বিদেশি সাইটে কেনা পণ্য আসবে সহজে

আমাজান ডটকমে কবির হোসেন (ছদ্মনাম) একটি জুতা পছন্দ করেছেন। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তিনি আমাজান থেকে জুতাটি কিনতে পারলেও দেশে আনার উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্রে এক বন্ধু থাকার কারণে কবির একটু স্বস্তি পেলেন। তাঁর ঠিকানায় আমাজন জুতা পাঠাবে। তবে সেই বন্ধুর কাছ থেকে বাংলাদেশে জুতা আনতে গিয়ে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করলে জুতার দাম হয়ে যাচ্ছে প্রায় তিন গুণ। প্রযুক্তির কল্যাণে সমাধান খুঁজে পান কবির। এয়ারপোস্টেড ডটকমের (www.airposted.com) মাধ্যমে কেনাকাটার আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করে সহজেই যেকোনো পণ্য আনা যাবে বাংলাদেশে।

একসঙ্গে এগিয়ে চলা

সময় ও খরচ বাঁচিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য দেশের গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দুই বাংলাদেশি রায়ান রহমান ও ইকবাল আনোয়ার চালু করেছেন এই ই-কর্মাস সাইট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এয়ারপোস্টেড কার্যক্রম শুরু করে। এর অংশীদার হিসেবে যুক্ত আছেন আইসিসি কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম এবং বিসিএস কেব্​লসের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ বদরুল হাসান। 

ক্রেতা-ভ্রমণকারীর মেলবন্ধন

এয়ারপোস্টেড মূলত একধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম; যা এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণকারী এবং পণ্য ক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এয়ারপোস্টেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে কেউ হয়তো এমন কোনো পণ্য কিনতে চাইছেন, যেটি বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না কিংবা অন্য দেশের তুলনায় দাম অনেক বেশি। তিনি হয়তো ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখলেন সে পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কম দামে পাওয়া যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হয়তো কেউ বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যাওয়ার পথে তিনি সেই পণ্যটি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন।

এখন তাঁরা দুজনই এয়ারপোস্টেড ডটকমে ক্রেতা কিংবা ভ্রমণকারী হিসেবে নিবন্ধন করে একে অন্যকে খুঁজে নিতে পারবেন। সেই ভ্রমণকারী বাংলাদেশে যাওয়ার পথে ক্রেতার চাহিদামাফিক পণ্য কিনে নিয়ে গেলে বিমানবন্দর থেকে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করে সে পণ্য গ্রহণ করতে পারবেন। এখানে ক্রেতার লাভ হলো তিনি পণ্যটি পাচ্ছেন, হয়তো দামেও কম পড়ছে। আর পণ্য পরিবহনকারী হিসেবে ভ্রমণকারী কিছু ফি পাবেন, যাত্রাপথে অতিরিক্ত কিছু আয় হলে মন্দ কী! ভ্রমণকারীর এই ফি উভয় পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সারা দেশের মানুষের কাছে এয়ারপোস্টেডের সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রায়ান রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য পুরো পৃথিবীকে যুক্ত করা। আপাতত যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপের কিছু দেশে এয়ারপোস্টেডের কার্যক্রম চালু আছে।’

একজন থেকে আরেকজন

পিয়ার-টু-পিয়ার অর্থাৎ এক ব্যবহারকারীর সঙ্গে আরেক ব্যবহারকারীর সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করে এয়ারপোস্টেড। তবে চাইলে বিক্রেতা ফরমাশ গ্রহণে কিংবা ভ্রমণকারী মূল উৎস থেকে পণ্য কিনতে এয়ারপোস্টেডের সাহায্য নিতে পারেন। আর ভবিষ্যতে দুই পক্ষের সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিমানবন্দরে এয়ারপোস্টেডের বুথ বসানোর পরিকল্পনার কথা বলেন রায়ান। সেখানে ভ্রমণকারী পণ্য রেখে যেতে পারবেন, ক্রেতা তাঁর সুবিধামতো সময়ে পণ্য নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

নিরাপত্তা ও মান

এয়ারপোস্টেড পণ্যের মানের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ওয়েবসাইটে যে পণ্যটি অর্ডার দেওয়া হয়, সেটিই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া বিষয় কানো আপস করে না প্রতিষ্ঠানটি। এয়ারপোস্টেডে অর্ডার করলে যেকোনো দেশে থেকে ১০ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে ক্রেতার কাছে পণ্যটি পৌঁছ দেয়। নিরাপত্তার জন্য এয়ারপোস্টেডের মাধ্যমে কোনো কিছু কিনলে ক্রেতাকে প্রথমে সে পণ্যের দাম পরিশোধ করতে হয় এয়ারপোস্টেডের কাছে। ক্রেতা সঠিক পণ্য বুঝে পেলে ভ্রমণকারীকে সে অর্থ পরিশোধ করে দেয় এয়ারপোস্টেডে।