ডিমের দেশি-বিদেশি স্বাদ

শীত আসি আসি করছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছে সেদ্ধ ডিমের দোকান। গরম-গরম সেদ্ধ ডিম খাওয়ার মজাই তো আলাদা। এ সময়ে যদি বাড়িতেই তৈরি হয় ডিমের নানা পদ, তাহলে আর কথাই নেই। ডিম দিয়ে তৈরি খাবারের রেসিপি দিয়েছেন ফারাহ্‌ সুবর্ণা

ভাপা ডিমের কোরমা

উপকরণ: ডিম ৬টি, পেঁয়াজ মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা আধা চা–চামচ, রসুনবাটা আধা চা–চামচ, শুকনো মরিচগুঁড়া সামান্য, ধনেগুঁড়া আধা চা–চামচ, কাজুবাদাম ৫টি, কিশমিশ ১০ থেকে ১২টি, আস্ত কাঁচা মরিচ ৫ বা ৬টি তেজপাতা ও আস্ত গরমমসলা প্রতিটি ২টি করে, গরমমসলার গুঁড়া এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ, তরল দুধ ১ কাপ, চিনি ১ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো, ঘি ৩ টেবিল চামচ।

প্রণালি: একটা পাত্রে ডিমগুলো ভেঙে নিয়ে তাতে পেঁয়াজকুচি, স্বাদমতো মরিচগুঁড়া আর লবণ দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। তারপর একটা বাটির মধ্যে হালকা করে তেল মাখিয়ে ফেটানো ডিমের মিশ্রণ ঢেলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলায় গরম পানির পাত্রের ওপর বসিয়ে ১৫ থেকে ১৬ মিনিট ভাপিয়ে নিতে হবে, ঠিক যে পদ্ধতিতে আমরা পুডিং বানাই। ডিম ভাপানো হয়ে গেলে তা ঠান্ডা করে নিয়ে ছুরির সাহায্যে বাটি থেকে বের করে পছন্দসই আকারে কেটে নিতে হবে। তরল দুধের সঙ্গে কাজু আর ৫–৬টি কিশমিশ দিয়ে ব্লেন্ড করে রাখতে হবে। এবার একটা প্যানে ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা ও আস্ত গরমমসলার ফোড়নে বাটা পেঁয়াজ ভেজে আদা ও রসুনবাটা, ধনেগুঁড়া, লবণ দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। এবার দুধ, বাদামের মিশ্রণ দিয়ে আবারও কষিয়ে তেল উঠে এলে ভাপানো ডিমের টুকরোগুলো দিয়ে ২ বা ৩ মিনিট কষিয়ে নিতে হবে। এরপর অল্প গরম পানি, আস্ত কাঁচা মরিচ, গরমমসলার গুঁড়া, আস্ত কিশমিশ আর চিনি দিয়ে রান্না করতে হবে। পানি শুকিয়ে ঘন গ্রেভি হলে তাতে ১ চামচ পেঁয়াজ বেরেস্তা মিশিয়ে পরিবেশন পাত্রে নামিয়ে ওপরে বাকি বেরেস্তা ছড়িয়ে দিয়ে পোলাও বা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

এগ মাঞ্চুরিয়ান

উপকরণ: ডিম ৪টি, কর্নফ্লাওয়ার দেড় কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ১টি (বড় আকারের। ৪ ফালি করে পরতে পরতে খুলে নিতে হবে), ক্যাপসিকাম ১টি (কিউব করে কাটা), আদা জুলিয়ান কাটা ১ চা–চামচ, রসুনকুচি ১ চা–চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া স্বাদমতো, বীজ ছাড়ানো কাঁচা মরিচ ফালি ৩–৪টি, চিনি স্বাদমতো, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি: একটা পাত্রে ডিম ভেঙে নিয়ে তাতে স্বাদমতো লবণ আর গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে ফেটিয়ে নিন। এবার টিফিন বক্সে তেল মেখে এই ফেটানো ডিম ঢেলে পুডিং বানানোর পদ্ধতিতে ঢাকনা দিয়ে বাটি ঢেকে তা গরম পানির পাত্রে বসিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ১৫ থেকে ১৬ মিনিট ভাপিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে বাটি থেকে বের করে কিউব আকারে কেটে নিন। একটা বাটিতে এক টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার সরিয়ে রেখে বাকি কর্নফ্লাওয়ার, ময়দা, গোলমরিচগুঁড়া, লবণ আর অল্প পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে ভাপানো ডিমের টুকরোগুলো ডুবিয়ে নিন। এবার গরম তেলে সোনালি করে ভেজে উঠিয়ে নিতে হবে। এবার অন্য একটা প্যানে ১ টেবিল চামচ তেল গরম করে তাতে আদা ও রসুনকুচি দিয়ে হালকা ভেজে নিন। এবার পেঁয়াজ আর ক্যাপসিকাম দিয়ে মিনিট পাঁচেক ভেজে সয়াসস, টমেটো সস, চিনি, লবণ আর কাঁচা মরিচ ফালি দিয়ে ফুটে উঠলেই ভেজে রাখা ভাপানো ডিমগুলো দিয়ে নেড়েচেড়ে দিন। এক কাপ পানিতে কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে তা ডিমের তরকারিতে ঢেলে দিয়ে একদম মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে নিন। পোলাও বা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে। চাইলে ওপরে পেঁয়াজপাতার কুচিও ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ডিমের পাকোড়া

উপকরণ: সেদ্ধ ডিম ৪টি, কর্নফ্লাওয়ার এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, ময়দা এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচের কুচি স্বাদমতো, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা–চামচ, গরমমসলার গুঁড়া এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ, লবণ স্বাদমতো, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: সেদ্ধ ডিম হাত দিয়ে হালকা করে চটকে নিয়ে তাতে তেল বাদে বাকি সব উপকরণ অল্প পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার পেঁয়াজির মিশ্রণের মতো তৈরি করে গরম ডুবো তেলে বড়া বা পেঁয়াজির আকারে ভেজে সোনালি রং হলে তেল থেকে তুলে নিয়ে পছন্দসই চাটনি বা সসের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

ডিমের ঝাল

উপকরণ: ডিম ৪টি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ, মরিচগুঁড়া স্বাদমতো, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, রসুনবাটা আধা চা–চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা–চামচের তিন ভাগের এক ভাগ, কাঁচা মরিচ ৫টি, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ।

প্রণালি: ডিম সেদ্ধ করে গরম পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। একদম ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালোমতো খোসা ছাড়িয়ে ডিমের খোসার সাহায্যেই ডিমের গা হালকা চিরে দিতে হবে, যাতে রান্নার সময় তেল মসলা ও লবণ ভালোভাবে ভেতরে ঢোকে। এরপর ডিমের গায়ে অল্প লবণ ও হলুদ মাখিয়ে প্যানে তেল গরম করে হালকা ভেজে রাখতে হবে। সেই তেলেই পেঁয়াজকুচি সোনালি করে ভেজে গরমমসলা আর কাঁচা মরিচ বাদে বাকি মসলা দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। ভেজে রাখা ডিম দিয়ে ২ বা ৩ মিনিট কষিয়ে অল্প গরম পানি আর আস্ত কাঁচা মরিচ (ঝাল পছন্দ করলে চেরা কাঁচা মরিচও দেওয়া যেতে পারে) দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। পানি শুকিয়ে গা মাখা ঝোল হয়ে এলে গরমমসলা গুঁড়া মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। ধনেপাতা পছন্দ হলে গরমমসলার গুঁড়া বাদ দিয়ে ধনেপাতাকুঁচি ছড়িয়ে দিয়েও পরিবেশন করতে পারেন।

ডিমের শাকশুকা

উপকরণ: ডিম ৪টি, ছোট কিউব করে কাটা পেঁয়াজ আধা কাপ, ছোট কিউব করে কাটা লাল ক্যাপসিকাম আধা কাপ, রসুনবাটা আধা চা–চামচ, কিউব করে কাটা পাকা টমেটো ২৫০ গ্রাম, টমেটোবাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা–চামচ (স্বাদমতো দিলে ভালো), জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, প্যাপরিকা পাউডার ১ চা–চামচ, চিনি ১ চা–চামচ (স্বাদমতো দিলে ভালো), লবণ স্বাদমতো, তেল ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি সাজানোর জন্য।

প্রণালি: প্যানে তেল গরম করে প্রথমে পেঁয়াজ দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নিতে হবে। পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে তাতে লাল ক্যাপসিকাম দিয়ে ভাজতে হবে। ক্যাপসিকাম নরম হয়ে কাটা টমেটো ও টমেটো পেস্ট দিয়ে রান্না করতে হবে। প্রয়োজনে অল্প পানি দিয়ে টমেটো নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। এরপর এতে মরিচ ও জিরাগুঁড়া, প্যাপরিকা পাউডার, রসুনবাটা, চিনি ও লবণ দিয়ে কম আঁচে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঢেকে রান্না করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর একটু চেখে দেখতে হবে ঝাল, লবণ, মিষ্টি ঠিক আছে কি না। তারপর এই থকথকে টমেটোর মিশ্রণের মাঝে ৪টি গর্ত করে এক একটা গর্তে এক একটা ডিম ভেঙে (ঠিক যেভাবে ডিম পোচ করা হয়, সেভাবে) দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মিনিট ১৫ রান্না করতে হবে। তরকারি হয়ে এলে ওপরে ধনেপাতাকুচি ছড়িয়ে গরম-গরম পরিবেশন করতে হবে।