স্বপ্ন পূরণ করেছে নকশা

সিতারা ফিরদৌস
সিতারা ফিরদৌস

প্রথম আলো এ দেশের অগণিত পাঠকের আস্থা, বিশ্বাস, নির্ভরতার দৈনিক পত্রিকার নাম—দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে যারা সত্য সংবাদ আর সুস্থ বিনোদন দিয়ে প্রতিটি পাঠকের মন জয় করে আসছে। সেই প্রথম আলোর সঙ্গে শুরু থেকে আজ অবধি থাকতে পেরেই আমি অত্যন্ত গর্বিত।

শুরু যেভাবে
১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাস। আমার বড় ছেলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রদায়কের কাজ করত। একদিন এসে বলল, মা প্রথম আলো নামের নতুন একটি পত্রিকা আসছে। সেখানে প্রতি মঙ্গলবার ‘নকশা’ নামে রঙিন একটা লাইফস্টাইল ফিচার পাতা বের হবে। তুমি কি তোমার রেসিপিগুলো দেবে? তাহলে সুমি আপার (সুমনা শারমীন, বর্তমানে ফিচার সম্পাদক) সঙ্গে কথা বলব। ছেলেকে বললাম কথা বলতে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল প্রথম আলোর সঙ্গে আমার পথচলা। নকশায় প্রথম নিজের ছাপানো রেসিপি দেখে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

পথ চলতে চলতে
এর কিছুদিন পর, একদিন পল্লব মোহাইমেন আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, আপা, নকশাতে একটি বিশেষ সংখ্যা করব, যেখানে রেসিপির সঙ্গে আপনার ছবি আর ফোন নম্বর দিতে চাই। যেদিন সেই নকশা বের হলো, সেদিনের কথা আজও বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। সকালে ঘুম ভাঙল পাঠকের ফোনে। সারা দিন নাওয়াখাওয়া ভুলে ব্যস্ত ছিলাম ফোন ধরার জন্য। ওই দিনই প্রথম বুঝতে পারলাম এত মানুষ প্রথম আলো পড়েন।

শুধু সেদিনই নয়, পাঠকের ফোন ধরতে হয়েছে তার পরের কয়েক দিনও। ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এত মানুষ আমার রেসিপি পড়ছে, দেখছে। আমার রান্নার স্কুলে শুধু ধানমন্ডি বা এর আশপাশের অনেক পরিচিতরাই ক্লাস করতে আসতেন। নকশায় যখন থেকে রেসিপি ছাপা শুরু হলো, তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আমার কাছে রান্নার ক্লাস করতে আসতেন। সত্যি বলতে প্রথম আলো বাড়িয়ে দিয়েছে আমার আত্মবিশ্বাস, চলার পথকে করে দিয়েছে সুদৃঢ়–স্বনির্ভর।

অসংখ্য প্রাপ্তি, স্বপ্ন পূরণ
একদিন সুমি আপা আমাকে বললেন, প্রাণ–প্রথম আলো আচার প্রতিযোগিতায় আপনাকে বিচারক হিসেবে মনোনয়ন করেছি। শুনে আমি তো কিছুক্ষণ বাক্‌রুদ্ধ। আরও একবার এমন আনন্দে অভিভূত হলাম, যেদিন নিজের প্রথম বই বের হলো। নানান স্বাদের রান্না নামের এই বইটির পুরোটা কৃতিত্ব প্রথম আলোকেই দিতে চাই। এভাবে একেক করে এই দৈনিক পত্রিকাটি আমাকে পুরো উজাড় করে দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে।

লেখক: রান্নাবিদ
নকশার পাঠকদের জন্য সিতারা ফিরদৌসের তিনটি রেসিপি

মাছ–সবজি পাই
মাছ–সবজি পাই


মাছ–সবজি পাই
উপকরণ: ময়দা দেড় কাপ, ডিম ১টি, মাখন ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পানি সামান্য।

পুরের উপকরণ: কম কাঁটা যুক্ত বড় মাছের পিঠের অংশের কিমা ১ কাপ, ঢাকাই পনির আধা কাপ, মোজারেলা চিজ আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুনকুচি ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচের কুচি ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, পেঁপেকুচি ২ টেবিল চামচ, গাজরকুচি ১ টেবিল চামচ, ফুলকপির কুচি ১ টেবিল চামচ, ক্যাপসিকামের কুচি ১ টেবিল চামচ, পাপরিকা ১ চা-চামচ, অরিগানো ১ চা-চামচ, জলপাই তেল ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ২ টেবিল চামচ, টমেটো সস ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি: মাছ সেদ্ধ করে নিন ১ টেবিল চামচ ফিশ সস ও অল্প পানি দিয়ে। পানি টেনে এলে জলপাই তেল গরম করে রসুন, পেঁয়াজ ভেজে, চিজ, অরিগানো, পাপরিকা বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে মাঝারি জ্বালে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন। পাইয়ের ওপর প্রথমে ঢাকাই পনির, তারপর মাছ, ওপরে মোজারেলা চিজ দিয়ে ওভেনে বেক করে নিন।

পাই বানানোর প্রণালি: ময়দা, মাখন, লবণ একসঙ্গে মিলিয়ে নিন। ডিম ও পরিমাণমতো পানি দিয়ে মেখে ১ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। পুরু করে রুটি বেলে পাইয়ের ডাইসে বসিয়ে নিন। ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে ৩০-৩৫ মিনিট বেক করে মাছ ও পনিরের পুর ভরে নিন। আবার ৭-৮ মিনিট ওভেনে বেক করে গরম-গরম পরিবেশন করুন মাছ–সবজি পাই।

আমের প্যানা কোটা
আমের প্যানা কোটা


আমের প্যানা কোটা
উপকরণ: দুধ দেড় কাপ, ফ্রেশ ক্রিম ১ কাপ, আগার আগার পাউডার ২ চা-চামচ, চিনি আধা কাপ, পাকা আম কিউব করে কাটা দেড় কাপ, আমের এসেন্স ১ চা-চামচ।

প্রণালি: দুধ, চিনি, আগার আগার পাউডার একসঙ্গে চুলায় দিয়ে ফুটে উঠলে চুলা থেকে নামিয়ে ক্রিম ও এসেন্স মিলিয়ে নিন। গ্লাস কাত করে অর্ধেক মিশ্রিত দুধ গ্লাসে ঢেলে ঠান্ডা করে নিন। কিছুটা জমে গেলে বাকি মিশ্রিত দুধের সঙ্গে ১ কাপ আম ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে গ্লাসে ঢেলে দিয়ে আবার ঠান্ডা করে নিন। আমের কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন ইতালির এই মিষ্টান্ন।

মুরগির তিলোত্তমা
মুরগির তিলোত্তমা


মুরগির তিলোত্তমা
উপকরণ: ২ কেজি ওজনের মুরগি ২টি, বারবিকিউ সস ৩ টেবিল চামচ, সয়া সস ২ টেবিল চামচ, টমেটো সস ৪ টেবিল চামচ, মরিচ ভাজা গুঁড়া ২ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, তন্দুরি মসলা ১ চা-চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, আদাগুঁড়া ২ চা-চামচ, রসুনগুঁড়া ১ চা-চামচ, তিল ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি: চামড়াসহ মুরগি পরিষ্কার করে দুই ভাগ করে নিতে পারেন। চাইলে পছন্দ অনুযায়ী টুকরা করে নিতে পারেন। ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ছুরি দিয়ে মুরগির গায়ে দাগ কেটে নিতে হবে। বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মিলিয়ে মুরগির গায়ে ভালো করে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। মসলা থেকে মুরগি তুলে নিন। চারকল বা গ্রিলে লাল না হওয়া পর্যন্ত গ্রিল করতে হবে, মাঝেমধ্যে উল্টিয়ে দিন। মুরগির গায়ে মসলা ব্রাশ করতে হবে। গ্রিল থেকে নামিয়ে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস ও ২ টেবিল চামচ টমেটো সস, ২ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ ঘি, ২ টেবিল চামচ তিল একসঙ্গে মিলিয়ে চুলায় দিয়ে নাড়াচাড়া করে মুরগির গায়ে লাগিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করুন মুরগির তিলোত্তমা।