যেসব বদভ্যাস এড়ানো চাই প্রতিদিনের জীবনে

মানুষ অভ্যাসের দাস। তবে আমরা যদি বদভ্যাসকে জীবনে প্রশ্রয় দিই, তাহলে আমাদের সফলতার পথে পড়বে বাধা।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষধনী ওয়ারেন বাফেটের একটি উক্তি প্রাসঙ্গিক, ‘বদভ্যাসগুলো খুব ধীরে ধীরে আক্রমণ করে আর আলক্ষ্যে ঘটায় ক্ষতি। বদভ্যাস ভাঙার জন্য চাই আত্মনিয়ন্ত্রণ।’

কোন কোন বদভ্যাস তাড়াবেন প্রতিদিনের জীবন থেকে

শয্যায় ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার

অনেকেই এই অভ্যাসে যে ঘুম ও সৃজনশীলতা নষ্ট হয়, তা বোঝেন না। হ্রস্বতরঙ্গের নীল আলো মেজাজ, এনার্জি লেভেল আর ঘুমের মানের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। সকালবেলা সূর্যের আলোতে থাকে প্রচুর নীল আলো। চোখ যখন সরাসরি এর মুখোমুখি হয়, এই নীল আলো নিদ্রা উদ্রেককারী হরমোন মেলাটনিন উৎপাদন রোধ করে আর তাই সজাগ–সচেতন করে শরীরকে। বিকেলের দিকে সূর্যের আলোতে কম থাকে নীল, শরীরে তখন মেলাটনিন উৎপাদন হয় আর তাই ঘুম ঘুম ভাব আসে।

আমাদের বেশির ভাগ সন্ধ্যারাতের প্রিয় যন্ত্র—ল্যাপটপ, ট্যাব আর মোবাইল ফোন—বিচ্ছুরণ করে হ্রস্বতরঙ্গের নীল আলো, সে আলো উজ্জ্বল হয়ে সরাসরি পড়ে মুখমণ্ডলে। এতে মেলাটনিন উৎপাদন ব্যাহত হয় আর তাই ঘুমিয়ে পড়া বাধা পায়, ঘুমের ভাব এলেও ঘুম ভালো হয় না। রাতে ভালো ঘুম না হলে অনেক বিপদ। তাই রাতের আহারের পর এসব যন্ত্রপাতি এড়ানোই ভালো।

ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি বিরাট কৌতূহলে

ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে অন্যান্য ওয়েবসাইট ঘোরাঘুরি (নেট সার্ফিং) অনেক সময় আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়, সারা দিন তা করা হয় বিরাট কৌতূহলে আর আগ্রহে। এতে উৎপাদশীলতা ও সৃজনশীলতা নষ্ট হয়।

আলাপ–আলোচনার সময় ফোনে খুদে বার্তা দেখা

আলাপ করছেন কারও সঙ্গে, সে সময় ফোনে খুদে বার্তা দেখা (টেক্সট মেসেজ চেক করা) বা ফোনের দিকে বারবার দ্রুত নজর দেওয়া বদভ্যাস। আলাপ করলে মনোযোগ দিয়ে তা করা ভালো। তখন আলাপ হবে উপভোগ্য ও ফলপ্রসূ।

নানা রকম বিজ্ঞপ্তি ব্যববহার করা

নানা রকম বিজ্ঞপ্তি উৎপাদনশীলতার পথে বাধা। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবার ফোন আর ই–মেইলে বিজ্ঞপ্তি, বিজ্ঞাপন বা নোটিফিকেশন দেখা উৎপাদনশীলতা কমায়। বরং নজরে পড়লেই না দেখে নির্ধারিত সময়ে ইনবক্স চেক করুন।

যখন না বলা উচিত, তখন হ্যাঁ বলা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, না বলাতে যে কষ্ট, এতে স্ট্রেস, বিষণ্নতার অভিজ্ঞতা, এগুলো আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষয় করে। অনেকের জন্য ‘না’ বলা নিজের নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জও বটে। ‘না’ একটি শক্তিশালী শব্দ, যা ব্যবহার করতে ভয় পাবেন কেন? যখন না বলার ক্ষণ আসে তখন যাঁরা বুদ্ধিমান, তাঁরা ‘আমি মনে করি না আমি পারব’, ‘আমি নিশ্চিত না’—এ রকম শব্দসমষ্টি ব্যবহার করবেন না। নতুন কোনো অঙ্গীকার বা দায়বদ্ধতাকে ‘না’ বলার মধ্যে বর্তমান কমিটমেন্টকে সফলভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ আসে। না বলা হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায়, এটি স্মরণে রাখা উচিত।

পরিহারযোগ্য আর মন্দ লোকদের নিয়ে ভাবা।

মাঝেমধ্যে দেখা যায়, নেতিবাচক মানুষ কাছে আসতে চায়। এদের নিয়ে ভাবনা বাদ দিন।

সভায় একসঙ্গে অনেক কিছু

কোনো কিছুতে অর্ধেক মনোযোগ দেওয়া ঠিক না। বিশেষ করে সভাস্থলে সভা চলার সময়। সভাটি যদি পুরো মনোযোগ আকর্ষণের মতো না হয়, তাহলে এতে না যাওয়াই সমীচীন। সভাটি যদি মনোযোগ দেওয়ার মতো হয়, তাহলে এ থেকে পুরোটা নেওয়া উচিত। সভার সময় অন্যান্য কাজ সমানভাবে চালালে মনে হবে আপনি অন্যদের চেয়ে নিজে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

খোশগল্প করা

যাঁরা খোশগল্পবাজ, তাঁরা অন্যের দুর্ভাগ্য আর মন্দ যেকোনোও কিছুতে আনন্দ পান। অন্যের ব্যক্তিগত বা পেশাগত বিষয় নিয়ে চর্চা–নিন্দা প্রথমে বেশ আনন্দ দেয় অনেককে, তবে কালক্রমে তা ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। অন্যকে আহত করার মধ্যে আনন্দ নেই। পরনিন্দা–পরচর্যা সত্যি বড় বদভ্যাস।

সফল হবেন না জানা পর্যন্ত কাজে ব্রতী না হওয়া

বেশির ভাগ লেখক অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করেন তাঁদের গল্পের বা উপন্যাসের প্লট বা চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে, লেখেন পাতার পর পাতা। হয়তো বইয়ে এগুলোর স্থানই হলো না। তাঁরা এগুলো করেন কারণ তাঁরা জানেন, চিন্তা, ধারণা বিকশিত হতে সময় লাগে। অনেক সময় আমাদের মনে হয় আমাদের ধারণা সঠিক নয়, আর যা তৈরি করব তা ভালো হবে না, সে জন্য চুপসে যাই। কিন্তু শুরু না করলে বা ধারণা বিকাশ লাভ করার সুযোগ না দিলে কিছু বড় সৃষ্টি হবে কি করে?

অন্য লোকের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা

যখন নিজের সুখ, আনন্দ আর তুষ্টির অনুভব অন্যের সঙ্গে তুলনা করে লাভ করতে হয়, তখন বোঝা গেল আপনার নিজের সুখ নিয়ন্ত্রণের চাবি নিজের কাছে নেই। নিজে করেছেন এমন কিছু নিজের যখন ভালো লাগে, তাহলে সে ব্যাপারে অন্যের মতামত নেবেন না। মানুষের সমালোচনা সব সময় সমাদর করা চলে না। নিজের তৃপ্তি বড় কথা। অন্যে যা মনে করুক বা ভাবুক, নিজের মূল্য নিজের ভেতর থেকে আসে। বিশেষ সময়ে লোকে যাই বলুক, এটি ঠিক তারা যা বলে, আপনি অত ভালো বা অত মন্দ নন।

এসব বদভ্যাস ভাঙার জন্য চাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চর্চা। এভাবেই প্রতিষ্ঠা পাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ আর বদভ্যাস হবে দূর।