চোখ সাজাতে সতর্কতা

চোখ সাজানোর সময় প্রসাধনী ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা জরুরি। মডেল: ওশিন ও নাজ, ছবি: নকশা
চোখ সাজানোর সময় প্রসাধনী ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা জরুরি। মডেল: ওশিন ও নাজ, ছবি: নকশা

চোখ সাজাতে গিয়ে হতে পারে বিপত্তি। সামান্য অসতর্কতায় হয়ে যেতে পারে বড় কোনো ক্ষতি। প্রতীকী অর্থে বলতে গেলে চোখ সাজানোর সময় চোখ খোলা রেখেই সাজানো উচিত। সাধারণত সব প্রসাধনেই কমবেশি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যে কারণে চোখে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বা প্রদাহ হতে পারে। চোখ সাজাতে গিয়ে চোখের কনজাংটিভা নামক স্তরে এমন সমস্যা হতে পারে সহজেই। সৌন্দর্য বাড়ানো ছাড়া চোখের অন্য কোনো কাজেও আসে না প্রসাধনসামগ্রীগুলো। তাই যখন প্রয়োজন, ব্যবহার করুন তখনই। আর তা স্বল্প সময়ের জন্যই। 

চোখের মেকআপে ঝুঁকি আছে বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্যের জন্য চোখে নানা প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করা হলেও সেটা চোখের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ভালো নয়। বৈজ্ঞানিক দিক থেকে চিন্তা করলে প্রসাধনসামগ্রীর ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো সহজেই বোঝা যায়।

সাজের একটি উপকরণে চোখের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে অন্যভাবে সেটির ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে বলে মন্তব্য করলেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। বললেন, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এমন কোনো উপকরণ ব্যবহার না করাই ভালো, যেটা ক্ষতি করতে পারে চোখের।

কনট্যাক্ট লেন্স যদি পরতেই হয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে অনেক বিষয়ে। মডেল: মৌসুম
কনট্যাক্ট লেন্স যদি পরতেই হয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে অনেক বিষয়ে। মডেল: মৌসুম

যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন চোখ সাজানোর সময় কোন কোন বিষয়ে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। 

আইশ্যাডো 
পাউডার আইশ্যাডো দেওয়ার ১০ মিনিট আগে প্রাইমার লাগাতে হবে। প্রাইমার না থাকলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখের সাজে একটি তরল ভিত বা বেজ তৈরি করা প্রয়োজন। গুঁড়া পাউডার বসবে সহজে। এতে চোখে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে। ফোম ব্রাশ, আইশ্যাডো ব্রাশ বা হাত দিয়ে ব্লেন্ড করে আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। যেভাবেই আইশ্যাডো দিন না কেন, আগে আইশ্যাডোর বাড়তি গুঁড়া ফেলে দিন। নইলে এগুলো চোখে চলে যেতে পারে। হাত দিয়েই হোক বা ব্রাশ দিয়ে—আইশ্যাডো অবশ্যই ভালোভাবে বসিয়ে দিতে হবে।

মডেল: মোহিনী
মডেল: মোহিনী

কাজল, লাইনার আর মাসকারা
আইলাইনার চোখে দেওয়ার আগেই আঙুলের ত্বকে দিয়ে দেখুন। চুলকানি বা লালচে ভাব হলে সেটি আর চোখে দেবেন না। অনিয়মিত ব্যবহারের ফলে আইলাইনার বা মাসকারা পানি ছেড়ে দিতে পারে। এখানে জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে। এগুলো চোখে দেওয়ার আগে আঙুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করে দেখুন, ঠিকভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কি না। আঙুলে সঠিকভাবে না শুকালে তা চোখে দেবেন না।
কারও চোখ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হলে এক টানে আইলাইনার দেওয়া একটু কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। চোখ থেকে পানি পড়ে, বারবার মুছতে গিয়েও সমস্যা হয়। আইলাইনার দেওয়ার সময় কোনার দিক থেকে শুরু না করাই ভালো। মাঝ বরাবর শুরু করে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যান। এরপর আবার গোড়ার প্রান্ত থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত।

আইলাইনারের সূক্ষ্ম তুলি ব্যবহার করুন। আইলাইনার কখনোই চোখের একবারে কাছের লাইনে (যেখানে কাজল দেওয়া হয়) দিতে নেই। চোখের ভেতরেও যেন লাইনার না লাগে। কাজল বা রঙিন পেনসিল ব্যবহারের সময় অবশ্যই খুব সতর্ক থাকতে হয়। চোখের নিচের অংশে কাজল বা রঙিন পেনসিল ব্যবহার করতে চাইলে আঙুল দিয়ে একটু টেনে নিয়ে সাবধানে ব্যবহার করুন। শেষ হয়ে গেলে সাবধানে ছেড়ে দিন। খুব ভালোমতো আকার করে নিন দেওয়ার আগেই। কাজল বা পেনসিলে যেন কাঠের গুঁড়া রয়ে না যায়।

মাসকারা খুব দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহার করবেন না। সাবধানে ধীরে ধীরে ব্যবহার করুন, যাতে চোখে লেগে না যায়। ধাপে ধাপে লাগাতে হবে মাসকারা। একটি ধাপ শেষ হওয়ার পর শুকিয়ে গেলে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

মডেল: জুঁই
মডেল: জুঁই

কনট্যাক্ট লেন্স
চোখে কনট্যাক্ট লেন্স পরা ক্ষতিকরই বটে। এর ওপর মানহীন লেন্স কিনে বিপদের ভয় তো আছেই। তারপরও যদি নিতান্ত বাধ্য হয়ে কনট্যাক্ট লেন্স পরতেই হয়, তাহলে খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়।

ভালো ব্র্যান্ডের আসল পণ্য কিনুন। যথানিয়মে সংরক্ষণ করুন। লেন্স পরার আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সাবধানে নিয়ম মেনে লেন্স লাগান। লেন্স খোলার সময়ও নিয়ম অনুসারে খুলুন। লেন্স একটানা পরে থাকা যাবে না। দু–তিন ঘণ্টা পর লেন্স খুলে নির্দিষ্ট দ্রবণে ভিজিয়ে রাখুন। প্রতিবারই পরিষ্কার করে লেন্স হোল্ডারে লেন্স রাখুন। তবে দ্রবণের মান ও মেয়াদ দেখে নিন। আবার লেন্স পরতে চাইলে পছন্দমতো একই ধরনের অন্য লেন্স বা সম্পূর্ণ অন্য ধরনের কোনো লেন্স পরুন। একেবারেই আর কোনো উপায় না পেলে পরিষ্কার করা লেন্স জোড়া আবার পরতে পারেন, তবে এই লেন্স জোড়া তখনই পুনর্ব্যবহার না করা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কোনো লেন্স পরলেই যদি জ্বালাপোড়া, চুলকানি বা চোখ থেকে পানি পড়ার মতো সমস্যা শুরু হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা খুলে ফেলতে হবে। কিছুক্ষণ পর ভালো হয়ে যাবে, একটু অপেক্ষা করি—এমনটা ভেবে অপেক্ষা করা যাবে না।

আরও কিছু কথা
● চোখে কৃত্রিম পাপড়ি ব্যবহার না করাই ভালো, নড়াচড়ায় চোখে খোঁচা লাগতে পারে। এমনকি দৃষ্টিহীনতার মতো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। প্রাকৃতিক বড় পাপড়ির নড়াচড়াতেও খোঁচা লাগার ভয় থাকে।
● চোখের মেকআপ তোলার সময়ও চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে সাবধানে তুলতে হবে, যাতে কোনো কিছু চোখে না ঢোকে। গোড়ার প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্তের দিকে নরম তুলার সাহায্যে টেনে হালকাভাবে মুছতে হবে।
● চোখে মেকআপ নিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া চলবে না। ঘুমের ঘোরে ঘষা লেগে চোখের ভেতরে মেকআপ চলে যেতে পারে।
● চোখে যেকোনো সামগ্রী প্রয়োগ করার আগে মেয়াদ দেখে নিন। ভালো ব্র্যান্ডের মানসম্পন্ন প্রসাধন ব্যবহার করুন। চোখ পর্যন্ত প্রসাধন নেওয়ার আগে ভালোমতো দেখে নিন, তাতে চোখের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু আছে কি না। প্রয়োজনে হাতে প্রয়োগ করে দেখুন। কোনো সামগ্রীতে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে তা অবশ্যই পরিহার করুন।
● চোখে কোনো সমস্যা যদি হয়েই যায়, সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার পানি দিন। বারবার পানি দেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে পরামর্শ নিন।