ওরাও কাজ করবে

কাপড় ধোয়ার মতো বাড়ির অন্যান্য কােজও সন্তানকে যুক্ত করুন। মডেল: শম্পা ও অহনা, ছবি: কবির হোসেন
কাপড় ধোয়ার মতো বাড়ির অন্যান্য কােজও সন্তানকে যুক্ত করুন। মডেল: শম্পা ও অহনা, ছবি: কবির হোসেন

‘ও তো ছোট, ও আর কী কাজ করবে’—এই বলে বাবা–মায়েরা তাঁদের শিশু–কিশোরদের কোনো কাজেই দায়িত্ব দিতে চান না। একটি শিশু কিন্তু ভবিষ্যতে নিজে একটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হবে, তার নিজস্ব সংসার থাকবে। প্রাতিষ্ঠানিক কাজের দায়িত্বও তাকে নিতে হবে। তাই শিশুবেলা থেকেই তাকে পরিবারের ছোটখাটো দায়িত্ব দেওয়ার অভ্যাস করাতে হবে।

শিশু কেন কাজ করবে

কেবল ভবিষ্যতের জন্য নয়, নিজেকে পরিবারের একজন হিসেবে ভাবতে শেখার জন্যও পারিবারিক কাজে তাকে নিয়োজিত করা জরুরি। পরিবারটি যে তার নিজের, এটি বোঝানোর জন্য তাকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ছোটখাটো কাজ করতে করতে তার হাতের কাজের দক্ষতা তৈরি হবে, যাকে বলা হয় মোটর স্কিল। পরিবারের কাজগুলো করার মধ্য দিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বিশেষ করে ভাইবোনদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। মনে করার কারণ নেই যে বাসার কাজগুলো করলে তার পড়ালেখার ক্ষতি হবে, বরং এই কাজগুলোতে নিয়োজিত থাকার কারণে তার সামাজিক দক্ষতা গড়ে উঠবে, যা তার সমস্যা সমাধানের কৌশল শিখতে সাহায্য করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বাড়াবে।

শিশু কী ধরনের কাজ করবে

বাসার প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজ তাকে করতে হবে। যেমন ঘর গোছানো, ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া, ওয়াশিং মেশিন চালানো, বড়দের তত্ত্বাবধানে রান্না করা, খাবার পরিবেশন, ছোট ভাই বা বোনের যত্ন, বাগানের যত্ন, প্রতি রাতে দরজা বন্ধ করা, প্রয়োজনে মশারি টানানো ইত্যাদি কাজে তারা অংশ নিতে পারে। মনে রাখতে হবে যে এই ছোটখাটো কাজগুলো তাকে হঠাৎ হঠাৎ করে করালে চলবে না—নিয়মিত তাকে এই কাজগুলো করার অভ্যাস করাতে হবে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে যেসব কাজে ঝুঁকি রয়েছে, যেমন আগুন বা বিদ্যুতের ব্যবহার করা হবে, সেসব কাজে একদম ছোট শিশুদের সম্পৃক্ত করা যাবে না এবং অন্য শিশুরা অবশ্যই বাসার বড় কারও তত্ত্বাবধানে সেটি করবে।

মা–বাবা কী করবেন

l আপনার সন্তানকে তার বয়স অনুযায়ী পরিবারের কাজ নির্দিষ্ট করে দিন।

l কাজগুলো নিয়মিত করতে থাকলে তার প্রশংসা করুন, কাজ করা নিয়ে কোনো ব্যঙ্গ করবেন না।

l প্রথম প্রথম কাজ করতে গেলে তার ভুলত্রুটি হতে পারে, সেগুলো বুঝিয়ে বলুন এবং কাজ শিখিয়ে দিন।

l বড় শিশুদের তার ছোট ভাইবোনের যত্ন নিতে শেখান।

l মা–বাবা নিজেরাও শিশুদের সঙ্গে কাজ করুন।

l কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদ করবেন না, অর্থাৎ ‘এটি ছেলেদের কাজ’, ‘এটি মেয়েদের কাজ’—এভাবে ভাগ করে দেবেন না।

l সে যে ঘরের কাজে অংশ নিচ্ছে, সেটি আপনার অন্যান্য স্বজন, বন্ধু, এমনকি সন্তানের বন্ধুদের কাছেও গর্ব করে বলুন।

l ঘরের কাজ করার একটি রুটিন তৈরি করে প্রয়োজনে ঘরে টাঙিয়ে রাখুন।

l পারিবারিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাসার শিশুদের মতামত গ্রহণ করুন। ওদের ওপর সব মতামত চাপিয়ে দেবেন না।

l সন্তানকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে মা–বাবা সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিন।

আহমেদ হেলাল : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।