পার্বত্য মেলার উৎসবে

পার্বত্য এলাকায় তৈরি নানারকম পণ্য ছিল মেলার আকর্ষণ
পার্বত্য এলাকায় তৈরি নানারকম পণ্য ছিল মেলার আকর্ষণ

দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, অলংকার, ঐতিহ্য, পোশাক, সংস্কৃতি, খাবার ইত্যাদির সঙ্গে শহরের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতেই হয়ে গেল পার্বত্য মেলা ২০১৯। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৫ থেকে ৮ ডিসেম্বর এই মেলা চলে। প্রায় ১০০টির মতো দোকানে ছিল দেশীয়, ঐতিহ্যবাহী, নতুন ও অভিনব পণ্যের পসরা।
মেলা উপলক্ষ করে নানান পাহাড়ি স্বাদের খাবার পরিবেশন করা হয় কলাপাতা, বাঁশের খোল ও বিভিন্ন পাতায়। কাঁকড়া, পাহাড়ি মুরগি, মাছ, মাংস, চিংড়ি, মাশরুম ইত্যাদি খাবার চেখে দেখেছেন শহুরে মানুষ। কলাপিঠা, কলাপাতায় মোড়ানো বিন্নি ধানের চাল থেকে তৈরি বিন্নি হোগা পিঠা, সান্নি পিধেবা পিঠা, বড়াপিঠা, আফ্রেমুহ পিঠা,ছেচমাহ পিঠা দিয়েছে পাহাড়ি স্বাদ। কেনার জন্য ছিল লাল, সাদা ও কালো বিন্নি চাল, মসলা, ডাল, অগ্নিস্বর ও সূর্যমুখী কলা, পাহাড়ে চাষ হওয়া তরমুজ, আখ,আনারস, ড্রাগন ফল, তেঁতুল, পাহাড়ি আলু, হলুদ বেগুন, ফরাশ শিমসহ জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা নানা ধরনের ফল ও সবজি।
পাহাড়ি জনপদের হাতে বোনা চাদর ও মাফলার ছিল চোখে পড়ার মতো। চোখধাঁধানো বহু রঙের এসব পণ্য অনায়াসেই ব্যবহার করা যাবে শীতে।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়া থেকে আসা কারিগর বিউটি বম জানালেন, বাড়ির মেয়েরা সাধারণত তাঁতের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। জনপ্রতি দিনে এক থেকে দুইটা চাদর বা বর্গী বানাতে পারেন একজন নারী। একত্রে দুটি করে চাদর বা মাফলার বানিয়ে মাঝখানে কেটে আলাদা করা হয়। থিয়ামবু, থিয়াংক্লেং ও লাইনাহ যন্ত্রে এসব বানানো হয়। তবে তাঁতের সব উপাদানকে একত্রে সচপদর বলে। সচপদর বোনার প্রক্রিয়াকে বলে বেন। বেনের বেড় কোমরের সঙ্গে আটকে থাকে বিধায় এসব পণ্যকে কোমর তাঁতে বোনা পণ্য বলে। সুতি, উলের ও রেয়ন সুতায় তাঁতের পণ্য তৈরি হয়। সুতার দাম অনুসারে পণ্যের দাম ওঠানামা করে। সুতার দাম, সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য রেয়ন সুতায় বোনা । তাই তার রেয়ন সুতায় বোনা এক একটি পোশাক ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম নির্ধারণ করা হয়।
এ ছাড়া পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, কম্বল, থামি, গামছা, লুঙ্গি, সেসব কাপড় থেকে তৈরি ব্যাগ ছিল নজরকাড়া। ছিল বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শোপিস, টি–শার্ট, পাঞ্জাবি, ছাতা, চাদর থেকে কেটে নকশা করা বিভিন্ন পোশাক, পিনন, ওড়না, বিছানার চাদর তো ছিলই। শৌখিন অন্দরসজ্জা ও বেশভূষাতে ব্যবহার হয় এসব তৈরি পণ্য। বাঙালিদের মাঝেও পাহাড়ি বস্ত্রশিল্প বেশ জনপ্রিয় বলেই জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ইচ্ছে করলেই এমন পণ্য কিনে বাসার কুশন, রানার, সোফার কভার বানিয়ে নেওয়া যায় সহজেই। আবার বাসার জানালায় পর্দা বানিয়ে ঝুলিয়ে দিলেও বৈচিত্র্যময় দেখাবে। এসব ছাড়াও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী গয়না ছিল মেলায়। ত্রিপুরার মেয়েদের তৈরি হাতে বানানো পুঁতির মালার চাহিদাও ছিল আকাশচুম্বী, সেগুলোর দাম ছিল ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। পয়সার সঙ্গে রুপার আংটা লাগিয়ে ও পুঁতি দিয়ে গেঁথে যে মালা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ ও রুপার মালা ১ হাজার ৫০০-২০ হাজার টাকায় বেচাকেনা চলেছে হরদম। এই মেলার আয়োজনে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।