পূজায় বাড়ে সোনার কদর

সোনার গয়নায় সাবেকি নকশা চলছে এখন। ছবি: সুমন ইউসুফ, কৃতজ্ঞতা: জড়োয়া হাউস
সোনার গয়নায় সাবেকি নকশা চলছে এখন। ছবি: সুমন ইউসুফ, কৃতজ্ঞতা: জড়োয়া হাউস

সামনেই শারদীয় দুর্গাপূজা; ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। কারণ, কদিন বাদেই মহালয়া; বছরকার এই উৎসবকে আবরণ ও আভরণে আনন্দময় করতে কেনাকাটা চলছে পুরোদমে। জল্পনা এখন সাজ, পোশাক আর গয়নার মেলবন্ধন নিয়ে।

পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য। তবে আধুনিকতাও কাঁধ মিলিয়েছে। তাই অতীত আর বর্তমান চলছে হাত ধরাধরি করে। এ জন্যই তো ফ্যাশন জুয়েলারির পাশাপাশি দিব্যি কল্কে পাচ্ছে সোনা আর রুপার ঐতিহ্যবাহী সাবেকি গয়না।

দুর্গা প্রতিমাকে সাজানো হয় রঙিন শাড়ি ও সাবেকি বাঙালি গয়নায়। মেয়েরাও সেজে ওঠেন সাবেকি সোনার গয়নায়। সোনা শুভ ও সৌভাগ্যের প্রতীক বলে ‍শারদ উৎসবে সোনার কদর একটু বেশি। উপরন্তু এই সময়ে পরম্পরাগত ঐতিহ্যের বিশেষ গয়নার প্রতি বাঙালি নারীর আগ্রহ লক্ষ করা যায়।

তাই তো পূজা এলে মা, নানি–দাদিদের গয়নার বাক্সে নজর পড়ে। সেখানে গচ্ছিত মণিকাঞ্চন প্রাণ পায় উৎসবের দিনগুলোতে। এসব ঐতিহ্যবাহী গয়নার তালিকায় আছে কানপাশা, টিকলি, নথ, ঝুমকো, চিক, সীতাহার, বালা, মানতাসা, রত্নচূড়, আংটি। 

অনেকে আবার ভারী গয়না পরতে না চাইলেও এসব গয়নার আদলে হালকা গয়না বানিয়ে নেন। তাতে করে সাধপূরণের পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয়ও হয়।

আমাদের গয়নার দোকানগুলোতেও দেখা যায় গয়না বানিয়ে নেওয়ার হিড়িক। আবার অনেকে নতুন গয়নাও কেনেন। এসব গয়না কোন পোশাকের সঙ্গে পরা হবে, মেকআপ কেমন হবে, সেটাও মাথায় রাখেন বয়সনির্বিশেষে এই সময়ের নারীরা। তাঁদের অনেকেই পুরোনো আর নতুনের যুগলবন্দী ঘটিয়ে ফেলেন দারুণ মুনশিয়ানায়। আর এখন তো মিক্স আর ম্যাচের জামানা। তবে যাঁরা ভারী গয়না পরতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য যেমন পুরোনোর পসার আছে, তেমনি নতুন গয়নার মনোগ্রাহী সেটও রয়েছে। 

সোনার পাশাপাশি হীরা কিংবা মুক্তার কদরও এই সময়ে যথেষ্ট। ঢাকার জাভেরি গোল্ডের স্বত্বাধিকারী রিপন কুমার বিশ্বাস জানালেন, পূজায় পুরোনো কাজের ঐতিহ্যবাহী গয়নার প্রতি আগ্রহ বরাবরের। এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তির নকশায় তৈরি গয়না এই সময়ে বেশি চলে। পাশাপাশি মালা বা হারে মূর্তির লকেটের চাহিদাও যথেষ্ট রয়েছে।

পূজা উপলক্ষে শাঁখা আর পলার চাহিদাও বাড়ে বলে জানালেন রিপন। সঙ্গে যোগ করলেন, পূজায় তাঁরা সাউথ সি পার্লের সঙ্গে সোনার বিডের সমাহার ঘটিয়ে তৈরি নান্দদিক গয়নাও উপহার দিচ্ছেন। পাশাপাশি হীরা তো আছেই। এ জন্য যেমন ছাড় রয়েছে, তেমনি গয়নার মজুরির ওপরও তাঁরা ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছেন। 

রিপন আরও বললেন, পূজা উপলক্ষে ক্রেতাদের মধ্যে সলিড গোল্ডের গয়নার প্রতি আগ্রহ লক্ষ করা যায়। এসব গয়না তাঁরা এখানে যেমন তৈরি করে থাকেন, তেমনি আমদানি করে আনা হয়। 

অন্যদিকে নিউ জড়োয়া হাউসের তথ্য বলছে, পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এ বছরেও রয়েছে তাদের গয়নার চাহিদা। তবে মাঝারি ওজনের গয়নার প্রতিই আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। পূজার জন্য তাদের নতুন কালেকশনও রয়েছে।

অবশ্য তৈরি গয়না (রেডিমেড) কেনা হোক বা নতুন করে বানিয়ে নেওয়া হোক, একবার পরেই তো আর শেষ হয়ে যায় না। এ জন্য সবাই সেটা মাথায় রেখেই গয়না কেনেন বা বানিয়ে থাকেন।

গয়নার ক্ষেত্রে পেশাও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ, গৃহিণী যেমন আছেন, তেমনি কর্মজীবী নারীর সংখ্যাও কম নয়। সে ক্ষেত্রে একেকজনের কাজের বৈশিষ্ট্য আর পরিসরও আলাদা। ফলে গয়না বাছাইয়ে এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই ঐহিত্যের সঙ্গে আধুনিকতা যেমন অনেকের পছন্দ, অনেকে আবার প্রাচ্য আর প্রতীচ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার সমসাময়িক গয়নায় আগ্রহী। তবে কেবল কিনলে হবে না, বরং মুখের কোন গড়নের সঙ্গে কোন গয়না মানাবে, সেটাও দেখার বিষয়। যাঁদের মুখের গড়ন অনেকটা দেবীর মতো, সাবেকি, তাঁদের জন্য ভারী গয়নার বিকল্প নেই। আবার মুখটা ছোট ত্রিকোনাকার হলে ভারী গয়না কিন্তু চলবে না, বরং ছোট পাথর বসানো গয়না বা আধুনিক নকশার গয়নাই মানানসই হবে। 

 কেবল তো শাড়িই পরা হবে না উৎসবের দিনগুলোতে; বরং এথনিক আর ওয়েস্টার্নও থাকবে। আবার সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচও চলবে। তাই ওয়েস্টার্নের সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে যেতে পারে সোনার চোকার। আমাদের সাবেকিয়ানায় এটাই তো সেই চিক। এমন অনেক কিছুই আছে। তবে অনেক দিন ধরে উৎসবের গয়নায় জাঙ্ক জুয়েলারির পাশাপাশি রুপার কদর বেড়েছে যথেষ্ট। রুপার রুপালি রঙের পাশাপাশি অক্সিডাইজডও যথেষ্ট চলছে। গথিক, পাহাড়ি আর ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের রুপার সবকিছুই আছে। রুপার সঙ্গে টারকোয়েজ, রুবি, এমারেল্ড, পার্লের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে আকর্ষক ডিজাইনের গয়না বাজার মাতাচ্ছে। এসব গয়নায় আবার নানা ধরনের মোটিফ যুক্ত করা হচ্ছে। এমনকি পৌরাণিক চরিত্রও।