একসঙ্গে তিন নতুন আইফোন

নতুন আইফোনের ঘোষণা দিচ্ছেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক
নতুন আইফোনের ঘোষণা দিচ্ছেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক

নতুন তিনটি আইফোনের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল কম্পিউটার। আইফোন ১১, আইফোন ১১ প্রো এবং আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স। ১০ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানে দেখানো আইফোনগুলোতে নকশায় তেমন পরিবর্তন না থাকলেও বলা হয়েছে, প্রসেসিং অর্থাৎ কাজ করার ক্ষমতা অনেক উন্নত হয়েছে। আগের চেয়ে আইফোন এখন বেশি শক্তিশালী, জটিল কাজ সহজে করতে পারবে। আর যেহেতু ২০ সেপ্টেম্বরের আগে ব্যবহারকারীর হাতে আইফোন পৌঁছাচ্ছে না, আপাতত অ্যাপলের কথাতেই বিশ্বাস রাখতে হচ্ছে।

পরিবর্তনের হাওয়া

২০০৭ সাল থেকে জনি আইভের নকশায় তৈরি হয়ে আসছে আইফোন। শুধু বাহ্যিক নয়, ভেতরের যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যারের নকশাও হতো তাঁরই নেতৃত্বে। অ্যাপলের সাবেক এই চিফ ডিজাইন অফিসার সম্প্রতি অ্যাপলের কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজের ডিজাইন স্টুডিও খুলে বসেছেন। অ্যাপল এখন তাঁর অন্যতম গ্রাহক। তবু এবারের আইফোনগুলোতে যেন পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বাহ্যিক নকশায় তেমন না হলেও সামগ্রিক বিবেচনায় তো বটেই।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এখন অনেক রঙে বাজারে এসেছে আইফোন। আইফোন ১১ পাওয়া যাবে ছয়টি রঙে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রো সিরিজের আইফোনেরও চারটি রং দেখানো হয়েছে। ২০১৩ সালে আইফোন ৫সি বাজারে ছাড়া হয়েছিল বেশ কিছু রঙে। এরপর থেকে সে-ই সাদা আর কালোর নানা শেড, আর বড়জোর সোনালি রং দেখে অভ্যস্ত আইফোন ব্যবহারকারীরা। তা ছাড়া অ্যাপল এখন শক্তপোক্ত আর স্থায়িত্বের কথা বলছে জোর দিয়ে। ইউটিউবের ভিডিওতে আইফোন ১১ প্রোর দিকে নানা খাদ্যদ্রব্য ছুড়ে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখতে পারেন। আর প্রো সিরিজের আইফোনগুলো আগের তুলনায় ভারী বলেও উল্লেখ করেছেন একাধিক সংবাদ প্রতিবেদক।

তিন লেন্সের ক্যামেরার স্মার্টফোন যদিও নতুন নয়, তবে আইফোনে তো নতুন। তা ছাড়া, একদম কম না হলেও আগের তুলনায় এবার আকাশচুম্বী দাম হাঁকেনি অ্যাপল। এসবই গ্রাহকের চাওয়ার প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

অ্যাপল বলছে পেশাদারদের জন্য

১০ সেপ্টেম্বর যখন প্রো সিরিজের নতুন দুটি আইফোনের ঘোষণা দিল অ্যাপল, প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা বারবার করে বলেছে, এটি পেশাদার আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারদের জন্য। নতুন ক্যামেরা ও সম্পাদনার সুবিধার জন্যই তাঁদের এই বিবৃতি, তা বলা বাহুল্য। মঞ্চের পটভূমিতে থাকা বিশাল পর্দায় নতুন আইফোনে পেশাদারদের তোলা ছবি ও ভিডিও দেখিয়েছে অ্যাপল

আইফোন ১১ স্মার্টফোনের পেছনে আগের মতোই দুটি লেন্স থাকছে। তবে আইফোন টেনে যেমন মূল লেন্সের সঙ্গে ছিল টেলিফটো লেন্স, ১১-তে থাকছে আলট্রা ওয়াইড লেন্স। ক্যামেরার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলোর পরিমাণ ঠিক করে দেবে। কম আলোতে ভালো ছবি তোলা যাবে এতে। সামনের ক্যামেরা তো রয়েছেই।

আইফোন ১১ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সের পেছনে তিন লেন্স, একটি টেলিফটো ঘরানার। বাকি দুটির একটি ওয়াইড, অপরটি আলট্রা ওয়াইড। টেলিফটো লেন্সের সাহায্যে দূরের ছবি তোলা যাবে। আর আলট্রা ওয়াইড লেন্সে ছবির ফ্রেম বড় হবে। আর প্রতি সেকেন্ডে ফোর-কে রেজল্যুশনের ৬০ ফ্রেমে ভিডিও করা যাবে এতে।

নতুন আইফোনে নতুন তিন

নতুন আইফোনগুলো ওয়াই-ফাই ৬ সমর্থন করবে। আগের সংস্করণের সঙ্গে পার্থক্য হলো, এতে তথ্য আদানপ্রদানের গতি আরও বাড়বে। তবে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের গড় গতি বিবেচনায় নিলে, ব্যবহারকারীর এতে খুব একটা উপকার হবে বলে মনে হয় না।

আইফোনে আলট্রা ওয়াইড ব্যান্ড (ইউডব্লিউবি) চিপ যুক্ত করা হয়েছে। খুব একটা উচ্চবাচ্য না করলেও আপাতত অ্যাপল বলছে, এতে এয়ারড্রপ (দুটি আইফোনের মধ্যে ফাইল স্থানান্তরের সুবিধা) উন্নত হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউডব্লিউবি চিপের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন অনেক সুবিধা দেওয়া যাবে আইফোনে, এয়ারড্রপ কেবল শুরু।

অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে নতুন না হলেও, আইফোন ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্সে এবার যুক্ত হচ্ছে দ্রুত চার্জ করার সুবিধা। কেনার সময়ই বক্সে ১৮ ওয়াট ইউএসবি-সি চার্জার পাবেন ক্রেতারা। নতুন এই চার্জারের সাহায্যে ৩০ মিনিটে ৫০ শতাংশ চার্জ করা যাবে আইফোন ১১ প্রো।

একনজরে নতুন আইফোন

নতুন আইফোনগুলোর উন্নত প্রসেসিং ক্ষমতার পেছনে রয়েছে তৃতীয় প্রজন্মের নিউরাল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এ১৩ বায়োনিক চিপ। স্মার্টফোনগুলো ২০ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টি দেশে পাওয়া যাবে। আর শুরুতেই মিলবে আইওএস ১৩ অপারেটিং সিস্টেম। ৩০ সেপ্টেম্বর আসছে ১৩.১ সংস্করণ। চলুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক নতুন আইফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

আইফোন ১১

৬.১ ইঞ্চি লিকুইড রেটিনা এইচডি পর্দা।

তথ্য ধারণক্ষমতা ৬৪, ১২৮ কিংবা ২৫৬ গিগাবাইট।

পেছনে ১২ মেগাপিক্সেল লেন্সের দুটি (ওয়াইড ও আলট্রা ওয়াইড) ও সামনে একটি ক্যামেরা থাকছে।

পাওয়া যাবে বেগুনি, সবুজ, হলুদ, কালো, সাদা এবং লাল রঙের বিশেষ সংস্করণে।

যুক্তরাষ্ট্রে দাম শুরু হচ্ছে ৬৯৯ ডলার থেকে। আর পুরোনো আইফোন ৮ দিলে অতিরিক্ত লাগবে ৩৯৯ ডলার, কিংবা মাসে ১৬.৬২ ডলার করে ২৪ মাসের কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

সর্বোচ্চ ২ মিটার গভীরে ৩০ মিনিট পর্যন্ত পানি ও ধুলারোধী।

আইফোন ১১ প্রো ও ১১ প্রো ম্যাক্স

আইফোন ১১ প্রোতে ৫.৮ এবং ১১ প্রো ম্যাক্সে ৬.৫ ইঞ্চি ওলেড প্রযুক্তির সুপার রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লে থাকছে।

তথ্য ধারণক্ষমতা ৬৪, ২৫৬ কিংবা ৫১২ গিগাবাইট।

পেছনে ১২ মেগাপিক্সেল লেন্সের তিনটি (ওয়াইড, আলট্রা ওয়াইড ও টেলিফটো) ও সামনে একটি ক্যামেরা থাকছে।

মিডনাইট গ্রিন, স্পেস গ্রে, রুপালি ও সোনালি রঙে বাজারে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ৯৯৯ ডলার থেকে আইফোন ১১ প্রো এবং ১ হাজার ৯৯ ডলার থেকে আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্সের দাম শুরু হবে।

ধুলারোধী এবং সর্বোচ্চ ৪ মিটার গভীরে ৩০ মিনিট পর্যন্ত পানিরোধী।

সূত্র: অ্যাপল ডটকম, সিনেট, ফাস্ট কোম্পানি