নকশা পড়ে ইসরাতের স্বপ্ন জয়

নারীদের সৌন্দর্যচর্চার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইসরাত জাহান। ছবি: নকশা
নারীদের সৌন্দর্যচর্চার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইসরাত জাহান। ছবি: নকশা

আশির দশকে ৮০০ টাকা মাসিক বেতনে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি করেছেন ইসরাত জাহান। পরে বিমা কোম্পানির হিসাব বিভাগেও টানা কয়েক বছর চাকরি করেছেন। ১৯৯৯ সালে রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানার একটি রেসিপি ছাপা হয় প্রথম আলোর মঙ্গলবারের ক্রোড়পত্র নকশায়। সেটি পড়ে ঢাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ইসরাত। রান্না শেখার আগ্রহের কথা জানান। রাহিমা বগুড়ায় রান্না প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের পরামর্শ দেন। সেই শুরু ইসরাত জাহানের রান্না শেখা।

পাশাপাশি ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, টেইলারিংও শেখেন তিনি। ধীরে ধীরে নিজেই দেশি-বিদেশি রান্না প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। নানা রকমের কেক বানিয়ে বিক্রি করতে থাকেন মানুষের বাসায় ও দোকানে দোকানে। এসবের আয় সঞ্চয় করতে থাকেন। বউ সাজানোর শখও ছিল তাঁর। ২০০১ সালে ২ হাজার টাকায় নেওয়া শহরের ভাড়া বাসায় ছোট পরিসরে দেন বিউটি পারলার। পরে যুক্ত হয় বেকারি শপ। অনেকটা শূন্য থেকেই আজ একজন সফল উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান। প্রায় তিন কোটি টাকার পুঁজি খাটছে তাঁর ব্যবসায়। বগুড়া শহরে সুকন্যা বিউটি অ্যান্ড স্পা, সুকন্যা ফ্যাশন এবং সুকন্যা জেন্টস পারলার (ব্লুজ সেলুন অ্যান্ড স্পা) নামে প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন তিনি। রয়েছে ফ্যাশন হাউসও। তাঁর প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন ১০০ কর্মী। সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্রে আছেন ৬০ জন।

শুধু নিজের প্রতিষ্ঠান, নিজের ব্যবসাই দাঁড় করাননি, বরং অন্য নারীদের দক্ষ করার উদ্যোগও নিয়েছেন। বগুড়া শহরে চালু করছেন সৌন্দর্যচর্চা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার শহীদ আবদুল জোব্বার সড়কে সুকন্যা বিউটি অ্যান্ড স্পার পঞ্চম তলায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত রূপচর্চা প্রশিক্ষণ স্কুল ‘সুকন্যা স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং সেন্টার’–এর কার্যক্রম চলছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ইসরাত জাহান বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তিনি বলেন, শুধু বগুড়ায় নয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রূপচর্চার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির প্রথম স্কুল এটি।

২০০৫ সালে প্রাণ-প্রথম আলো জাতীয় আচার প্রতিযোগিতায় (মিষ্টি বিভাগ) দ্বিতীয় এবং রূপচাঁদা রান্না প্রতিযোগিতা ২০১৬–এর আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রথম রানারআপ হয়েছেন ইসরাত জাহান। মেকআপ, ত্বকের যত্ন, অ্যারোমা থেরাপি, হেয়ার কাটিংসহ নানা বিষয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।

‘১৯ বছর ধরে বিউটি পারলারের ব্যবসার পাশাপাশি নারীদের রূপচর্চাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী নিজেই বিউটি পারলার খুলেছেন এবং সফল হয়েছেন’ বললেন ইসরাত জাহান। এই উদ্যোক্তা জানালেন, নারীরা দিন দিন আরও বেশি সচেতন হচ্ছেন। আগামী দিনে বিউটিশিয়ান পেশা হবে আরও প্রতিযোগিতার, চ্যালেঞ্জের। পারলার ব্যবসাকে শিল্পে রূপ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাই বিউটি কেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ইসরাত জাহানের স্কুলে প্রথমে লেভেল-১ ও ২ নামে স্বল্পমেয়াদি কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি কোর্স চালু হবে। নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ভবিষ্যতে ব্লক, বাটিক, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংসহ নানা কোর্স চালু করা হবে।

বগুড়া লেডিস ক্লাব ও ইনার হুইল ক্লাবের সদস্য হয়ে সামাজিক কার্যক্রমেও জড়িত ইসরাত জাহান। তাঁর মতে, ব্যবসা মানেই ঝুঁকি। নারীদের সাহস করে ঝুঁকিটা নিতে হবে। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।