যত্নে থাকুক গরদ-কাতান

যত্ন নিলে কাতানের শাড়ি ভালো থাকবে অনেক দিন। মডেল: হিমি, ছবি: নকশা
যত্ন নিলে কাতানের শাড়ি ভালো থাকবে অনেক দিন। মডেল: হিমি, ছবি: নকশা

বাঙালি নারীর শাড়িতেই যত প্রেম। এখনো উৎসবে, পার্বণে, বিয়েবাড়ির আয়োজনে সিল্ক, কাতান বা গরদের শাড়ি পরার দিকে আগ্রহ থাকে বেশি। বিশেষ দিনে গায়ে জড়ানো এই শাড়ি হয়তো দু-একবার পরার পর অনেক দিন তোলা থাকে আলমারিতে। বেশ কয়েক বছর পর হয়তো দেখা গেল কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে গেছে বা রংটাই হয়ে গেছে বিবর্ণ। মনটা তখন কেমন খারাপ হয়, সেটা সবাই জানে। অথচ একটু যত্ন নিলেই কয়েক প্রজন্ম পরতে পারে এসব ঐতিহ্যবাহী শাড়ি।

মডেল: হিমি, ছবি: নকশা
মডেল: হিমি, ছবি: নকশা

সিল্ক ও কাতানের যত্নের খুঁটিনাটি খুঁজতেই কথা বলেছিলাম গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেসমিন মাসুমার সঙ্গে। তিনি জানান, কাতান বা বেনারসি ও গরদ শাড়ি বাড়িতে পরিষ্কার না করাই ভালো। এর বদলে ড্রাই ক্লিনিং পদ্ধতির মাধ্যমে পরিষ্কার করে—এমন কোনো দোকানে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া স্প্রের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যায়, নয়তো নরম ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে নিলেও শাড়ি থাকবে ঝকঝকে। এসব শাড়ি কড়া রোদে না দেওয়াই ভালো।

আলমারিতে কাতান শাড়ি ঝুলিয়ে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া পাতলা টিস্যু ব্যাগ বা কাগজের ব্যাগে রাখলে শাড়ি ভালো থাকবে। হাতের কাছে এসব না পাওয়া গেলে কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখলেও শাড়ি ভালো থাকবে, আবার জায়গাও কম লাগবে। আবার সিল্ক শাড়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে না রাখাই ভালো। তা ছাড়া অন্য শাড়ির মধ্যে ভাঁজ করে না রেখে কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখলে ভালো থাকবে অনেক দিন। তবে দীর্ঘদিন একই ভাঁজে না রেখে যেকোনো শাড়িই কিছুদিন পর ভাঁজ পাল্টে রাখা ভালো। এতে শাড়ি ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে যাওয়ার ভয় থাকে না। শাড়ির ভাঁজে ন্যাপথলিন না রেখে যে তাকে শাড়ি রাখা হবে, সেই তাকের কোণে ছোট ডালসহ নিমপাতা রাখলে পোকায় কাটার আশঙ্কা থাকে না। দারুচিনি ও এলাচ রাখলেও ছড়াবে সুগন্ধ, পোকামাকড় কাছে ঘেঁষবে না।

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বেশি, এ কারণে কাপড়ে খুব সহজেই ছত্রাক পড়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে মাঝেমধ্যে শাড়ি বাইরে মেলে দিয়ে ভাঁজ পাল্টে নিলে এতে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে আর ভাঁজে ভাঁজে কেটে যাওয়ার ভয়ও কমে যাবে।

ক্যালকাটা ড্রাই ক্লিনার্সের স্বত্বাধিকারী সাব্বির আহমেদ বলেন, সুতির শাড়ি ছাড়া যেকোনো শাড়ির জন্য ড্রাই ওয়াশ করা ভালো। সাবান, ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পুর পানিতে ঘষে শাড়ি পরিষ্কার করলে তাতে কাপড়ের সুতা ঢিলা হয়ে যেতে পারে, এমনকি নিখুঁত নকশাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। তবে ড্রাই ওয়াশে সেই ভয় একেবারেই থাকে না। তাঁর প্রতিষ্ঠানের সব কটি শাখায় দক্ষ কর্মীরা ড্রাই ওয়াশ করে থাকেন বলে জানালেন।

অনেক শাড়ির দোকানেও আলাদা করে ড্রাই ওয়াশ করার ব্যবস্থা থাকে। সিল্ক সেন্টারের বিক্রয়কর্মী মো. বাবর আলী জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে শাড়ি পরিষ্কার এবং গ্যাস পলিশের কাজ করা হয়। গ্যাস পলিশ করার ফলে পুরোনো শাড়ি নতুনের মতো চকচকে ও টেকসই হয়।

শাড়ি শুধু পরিষ্কার করতে ২০০ টাকা এবং গ্যাস পলিশে খরচ পড়বে ৩০০ টাকা। এদিকে রং বিবর্ণ হয়ে যাওয়া কাতান শাড়িকে পুনরায় রং করে পরার উপযোগী করে দিচ্ছে সানরাইজ প্লাজার রাবাব জামদানি। হালকা হয়ে যাওয়া যেকোনো কাতান শাড়িতে গাঢ় রং করার কাজটি এখানে করা হয় যত্ন নিয়ে। তবে নীল, বেগুনি, মেরুন, লাল ও কালো রং অন্য রঙের শাড়িতে খুব ভালোভাবে বসে, এ কারণে দেখতেও নিখুঁত লাগে। রং করাতে খরচ নির্ভর করে শাড়ির দাম ও মানের ওপর। তবে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে আরও বেশিও লাগতে পারে।

ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে আলমারিতে যে শাড়ি সাজিয়ে রাখছেন বছরের পর বছর, তার জন্য একটু বাড়তি যত্ন তো নেওয়াই যায়। দক্ষ হাতে সেই কাজ করে দেবেন আপনার শহরের দোকানিরা। অনেক বছর পরেও হয়তো শাড়িটি বের করে আপনার মনে পড়ে যাবে ছোট্ট একটি স্মৃতি। উৎসবের ভিড়ে যে শাড়িতে আপনাকে দেখে কেউ বলেছিল, ‘তুমি সুন্দর’ অথবা ‘ভালোবাসি’।