হলুদসন্ধ্যায় নানা পদ

বিয়েবাড়ির খাবার মানে নানা রকম পদ। তবে খাবারের বৈচিত্র্য দেখা যায় গায়েহলুদের আয়োজনে। বিরিয়ানি, কাবাব থেকে পিঠা, পায়েস—নানা কিছুর স্বাদ মেলে হলুদের অনুষ্ঠানে। গায়েহলুদের খাবারের কয়েক পদের রেসিপি দিয়েছেন আফরোজা নাজনীন



বাহারি চিকেন বিরিয়ানি

উপকরণ: পোলাওয়ের চাল ২৫০ গ্রাম, তেল ২ টেবিল চামচ, মাঝারি আকারের মুরগি অর্ধেকটা (টুকরা করে কাটা), পানি ১ লিটার, পেঁয়াজ ৫টি, রসুন ১টি, লবণ পরিমাণমতো, আদাকুচি অল্প, গরমমসলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া সিকি টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া আধা টেবিল চামচ, তেজপাতা ২টি, আস্ত গরমমসলা অল্প, লেবু ১টি ও কিশমিশ ৫০ গ্রাম।

প্রণালি: মুরগির স্টকের জন্য: ১ লিটার পানিতে মুরগিগুলো, ৩টি পেঁয়াজ, ১টি রসুন, গরমমসলার গুঁড়া, লাল মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, তেজপাতা, আস্ত গরমমসলা, লেবু ১টা ও লবণ দিয়ে ৩০ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে হবে। এটাই হবে মুরগির স্টক। 

পোলাও রান্নার জন্য: পাত্রে ২ টেবিল চামচ তেল, ১ কাপ পেঁয়াজকুচি, অল্প আদাকুচি দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। এরপর চিকেন স্টক ঢেলে দিন। চাল ৮০ শতাংশ রান্না হয়ে এলে ঢাকনা দিয়ে আটকে দিতে হবে, যাতে ধোঁয়া বাইরে বের হতে না পারে। ১০ মিনিট পর কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করুন। 

ব্রেডক্রাম্বড ফিশ কাবাব

উপকরণ: মাছের ফিলে ৬ টুকরা, আদাবাটা আধা চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, চিলি সস ১ টেবিল চামচ, ব্রেডক্রাম্ব ১ কাপ, ময়দা ১ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার আধা কাপ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, চিলি ফ্লেক্স আধা চা-চামচ, ডিম ১টি, মাখন ১ টেবিল চামচ, তেল পরিমাণমতো ও লবণ স্বাদমতো। 

প্রণালি: প্রথমেই ময়দাতে কর্নফ্লাওয়ার, গোলমরিচের গুঁড়া, চিলি ফ্লেক্স দিয়ে মেখে উঠিয়ে রাখুন। এবার মাছের ফিলেতে মাস্টার্ড পেস্ট, আদাবাটা, রসুনবাটা, মরিচগুঁড়া, লবণ, লেবুর রস, চিলি সস দিয়ে ভালো করে মেখে ম্যারিনেট করে রাখুন। এবার মাখানো ময়দায় মাছগুলো গড়িয়ে, ফেটানো ডিমে মেখে তারপর ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে নিন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে ব্রেডক্রাম্বে মেখে রাখা মাছগুলো ভাজতে থাকুন। মাছ সোনালি রং হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ব্রেডক্রাম্বড ফিশ কাবাব।

ঝাল পোয়া পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, ময়দা ১ কাপ, লবণ ১ চিমটি, হলুদগুঁড়া ১ চিমটি, কুসুম গরম পানি ২ কাপ, ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচকুচি ১ টেবিল চামচ, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, তেল ৩ কাপ (ভাজার জন্য)।

প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পানি ছাড়া বাকি সব কটি উপকরণ ভালোভাবে মেশান। এবার পানি অল্প অল্প ঢেলে মেশাতে থাকুন। গোলা বেশি পাতলা হবে না, আবার বেশি ঘনও হবে না। এবার গোলাটাকে ঢেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এখন একটি গর্তওয়ালা কড়াইতে ৩ কাপ তেল গরম করতে হবে। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন। এখন একটি গোল চামচ নিয়ে গোলা গরম তেলের ওপর থেকে ছাড়ুন। গোলা ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফুলে ওপরে উঠে আসবে। পিঠার এক পাশ বাদামি হলে উল্টিয়ে দিন। দুই পাশ একই রং হলে নামিয়ে টিস্যু পেপারের ওপর রাখুন, যেন বাড়তি তেল শুষে নেয়। এবার প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

কমলার গন্ধে মুরগির কাবাব

উপকরণ: মুরগির রান ২ টুকরা, টক দই ২ টেবিল চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, কমলা বা মাল্টার রস ১ টেবিল চামচ, টমেটো কেচআপ ১ টেবিল চামচ, লাল চিনি ১ চা-চামচ, লাল মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, দারুচিনির গুঁড়া আধা চা-চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, পাপড়িকা আধা চা-চামচ, তেল পরিমাণমতো ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে মুরগির মাংসের সঙ্গে টক দই, লেবুর রস, গোলমরিচের গুঁড়া, আদাবাটা, রসুনবাটা, লবণ, শুকনা মরিচের গুঁড়া, পাপড়িকাসহ সব উপকরণ দিয়ে ম্যারিনেট করে নিন। এবার ম্যারিনেট করা মাংসগুলো গরম তেলে গ্রিল প্যানে শ্যালো ফ্রাই করে নিন। ভাজা হয়ে এলে নান রুটিসহ গরম গরম পরিবেশন করুন।

গোলাপ পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, লবণ ও পানি পরিমাণমতো, গুড় বা চিনি ও তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: পানি ও লবণ দিয়ে ভালো করে ফুটাতে হবে। পানি ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে সেদ্ধ করে ভালো করে মথে নিতে হবে। তারপর গোলাপ ফুল ও পাতার মতো পরিমাণ আটা নিয়ে গোলাপ ফুল ও পাতা বানিয়ে গরম ডুবো তেলে ভাজতে হবে। আরেকটি পাত্রে চিনি ও গুড় মেশানো শিরা করে ভাজা পিঠা গড়িয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন।

চিতই পিঠা

উপকরণ: পোলাওয়ের চাল ২ কাপ, লবণ আধা চা-চামচ, পানি এক কাপ ও সেদ্ধ চাল ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি: চাল ভালো করে ধুয়ে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। প্রথমে আধা কাপ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে লবণ মিশিয়ে আরও আধা কাপ অথবা পরিমাণমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে মসৃণ ব্যাটার তৈরি করুন।

ননস্টিক কড়াই বা প্যান ভালো করে গরম করুন। সামান্য তেল ব্রাশ করা যেতে পারে। এবার ডালের চামচের ২ চামচ ব্যাটার দিয়ে ঢেকে দিন। ৩ মিনিট পর ঢাকনা খুলে পিঠা উঠিয়ে আরেকটি পাত্রে রাখুন। খুলে পিঠা উঠিয়ে একটি পাত্রে রাখুন। এভাবে প্রতিটি পিঠা তৈরি করুন। তারপর ধনেপাতা ও সরিষাভর্তাসহ পরিবেশন করুন।

পাটিসাপটা পিঠা

উপকরণ: পিঠার জন্য: চালের গুঁড়া ১ কাপ, ময়দা ১ কাপ, ডিম ১টি, পানি পরিমাণমতো।

পুরের জন্য: দুধ ১ লিটার, চিনি দেড় কাপ, পোলাওয়ের চাল আধা কাপ, তেজপাতা ২টি, এলাচি ৪টি ও দারুচিনি ৪ টুকরা।

প্রণালি: পুর তৈরি করতে পোলাওয়ের চাল পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ডারে বা পাটায় সামান্য গুড়া করে নিন। একেবারে মিহি করা যাবে না। এবার কড়াইতে সামান্য ঘি অথবা তেল দিয়ে চালের গুঁড়াগুলো হালকা করে ভেজে তাতে দুধ, চিনি—সব মসলা দিয়ে নাড়তে থাকুন। দুধ শুকিয়ে ঘন হলে হালুয়ার মতো জমে গেলে নামিয়ে নিন। 

এবার আলাদা করে গোলা তৈরি চালের গুঁড়া, ময়দা, ডিম, সামান্য লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে পানি দিয়ে পাতলা করে গুলে নিন। চিতই পিঠার গোলার চেয়েও পাতলা হবে। 

এবার চুলাতে তাওয়া দিন। জ্বাল ঢিমে আঁচে রাখুন। তাওয়া গরম হলে একটা ছোট কাপড়ে করে তেল মাখিয়ে নিন। এবার ডাল তোলা চামচে করে এক চামচ গোলা তাওয়ায় দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গোলাটুকু রুটির মতো গোল করুন। শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। রুটির একপাশে লম্বা করে পুর দিন। এবার পিঠার মতো রোল করে নিন। এভাবে তৈরি করুন পাটিসাপটা।

ডাবের পায়েস

উপকরণ: ২টি ডাবের কচি নরম শাঁস, দুধ আধা লিটার, চিনি বা গুড় স্বাদমতো ও কাউনের চালের গুঁড়া সামান্য।

প্রণালি: দুধ ঘন করুন। ডাবের শাঁস দিন। ফোটান কম আঁচে। ঘন হয়ে এলে চিনি ও চালগুঁড়া দিন। নেড়ে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। কিশমিশ ও বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ঝাল ঝাল গরুর মাংস

উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, টক দই আধা কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, এলাচি ৩টি, দারুচিনি ৪-৫টি, তেজপাতা ৩টি, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজের কুচি আধা কাপ, তেল আধা কাপ, লবণ পরিমাণমতো, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ ও কাঁচা মরিচ ৪-৫টি।

প্রণালি: গরুর মাংস কেটে ধুয়ে টক দই দিয়ে এরপর অল্প করে আদাবাটা, রসুনবাটা ও লবণ মাখিয়ে আরও ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। পাত্রে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের কুচি ভেজে বাদামি করতে হবে। এবার এর মধ্যে আবার আদাবাটা, রসুনবাটা, মরিচের গুঁড়া, ধনেগুঁড়া, হলুদের গুঁড়া, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ও লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ভালোভাবে মসলা কষিয়ে নিতে হবে। এবার কষানো মসলায় মাংস ঢেলে দিন। সামান্য পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে দিন। পানি কমে এলে তাতে জিরার গুঁড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আবার ঢেকে দিন। ভুনা ভুনা হলে নামিয়ে পরোটার বা পোলাও দিয়ে পরিবেশন করুন।