নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য আদর্শ পুষ্টিকর খাবার, যার প্রতিটি উপাদানই শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এই দুধ সেবনে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেক কমে যায়। ফলে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে পরিপূর্ণভাবে। মায়ের দুধে প্রায় ২০০ উপাদান রয়েছে, যা অন্য কোনো দুধে নেই। মায়ের বুকের দুধ শুধু যে শিশুমৃত্যুর হার কমায়, তা নয় বরং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও তা উপকারী।

২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোকে টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি বলা হয়েছে। কারণ সঠিকভাবে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সব কটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করবে। মায়ের দুধ সর্বত্র দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব, সুস্বাস্থ্য ও জীবনমানের উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত পরিবেশ, বৈষম্য হ্রাস, টেকসই নগরী ও জনগোষ্ঠী, স্বাভাবিক খাদ্য উৎপাদন ও গ্রহণ নিশ্চিতসহ অনেক বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কেন শালদুধ?

শিশুর জন্য শালদুধ অতিপ্রয়োজনীয়। শিশু জন্মের পরপরই মায়ের বুকের যে হলুদ ও আঠালো দুধ নিঃসরণ হয়, সেটিই শালদুধ। জন্মের পর পাঁচ দিন পর্যন্ত এই শালদুধ নিঃসরণ হতে পারে। অজ্ঞতাবশত মায়েরা অনেক সময় শিশুকে তা পান না করিয়ে ফেলে দেন। যা ঠিক নয়।

শালদুধ শিশুর জন্য প্রথম খাবার। এতে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে।

প্রিটার্ম বা সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের চাহিদা পূরণের জন্য এতে থাকে অধিক পরিমাণে ক্যালরি।

বাচ্চার জন্মের পরপর জন্ডিস হওয়ার হাত থেকে এটি রক্ষা করে।

শালদুধের ইমুনোগ্লোবিন শিশুর রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

শালদুধ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে শিশুর প্রথম প্রতিষেধক।

কেন মায়ের বুকের দুধ?

মায়ের দুধ পরিষ্কার, নিরাপদ এবং শিশুর জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রায় নিঃসরণ হয়।

৬ মাস পর্যন্ত নবজাতকের পুষ্টিচাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে থাকে।

মায়ের দুধে এমন উপাদান থাকে, যা শিশুকে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

সহজে হজম হয়।

মা ও শিশুর মধ্যে নিবিড় বন্ধন তৈরি করে।

পুষ্টিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে ও শিশুমৃত্যুহার কমায়।

মায়ের দুধ শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়। 

কেন মা বুকের দুধ খাওয়াবেন?

মায়ের জরায়ু স্বাভাবিক আকারে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

প্রসব–পরবর্তী রক্তপাতের আশঙ্কা কমায়।

প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

মায়ের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এককথায়, মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই।