কাঁথা বুনে সোফা

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

‘যাবো না তোমার বাড়ি, কেননা দরজা, দ্বাররক্ষী,
সিঁড়ি, সোফা, কোমল গালিচা জানাবে না অভ্যর্থনা
আমাকে সেখানে তুমিহীনতায়।’
কবি শামসুর রাহমানের কবিতায় সোফা। আক্ষরিক অর্থে সোফা কাউকে অভ্যর্থনা জানাতে না পারলেও অতিথির অভ্যর্থনায় সোফার ভূমিকা অনেকখানি। কাঠ, রড আয়রন—নানা উপকরণের সোফা এসেছে বাঙালির ঘরে। তবে এই সোফা হতে পারে নকশিকাঁথার কাপড়ের তৈরিও। আসবাব হিসেবে এই উপকরণ দিয়ে তৈরি সোফা অনেকটাই নতুন চলতি ধারা। দেখতে সুন্দর। তবে সাধারণত যে ধরনের আসবাব ঘরে রাখা হয়, সেগুলোর সঙ্গে তা মানানসই না-ও হতে পারে। সামঞ্জস্যহীন আসবাব যতই সুন্দর হোক, তা আবার অন্দরের সৌন্দর্য নষ্টও করে দিতে পারে। এ ধরনের সোফার আশপাশের জিনিসগুলো হতে হবে একেবারেই দেশীয়। এ হলো বিশেষজ্ঞ মতামত।

কী করে বানায় কাপড়ের সোফা?
‘যাত্রা’র দোকান ব্যবস্থাপক এমিলি বড়ুয়া জানালেন, গ্রামের নারীরা চলনসই পুরোনো সুতি শাড়ি সেলাই করে বিশেষ ধরনের ভারী কাপড় তৈরি করেন। সেই কাপড় কিনে আনা হয়। তা দিয়েই ‘যাত্রা’র ডিজাইনারদের নকশায় তৈরি হয় সোফা। প্রয়োজনমতো স্থানে ফোম বসিয়ে নেওয়া হয়। যোগ করা হয় সেগুন কাঠের লম্বাটে বা গোল পায়া। কাপড়ের সেলাইয়ে রাখা হয় বৈচিত্র্য। ৪-৫ বছর হলো এ ধরনের সোফা এনেছে যাত্রা। রিসাইকেল কাপড়ের সোফার জন্য ক্রেতাদের মধ্যে বেশ ভালোই চাহিদা রয়েছে বলে জানালেন তিনি। মেরুন, কমলা, ফিরোজা ও সবুজ রঙের একক ও ডবল সোফা করেছেন তাঁরা। কিছু সোফার ফোম আলাদা করা যায় সাধারণ সোফার মতো (কাভারও খোলা যায়)। আবার কিছু সোফার ফোম একেবারে আটকানো থাকে। কোনোটির সঙ্গে কুশন আছে, কোনোটির জন্য আবার আলাদা করে কুশন কাভার কিনে নেওয়া যায়।

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

মানাবে কি আমার ঘরে?
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরীন চৌধুরী জানালেন, এ ধরনের সোফা দেশীয় ধাঁচের অন্দরে বেশি মানানসই। ঘরে যদি খুব ভারী, পশমি বা জাঁকজমকপূর্ণ আসবাব থাকে, তাহলে সেই ঘরে এ ধরনের সোফা ভালো দেখায় না। বরং বাঁশ, বেত বা কাঠের সোফা ও অন্যান্য আসবাব থাকলে সেখানে এমন সোফা মানায়। বসার ঘর, পারিবারিক ঘর কিংবা শোবারঘরে রাখা যায় এমন সোফা। ঘরের পর্দা, শোপিস, ঝাড়বাতি—সবই যেন মানানসই হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ক্রিস্টালের নয়, মাটির শোপিস রাখুন সোফার সঙ্গে মিলিয়ে। পর্দার রঙেও সামঞ্জস্য রাখুন। যেহেতু নকশিকাঁথার সোফায় অনেক রং থাকে, পর্দা হতে পারে স্নিগ্ধ সাদা। শতরঞ্জি রাখুন ঘরে।

নকশিকাঁথার সৌন্দর্য সোফা বা চেয়ারে নিয়ে আসবে ভিন্নতা। কৃতজ্ঞতা: যাত্রা, ছবি: নকশা
নকশিকাঁথার সৌন্দর্য সোফা বা চেয়ারে নিয়ে আসবে ভিন্নতা। কৃতজ্ঞতা: যাত্রা, ছবি: নকশা

জেনে নিন
‘যাত্রা’য় রিসাইকেল কাপড় দিয়ে তৈরি ডিভান, খাটিয়া ও ল্যাম্পশেড পাবেন। চাইলে ফরমাশ দিয়ে টেবিলও বানিয়ে নিতে পারেন তাদের কাছ থেকে। ৪৩ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে পাবেন এ ধরনের সোফা। আকার, উপকরণের গুণগত মান ও নকশার ভিত্তিতে এই সীমার মধ্যে দাম কমবেশি হয়। এ ধরনের কাপড়ের আলাদা কুশন কাভার (কুশনসহ) পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়। চাইলে পছন্দমতো সোফাও ফরমাশ দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। আবার নিজেরা এমন কাপড় তৈরি করিয়ে কারিগরকে দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন এ ধরনের সোফা। পরিচ্ছন্ন রাখতে ডাস্টার (পালকের) ব্যবহার করুন।
নকশী কাঁথায় আঁকিল যে সাজু
অনেক নকশী ফুল,
প্রথমে যেদিন রূপারে সে দেখে,
সে খুশির সমতুল।
আঁকিল তাদের বিয়ের বাসর,
আঁকিল রূপার বাড়ি,
এমন সময় বাহিরে কে দেখে
আসিতেছে তাড়াতাড়ি।
কবি জসীমউদ্দীন নক্সীকাঁথার মাঠে নকশিকাঁথার রূপ তুলে ধরেছেন বারবার। জানিয়ে দিয়েছেন এই সংস্কৃতি আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে মিলেমিশে আছে। নকশিকাঁথার কাপড়ের পোশাক বা কাঁথার ব্যবহার অনেককাল আগে থেকেই আমাদের দেশে। অন্দরসজ্জায় এর ব্যবহার নতুনত্ব ও ভিন্নতা নিয়ে আসবে, সন্দেহ নেই। সঙ্গে যোগ করবে অভিজাত ভাবও।