এখন সময় দেয়াল রাঙানোর

দেয়ালের রং মনে আনে শান্তি ও স্বস্তির আমেজ। ছবি: নকশা
দেয়ালের রং মনে আনে শান্তি ও স্বস্তির আমেজ। ছবি: নকশা

দেয়ালে একটু রঙের ছোঁয়া বদলে দেয় পুরো ঘরের আবহ। অন্দরসাজে তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে রঙের ব্যবহার। দেয়াল রাঙানোর বিশেষ কিছু নিয়ম তো থাকেই। তবে বছরের কোন সময়টা দেয়াল রাঙাবেন, সেই বিষয়টিও এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যেমন স্থাপত্য রীতি অনুযায়ী নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি—এই চার মাসকে দেয়াল রং করার আদর্শ সময় ধরা হয়। কারণ, এই সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে এবং বৃষ্টি একেবারে হয় না বললেই চলে। সে জন্য দেয়াল থাকে শুষ্ক আর আর্দ্রতামুক্ত। তাই দেয়াল রং করানোর জন্য উপযোগী সময় এখন থেকেই শুরু।

রং নির্বাচন

আমাদের আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে রঙের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আবার একজন মানুষের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার ওপরেও রঙের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এই তথ্য অনেকেরই অজানা যে লাল, হলুদ, কমলার মতো উষ্ণ রংগুলো আমাদের ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের দেয়াল ও ইন্টেরিয়রে এ ধরনের রঙের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। তাই ডায়েটের কথা ভাবলে খাবার ঘরে এমন রং করার আগে ভেবে নেবেন। নীল, সবুজ—এমন শীতল রঙের উপস্থিতি মনকে উজ্জীবিত ও সতেজ করে। তাই পড়ার ঘর, বসার ঘর, ফ্যামিলি লিভিংয়ে এসব রঙের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। আবার গোলাপি, বেগুনি—এসব রং মনে আনে শান্তি ও স্বস্তির আমেজ। তাই শোবার ঘরে এই রং বেশি ব্যবহার হয়। ঘরের দেয়ালের জন্য যদি গাঢ় রং নির্বাচন করেন, উজ্জ্বল আলোর ব্যবহার করা ভালো। আর আলো যদি কম থাকে, তাহলে হালকা রং নির্বাচন করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। রং নির্বাচনের আগে সব দিক চিন্তা করে যথেষ্ট সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সঠিক রং বেছে নিন।

রাঙানোর ধরন

ঘর রাঙাতে প্রথমেই একটি প্রাথমিক রং বেছে নিতে পারেন। সাদা বা সাদার কাছাকাছি হালকা কোনো রং, যেমন ধূসর, বাদামি, ছাইয়ের হালকা কোনো শেড। এই রংগুলোর সঙ্গে অন্দরের সবকিছু সহজেই মানিয়ে যায় এবং এই রংগুলোর আবেদনও কখনো পুরোনো হয় না। বাড়ির মূল রং বেছে নেওয়ার পর প্রতিটি ঘরের তিনটি দেয়াল সেই রঙের করে একটু ভিন্নতা আনতে চতুর্থ দেয়ালটিকে ভিন্ন একটি রঙে রাঙাতে পারেন। তার জন্য মূল রঙের সঙ্গে মিল রেখে তার কয়েক শেড গাঢ় একটি রং নির্বাচন করে ঘরটিকে মনোক্রমিকভাবে রাঙাতে পারেন। আবার সম্পূর্ণ বিপরীত একটি রং নির্বাচন করে প্রতিটি ঘরের একটি দেয়ালকে হাইলাইট করতে পারেন। এতে প্রতিটি ঘর পাবে একটি ভিন্নমাত্রা।

আপনি যদি চান আরও নান্দনিক হোক আপনার ঘর, তাহলে করতে পারেন দেয়ালচিত্র। ছোটবেলায় যদি আঁকাআঁকির অভ্যাস থাকে, তাহলে রংতুলি হাতে নেওয়ার এখনই সময়। দেয়ালে একটি বেজ কালার করে নিয়ে তার ওপরে নিজেই এঁকে নিতে পারেন সুন্দর সুন্দর নকশা। তাহলে ঘরে আসা অতিথি আপনার সাজানো বাসা দেখে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আপনার গুণেও বিমুগ্ধ হবেন। যদি মনে করেন নিজে করবেন না, তাহলে সাহায্য নিতে পারেন অভিজ্ঞ কোনো শিল্পীর। অনেক শিল্পী আছেন, যাঁরা দেয়ালে ছবি এঁকে থাকেন। আপনার হয়ে তিনি দায়িত্ব নেবেন আপনার দেয়ালকে একটি শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করার। এ ছাড়া বিভিন্ন রঙের শোরুমগুলোতেও দেয়াল রাঙানোর নানা রকম নকশা ও টেক্সচারের ক্যাটালগ থাকে। সেখান থেকে আপনি পছন্দ করে বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

সতর্কতা

ঘর রাঙানোর খেলায় মেতে ওঠার আগে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। পুরো বাড়ি রং করানোর আগে ঘরের দেয়ালের অংশবিশেষ পরীক্ষামূলকভাবে রং করে দেখুন। অনেক সময় নমুনা বই দেখে আমরা যে রং পছন্দ করি, দেয়ালে লাগানোর পর দেখা যায় তা আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না। তাই প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া ভালো। আবার ঘরের আলোর বিন্যাসের কারণেও রঙের তারতম্য হয়ে থাকে। দেখা যায়, বাসায় প্রাকৃতিক আলো এলে রং এক রকম দেখায়, আবার কৃত্রিম আলোয় রং ভিন্ন রকম লাগে। আবার উষ্ণ আলোয়, শীতল আলোয় রং বদলে যায়। তাই এসব বিষয় মাথায় রাখাও জরুরি।

লেখক: স্থপতি