চশমার আড়ালে

মাঝেমধ্যো চশমার ফ্রেম পাল্টালে চোখের আশপাশের ত্বকের দাগ এড়ানো যায়। মডেল: শুভ, ছবি: নকশা
মাঝেমধ্যো চশমার ফ্রেম পাল্টালে চোখের আশপাশের ত্বকের দাগ এড়ানো যায়। মডেল: শুভ, ছবি: নকশা

ছোটবেলায় খেলার সঙ্গীর চোখে চশমা দেখে ভাবতাম, আমার কেন চশমা পরতে হয় না? কেন আমার চোখ একটু খারাপ হয় না! চশমাটাই তখন আকর্ষণীয় মনে হতো।

তবে এ তো আর খেলনা নয়, শখের গয়নাও নয়। চশমাটা প্রয়োজনের। কেউ কেউ হয়তো আজও ‘শিশুমনে’ চশমার আফসোস রাখেন আর সুন্দর চশমাগুলো দেখেন মন দিয়ে। শখ করে পাওয়ার ছাড়া চশমাও পরেন অনেকে।

তবে নিয়মিত চশমা ব্যবহারকারী জানেন, যা কারও কারও জন্য ‘শখ’, তা তাঁদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এক দাওয়াই। বছরের পর বছর চশমা পরলে বাহ্যিকভাবে চশমার কিছু প্রভাব পড়তে পারে চোখের আশপাশের ত্বকে। একটা ভারী ছাপ পড়তে পারে। চশমা খুললেই তা প্রকট হয়ে ওঠে।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী পরামর্শক ডা. মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, চোখ ভালো রাখতে ছোটবেলা থেকেই সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। মুঠোফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ডিজিটাল যন্ত্র ১২ বছর বয়সের আগে ব্যবহার করা উচিত নয়। এভাবে চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। প্রতিরোধ করাটাই সবচেয়ে ভালো। আর যাঁদের চশমা ব্যবহার করতে হয়, তাঁদের অবশ্যই চোখের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। দীর্ঘ সময় ডিজিটাল পর্দায় তাকিয়ে থাকার অভ্যাস থাকলে তা সবারই কমাতে হবে।’

পানিশূন্যতার কারণে যে কারও চোখের চারপাশে কালচে ছোপ পড়তে পারে, তিনি চশমা ব্যবহার করুন বা না করুন। এমনই জানালেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। এর সঙ্গে যোগ করলেন, দীর্ঘদিন একই নকশার চশমা পরলে চশমাটি ত্বকের যেসব স্থানে স্পর্শ করে থাকে, সেসব স্থানে কিছু দাগ পড়তে পারে। নাকের দুই পাশে, কানের পেছনে এবং চোখের চারপাশের যেসব স্থানে ফ্রেমটা স্পর্শ করে থাকে, সেসব জায়গায় এ রকম দাগ পড়তে দেখা যায়। যাঁদের ক্ষেত্রে মনে হয়, চোখ একটু বসে গেছে, তাঁদের কালচে ছোপ ও দাগগুলো বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

চশমা ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—

চশমাবৃত্তান্ত

চশমা ছাড়া কষ্ট করে দেখার জন্য চোখ কুঁচকে তাকানো ঠিক নয়। এতে চোখের চারপাশের চামড়া কুঁচকে ভাঁজ পড়ে যেতে পারে, বাড়তি কালচে ভাবও আসতে পারে একসময়। চোখের ওপর চাপ না ফেলে বরং চশমা পরেই তাকান। আবার কারও হয়তো শুধু দূরে দেখতে চশমা প্রয়োজন, কারও হয়তো শুধু কাছে দেখতে প্রয়োজন। যাঁরা সব সময় চশমা ব্যবহার করেন না, তাঁদেরও চশমাটা সব সময় সঙ্গে রাখা উচিত, যাতে প্রয়োজনের সময় চোখ কুঁচকে দেখতে না হয়।

সম্ভব হলে ছয় মাসে অন্তত একবার চশমার ফ্রেম পরিবর্তন করে নিন। ভিন্ন ধাঁচের ফ্রেম বেছে নিন। যাতে একই ধাঁচের ফ্রেমের কারণে ক্রমাগত একই জায়গায় চাপ না পড়তে থাকে।

চোখের সাধারণ যত্ন

চোখের কিছু সাধারণ বিষয় সবারই মনে রাখা উচিত।

‍l মুঠোফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারের মতো যন্ত্রপাতি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলো ব্যবহার করার সময় ৩০ মিনিট পর ৫-১০ মিনিটের বিরতি দেওয়া ভালো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা ব্যবহার করলে মাথাব্যথা ও শ্রান্তি হতে পারে। অল্প আলোতে এগুলো ব্যবহার করাও ঠিক নয়।

l চোখ কখনো চুলকালে বা অস্বস্তি লাগলে ঘষা দেওয়া যাবে না। এতে যে কারও চোখের চারপাশেই ছোপ ছোপ দাগ ও ভাঁজ পড়তে পারে। চোখের ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে।

l শাকসবজি খেতে হবে প্রতিদিন।

l ঘুম কম হলে, অসুস্থ থাকলে, মানসিক চাপ বেশি হলে চোখের চারপাশে কালচে ছোপ পড়তে পারে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। চাপমুক্ত থাকুন।

চোখের যত্নে প্যাক

আফরোজা পারভীন জানালেন চোখের যত্নে ঘরোয়া কিছু প্যাকের কথা।

l খোসাসহ আলু ধুয়ে নিয়ে ফ্রিজে ১-২ ঘণ্টা রেখে দিন। গ্রেটারে কুচি করে নিয়ে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। সপ্তাহে ২ দিন এটা ব্যবহার করুন। আলুর বদলে খোসাসহ শসা দিয়েও প্যাক তৈরি করতে পারেন। আবার পুরোনো দাগের ক্ষেত্রে ২টি উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। শুধু আলুও দীর্ঘদিনের দাগে উপকারী।

l কুচি করা এসব সবজি ব্যবহার করতে না চাইলে যেকোনো একটির রস কাজে লাগাতে পারেন একই নিয়মে (এসব সবজির কষ বেশি উপকারে আসে)। চাইলে আবার দুটির রস একসঙ্গেও নেওয়া যায়। চোখের ওপর রস লাগাতে তুলার নরম, গোল প্যাড ব্যবহার করুন।

চোখের সাজ

কালচে ছোপ যাতে কম বোঝা যায়, সে জন্য কেউ কেউ বিবি ক্রিম, সিসি ক্রিম বা নিজের ত্বকের রঙের বেস বা কমপ্যাক্ট পাউডার সরাসরি ব্যবহার করেন এসব অংশে, যা একেবারেই ঠিক নয়।

বরং যে ধরনের কালচে ভাব কিংবা দাগ পড়েছে, প্রথমে সেটির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে গাঢ় রঙের কনসিলার ব্যবহার করতে হবে বলে জানালেন আফরোজা পারভীন। এর ওপরে নিজের ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বেস বা কমপ্যাক্ট পাউডার লাগাতে হবে। রোজকার সাজে কমপ্যাক্ট পাউডার আর বিশেষ সাজে বেস ব্যবহার করতে পারেন। রোজকার সাজও নয়, আবার বিশেষ অনুষ্ঠানও নয়, এমন ক্ষেত্রে বেস বা কমপ্যাক্ট পাউডারের বদলে খানিকটা হালকা শেডের কনসিলার ব্যবহার করা যায়।

মাশকারা ব্যবহার করতে পারেন। হয়তো মিষ্টি গোলাপি রঙের শেড দিলেন। চোখে খুব ভারী ছাপ পড়লে কিংবা চোখ বসে গেছে, এ রকমটা হলে হালকা করে আইলাইনার লাগানো যায়। তবে কাজল না লাগানোই ভালো। আর চোখ ভাসা ভাসা থাকলে যেকোনোটাই বেছে নিতে পারেন, ভারী করে কাজল বা আইলাইনার লাগাতে পারেন।

মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করাও জরুরি। চোখের মেকআপ তুলতে আই মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করুন। তুলার নরম, গোল প্যাডের সাহায্যে এই রিমুভার ব্যবহার করতে হবে, প্যাকেটের তুলা দিয়ে নয়। সুন্দরভাবে মেকআপ পরিষ্কার করে নিয়ে এরপর ধীরে ধীরে চশমা পরুন।

চশমার বিকল্প

চশমার বিকল্প হতে পারে ল্যাসিক। তবে এর কিছু শর্ত আছে বলে জানালেন মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম। যাঁদের খুব বেশি পাওয়ারের চশমা প্রয়োজন হয়, তাঁরাই ল্যাসিকের উপযুক্ত। এ ছাড়া চোখের আরও কিছু অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নিতে হয়, আপনার চোখ ল্যাসিকের উপযুক্ত কি না। বয়সটাও বড় বিষয়। ১৮ বছর বয়সের আগে নয়, আবার ৩০ বছর বয়সের পরেও নয়। ২৫ বছর বয়সের মধ্যে করিয়ে নেওয়া ভালো। আবার ঘন ঘন পাওয়ার বদলাতে হচ্ছে, এ রকম পরিস্থিতিতেও ল্যাসিক করানো যায় না। ন্যূনতম ১ বছর একই পাওয়ার আছে, এ রকম ক্ষেত্রে ল্যাসিক করানোর কথা চিন্তা করা যেতে পারে।

চশমা, নাকি এর বিকল্প; তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে করতে হবে।