পিঠা-পুলির সময়ে

>আগুনের তাপে হাত সেঁকা, চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে রাখার সময় এখন। বছরের এই সময়টাতেই বানানো হয় নানা রকম পিঠা। নতুন চাল গুঁড়া করে দেওয়া হয় পিঠার রেসিপিতে। সঙ্গে যোগ করা হয় গুড়, দুধ, চিনি প্রভৃতি উপকরণ। এ দেশের পিঠার রেসিপির শুরু আছে শেষ নেই। পুরোনো আমলের তেমনই কিছু রেসিপি দিয়েছেন ফারাহ্ সুবর্ণা।
ফুলঝুরি পিঠা
ফুলঝুরি পিঠা
ফুলঝুরি পিঠা
ফুলঝুরি পিঠা

ফুলঝুরি পিঠা

উপকরণ:
ময়দা ১ কাপ, ডিম ২টা, চিনি আধা কাপ, পানি ১ কাপ, তেল ভাজার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ, ফুলঝুরি পিঠার ছাঁচ।

প্রণালি: তেল আর পিঠার ছাঁচ বাদে অন্য উপকরণগুলো মিশিয়ে মাঝারি ঘনত্বের চেয়ে একটু পাতলা গোলা তৈরি করে নিন। আধা ঘণ্টার জন্য গোলাটা রেখে দিতে হবে। এবার একটা কড়াইয়ে অনেকখানি তেল নিয়ে খুব ভালো করে গরম করে নিন। তেল ভালোভাবে গরম হয়ে গেলে পিঠার ছাঁচ সেই তেলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে গরম করে নিতে হবে। তারপর সেই গরম ছাঁচ পিঠার গোলায় অর্ধেকটা (ছাঁচের ডিজাইনের অর্ধেকটা) ডুবিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গরম তেলে ডুবিয়ে ঝাঁকি দিতে থাকতে হবে, যতক্ষণ না ছাঁচ থেকে পিঠা খুলে আসে। তারপর পিঠা সোনালি করে ভেজে কিচেন টিস্যুতে তুলে নিন। তেল ও ছাঁচ ঠিকমতো গরম না হলে পিঠা ছাঁচের সঙ্গে আটকে যাবে। এই পিঠা মুখবন্ধ কনটেইনার বা বয়ামে কয়েক দিন রেখে খাওয়া যায়।

দুধ চিতই
দুধ চিতই

দুধ চিতই

উপকরণ:
দুধ ২ লিটার, কোরানো নারকেল আধা কাপ, খেজুরের গুড় আধা কাপ বা স্বাদমতো, তেজপাতা ২টি, এলাচ ৩টি।

প্রণালি: প্যানে দুধের সঙ্গে তেজপাতা আর এলাচ দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। গুড় পাতলা করে কেটে নিয়ে অল্প পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে গলিয়ে নিন। দুধ আর গুড় ঠান্ডা করে একসঙ্গে মিশিয়ে আবার চুলায় জ্বালে বসান। এ সময় কোরানো নারকেল দিয়ে দিতে হবে। পিঠা বানানো হয়ে গেলে, তা গুড় মেশানো দুধে দিয়ে একবার জ্বাল দিয়ে চুলা বন্ধ করে দিন। এভাবে ৭–৮ ঘণ্টা রেখে দিলে, দুধ ভেতরে ঢুকে পিঠাকে নরম করে তুলবে।

সেমাই পিঠা
সেমাই পিঠা

সেমাই পিঠা

উপকরণ:
চালের গুঁড়া ১ কাপ, তরল দুধ দেড় লিটার, খেজুরের গুড় আধা কাপ (স্বাদমতো দিলে ভালো), কোরানো নারকেল আধা কাপ, লবণ সামান্য, পানি আধা কাপ, চা–চামচের এলাচগুঁড়া এক-তৃতীয়াংশ, দারুচিনি ২ টুকরা।

প্রণালি: একটি প্যানে পানি গরম করে তাতে লবণ ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে দিয়ে দু-এক মিনিট ঢেকে রেখে দিন। তারপর ভালো করে মিশিয়ে মণ্ড বা কাই তৈরি করে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। হালকা গরম থাকা অবস্থাতেই ভালো করে মেখে রুটির খামিরের মতো মসৃণ মণ্ড তৈরি করে নিতে হবে। অল্প অল্প লেচি কেটে নিন। রুটি বানানোর পিঁড়িতে চালের গুঁড়া ছড়িয়ে নিয়ে তাতে লেচি হাত দিয়ে ডলে ডলে লম্বা দড়ির মতো আকার দিন। এবার এটি থেকে সেমাই পিঠার আকারে হাতে গড়ে নিতে হবে। অপর একটা পাত্রে দুধ আর দারুচিনি জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। তারপর তাতে ধীরে ধীরে সেমাই পিঠা ছেড়ে দিন। মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে মিনিট দশেকের মতো। অপর একটি পাত্রে কুঁচি বা ছোট টুকরা করে নেওয়া খেজুরের গুড় পরিমাণমতো পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে একদম গলিয়ে নিন। এরপর দুধে সেদ্ধ সেমাই পিঠা আর গলানো গুড় দুটোই হালকা ঠান্ডা করে মিশিয়ে আবারও চুলায় জ্বালে বসিয়ে দিন। কোরানো নারকেল আর এলাচগুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে পছন্দসই ঘনত্বে এলে দারুচিনি দুটো তুলে ফেলুন। সেমাই পিঠা নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা কিংবা গরম অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে।

চিতই পিঠা
চিতই পিঠা

চিতই পিঠা 

উপকরণ
: আতপ চালের গুঁড়া ১ কাপ, সেদ্ধ চালের গুঁড়া ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, কুসুম গরম পানি পরিমাণমতো, তেল অল্প (ছাঁচ মোছার জন্য) ও পিঠা বানানোর ছাঁচ।

প্রণালি: দুই রকমের চালের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার অল্প অল্প করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মাঝারি ঘনত্বের গোলা তৈরি করে নিন। ২–৩ ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিতে হবে। পিঠা বানানোর লোহার ছাঁচ অথবা মাটির ছাঁচ গরম করে নিন। একটা কাপড়ে তেল নিয়ে তা দিয়ে ছাঁচ ভালো করে মুছে নিয়ে তাতে চামচ বা কাপে করে পিঠার গোলা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনা ছাঁচের মাপমতো হতে হবে, যাতে ভাপ বের হয়ে না যায়। চুলার আঁচ মাঝারি থাকবে। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পিঠা হয়ে গেলে ছুরি বা পাতলা খুন্তির সাহায্যে হালকা খোঁচা দিয়ে উঠিয়ে নিন। দু–তিনবার পিঠা বানানোর পর আবারও কাপড়ে তেল নিয়ে পিঠার ছাঁচ মুছে নিন। এবার গরম গরম পিঠা মাংস বা ভর্তার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ভাপা পুলি পিঠা
ভাপা পুলি পিঠা

ভাপা পুলি পিঠা

উপকরণ
: চালের গুঁড়া ২ কাপ, কোরানো নারকেল ১ কাপ, খেজুরের গুড় আধা কাপ, তেজপাতা ১টি, দারুচিনি ১ টুকরা, এলাচগুঁড়া ১ চা-চামচের ৫ ভাগের ১ অংশ, লবণ সামান্য, পানি ২ কাপ।

প্রণালি: একটা পাত্রে কোরানো নারকেল, খেজুরের গুড়, তেজপাতা, দারুচিনি আর এলাচগুঁড়া নিয়ে রান্না করে শুকনা পুর তৈরি করে নিতে হবে। অপর একটা পাত্রে পানি আর লবণ দিয়ে ফুটিয়ে তাতে চালের গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে ২–৩ মিনিটের জন্য ঢেকে রেখে তারপর চুলা থেকে নামিয়ে হালকা গরম থাকতে থাকতেই ভালো করে মেখে মসৃণ খামির তৈরি করে নিন। এরপর তা থেকে লেচি কেটে ছোট রুটির আকারে বেলে নিন। মাঝে খানিকটা পুর দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে ভাঁজ করে খোলা পাশটির এক কোণ পেঁচিয়ে নকশা করে বোটে নিতে হবে। ইদানীং দোকানে ছাঁচ কিনতে পাওয়া যায়। সেই ছাঁচের মাঝে রুটি দিয়ে তার মাঝে পুর দিয়ে হালকা চাপ দিলেও পিঠা তৈরি হয়ে যায়। এই পিঠার রুটি বেশি মোটা হলে খেতে ভালো লাগে না। এবার পিঠা ভাপ দেওয়ার পালা। একটা স্টিমারে পানি দিন। ফুটে উঠলে পিঠাগুলো পাশাপাশি সাজিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৮-১০ মিনিট ভাপ দিলেই পিঠা তৈরি। বাসায় স্টিমার না থাকলে ছড়ানো মুখের হাঁড়িতে পানি নিন। হাঁড়ির মুখে পাতলা কাপড় বেঁধে চুলায় বসিয়ে দিন। পানি ফুটে উঠলে তার ওপরে পিঠা সাজিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ভাপ দিয়ে নিলেই হবে। একইভাবে কাপড়ের বদলে স্টিলের ঝাঁজরি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ছিট রুটি
ছিট রুটি

ছিট রুটি 

উপকরণ
: চালের গুঁড়া ২ কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ (সমান করে নয়, উঁচু করে), লবণ স্বাদমতো, পানি প্রয়োজনমতো, ননস্টিক প্যান ও ভেজা কাপড়।

প্রণালি: চালের গুঁড়ার সঙ্গে ময়দা আর লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প পানি দিয়ে ভালো করে মেখে মসৃণ গোলা তৈরি করে নিতে হবে। মিশ্রণটি খুব ঘন বা পাতলা হবে না। ঘণ্টাখানেক রেখে দিতে হবে গোলাটা। তারপর পিঠা বানানোর আগে আবারও ভালো করে গোলা মেখে নিতে হবে। এবার ননস্টিক প্যান গরম করে চুলার আঁচ কমিয়ে নিয়ে পিঠার মিশ্রণে সব কটি আঙুল ডুবিয়ে প্যানে ছিটিয়ে ছিটিয়ে রুটির আকারে তৈরি করে নিন। ৪০–৪৫ সেকেন্ড পরে ছিট রুটি হয়ে গেলে নিজে থেকেই উঠে আসবে। খুব সাবধানে ছিট রুটি তিন কোনা করে বা অমলেটের মতো ভাঁজ করে তুলে নিয়ে ভুনা মাংসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।