অসুস্থতার পর বিশ্রাম

তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি। মডেল: পূজা। ছবি: সুমন ইউসুফ
তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি। মডেল: পূজা। ছবি: সুমন ইউসুফ

যেকোনো অসুস্থায় শরীরে বিপাক বেড়ে যায়। বেশি বেশি ক্যালরি খরচ হয়। অপরদিকে ক্ষুধামন্দা হয়, খেতে পারে কম। সবকিছু মিলে শরীর দুর্বল লাগে, এমনকি ওজনও কমে যেতে পারে। অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে শরীরকে দিনরাত অগণিত ক্রিয়া-বিক্রিয়া করতে হয়। ফলে শরীরকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এই কাজ করতে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে অনেক গুণ ক্যালরি দরকার হয়। প্রচুর তরলেরও দরকার পড়ে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, শরীর যেন সঠিকভাবে অল্প সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে, সে জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন। এর পাশাপাশি খেতে হবে ভালো, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। যোগ করতে হবে সঠিক ব্যায়াম। তাহলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব। কোনো অবস্থাতেই খাবার বন্ধ করা বা দীর্ঘ সময় পর খাবার খাওয়া যাবে না। এতে রোগ নিরাময় দীর্ঘ হবে।

খাবার কেমন হবে?

খাবার হতে হবে সহজপাচ্য। একেক রোগীর দ্রুত ভালো হতে বা এড়িয়ে চলতে একেক ধরনের উপাদান বেশি লাগে। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, যাতে ক্যালরির পাশাপাশি ভিটামিন মিনারেলও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে। খাবারে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ফলমূল, শাকসবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেলের রান্না এড়িয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে খাবারের তালিকা ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে।

ঘুম হতে হবে পর্যাপ্ত

ঘুমের সঙ্গে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের দরকার পড়ে কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় আরও বেশি ঘুমের প্রয়োজন। যেমন মেলাটোনিন হরমোন ঘুমের সময় বেশি তৈরি হয়। ধারণা করা হয়, এই হরমোন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডিএনএ এর মেরামত করে, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তাই যেকোনো সময়ই পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি।

সঠিক ব্যায়াম বা হাঁটাচলা

অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো সঠিকভাবে নড়াচড়া, ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করাও স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আবার একেক অসুস্থতায় একেক ধরনের ব্যায়াম বা হাঁটাচলা থাকে। মাংসপেশি, হাড়, টেন্ডন, লিগামেন্ট সমস্যায় খুবই জরুরি বিষয়। এমন সমস্যায় শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিলেই হবে না, সঙ্গে লাগবে সঠিক ব্যায়াম। এককথায় সঠিক ব্যায়ামে রোগ দ্রুত সারে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

যা যা মনে রাখতে হবে

ব্যথা কমাতে হবে। যেকোনো অসুস্থতায় ব্যথা একটি সাধারণ ঘটনা। এটি রোগমুক্তিকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ব্যথায় ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমতে পারে। রোগ নিরাময় জটিল হতে পারে। তাই ব্যথাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্রয়োজনে যথাযথ ওষুধ সেবন করতে হবে।

মনকে প্রশান্ত রাখতে হবে। প্রশান্ত মন রোগ নিরাময় ত্বরান্বিত করে, শরীরকে শিথিল করে। স্ট্রেস হরমোন তৈরি কমায়, প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এই সময় যদি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকে, তাহলে রোগীর টেনশন অনেকাংশে কমে যায়, মন প্রশান্ত হয়, স্ট্রেস হরমোন কম তৈরি হয়। ফলে রোগ নিরাময় দ্রুত হয়।

লেখক: চিকিৎসক