইল পানিপথ, বিলজুড়ে ফুটে থাকা গাঢ় গোলাপি শাপলা ফুলের মনোমুগ্ধকর আয়োজন। একটি ডিঙিতে করে ভেসে পড়ুন সাঁতলার শাপলা বিলে, কতক্ষণ ভেসে বেড়াবেন, সে আপনার ইচ্ছা। সাদা আর গোলাপি শাপলার সঙ্গে হঠাৎ এই বিলের কোথাও দেখা যায় বিরল প্রজাতির বেগুনি শাপলা। স্বচ্ছ জলে চোখ নামালে দেখা যায় হরেক রঙের শেওলা, রং বেরঙের মাছ, ইচ্ছে হলে বিলের নরম আর ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিতে পারেন নিজেকে। স্থানীয় রেস্টুরেন্টে চেখে দেখতে পারেন মিষ্টি পানির দারুণ সুস্বাদু মাছ।

দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সবখানেই পাবেন এমন খাল। নৌকা ভাড়া করে যেকোনো খালে ঘুরতে পারেন। ছবি: মারিয়া আফরোজ
দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সবখানেই পাবেন এমন খাল। নৌকা ভাড়া করে যেকোনো খালে ঘুরতে পারেন। ছবি: মারিয়া আফরোজ


গুঠিয়া মসজিদ
আজকাল বরিশাল যাঁরা ভ্রমণে যান, বিশেষ করে বরিশালের বাইরে থেকে, তাঁদের কাছে গুঠিয়া জামে মসজিদ এক বিশেষ আকর্ষণ নিঃসন্দেহে। কেননা প্রায় অজপাড়াগাঁয়ের এত চমৎকার কারুকাজ, এত নান্দনিক আর আধুনিকতার মিশেলে কোনো স্থাপনা খুব সহজে চোখে পড়ে না। বরিশাল শহর থেকে স্বরূপকাঠি পেয়ারা বাজারে যাওয়ার পথে বানারীপাড়ার একটু আগেই পথের পাশে পড়বে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। যেটার জন্য খুব বেশি সময় নষ্ট করতে হবে না। তাই একবার দেখে আসতেই পারেন।

বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হকের বাড়ি
বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। ‘বাংলার বাঘ’ নামে পরিচিত ফজলুল হকের জন্ম, শিক্ষা, বেড়ে ওঠা বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। চাইলে এই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জন্মভিটাও দেখে আসতে পারেন।

জীবনানন্দের বাড়ি
দক্ষিণ বাংলায় যাবেন আর ‘রূপসী বাংলার কবি’ জীবনানন্দের বাড়ি যাবেন না? তাই সময় করে ঘুরে আসতে পারেন বরিশালকে বিখ্যাত করে তোলা জীবনানন্দ দাশের বাড়ির উঠানেও। বরিশাল শহরেই জীবনানন্দের বাড়ি।

শাপলা বিল সাঁতলা। নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারবেন এই বিলে। ছবি: মারিয়া আফরোজ
শাপলা বিল সাঁতলা। নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারবেন এই বিলে। ছবি: মারিয়া আফরোজ


সুন্দরবনের ছোঁয়া
বরিশাল থেকে আর কিছুটা দক্ষিণে গেলেই পেয়ে যাবেন বাংলাদেশের অপার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বনভূমি, সুন্দরী সুন্দরবনের দেখা। যেখানে শুধু বন নয়, চিরাচরিত সবুজ বনভূমির সঙ্গে দেখা মিলতে পারে দুর্লভ বেঙ্গল টাইগার, চঞ্চলা হরিণের পাল, খালের কাদায় কাদায় কুমিরের রোদ পোহানো, নানা রকম বন্য জীবের অভয়ারণ্যের রোমাঞ্চকর স্বাদ। এ সময় গেলে আপনি শুধু করমজল পর্যন্ত যেতে পারবেন।

শাহি বাংলার পুদিনার শহর
দক্ষিণবঙ্গের বাগেরহাটের অন্যতম স্থান শাহি বাংলার পুদিনার শহর নামে। ঘুরে আসতে পারেন এই প্রাচীন শহরটি থেকে। এই শহরটি আজ থেকে প্রায় ছয় শ বছর আগে তৈরি হয়। এখানে ষাটগম্বুজ মসজিদসহ আরও অন্যান্য প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে।

সুন্দরবনের একাংশ। বর্ষায় যেতে পারবেন করমজল পর্যন্ত। ছবি: মোহাম্মদ হোসেইন সবুজ
সুন্দরবনের একাংশ। বর্ষায় যেতে পারবেন করমজল পর্যন্ত। ছবি: মোহাম্মদ হোসেইন সবুজ

ঈদের দীর্ঘ ছুটি কাজে লাগিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দক্ষিণবঙ্গ। দেশের যেকোনো জায়গা থেকে সড়কপথে যেকোনো সময়ই যেতে পারবেন। তবে এই সময় নদীপথে গেলে পাবেন বাড়তি রোমাঞ্চ। ঢাকা থেকে নদীপথে যেতে পারেন স্বরূপকাঠি। সেখান থেকে বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনা হয়ে ফিরতে পারেন নদীপথে বা সড়কপথে।